দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : বিশ্বে ইন্দোনেশিয়া একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও, সেখানে অন্য ধর্মের মানুষদেরও সরকারিভাবে যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়া হয়।
তবে, সম্প্রতি দেশটির একটি স্কুলে এক ১৬ বছরের খ্রিস্টান কিশোরীকে তার স্কুল কর্তৃপক্ষ জোর করে হিজাব পরতে বাধ্য করার চেষ্টা করার জেরে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ওই কিশোরী যে স্কুলে লেখাপড়া করে সেখানে ছাত্রীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক।
এ ঘটনায় বিতর্কের জেরে নড়েচড়ে বসে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। গত বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি নির্দেশনায় স্বাক্ষর করে সরকার।
নির্দেশনায় সরকার ইন্দোনেশিয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ স্কুল থেকে সব ধরনের কট্টর নিয়ম তুলে নিতে ৩০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে। যেসব স্কুল সরকারের এই আদেশ মানবে না তাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী নাদিম মাকারিম বলেন, ‘‘কেউ তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী ধর্মীয় পোশাক পরতেই পারেন। এটা তার ব্যক্তিগত অধিকার। তবে কোনোভাবেই স্কুল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে না।”
জানা গেছে, খ্রিস্টান পরিবারের ওই মেয়েটি পাডাংয়ে একটি কারিগরি স্কুলে পড়তো। জানুয়ারিতে ক্লাস শুরুর পর থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বার বার স্কুলে-ক্লাসে হিজাব পরে আসতে বলতো।
ওই ছাত্রী হিজাব পরতে অস্বীকৃতি জানালে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠায়। তার বাবা-মা স্কুলে যায় এবং গোপন ক্যামেরায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করে।
ওই ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায় এবং দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
ওই ভিডিওতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলতে শোনা যায়, "স্কুলের একটি নিয়ম আছে। সেই নিয়মানুযায়ী ছাত্রীরা যে ধর্মেরই হোক স্কুলে তাদের অবশ্যই হিজাব পরতে হবে।"
মেয়েটির বাবা বিবিসি ইন্দোনেশিয়াকে বলেন, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই আমার মেয়েকে হিজাব না পরার জন্য ডেকে পাঠানো হতো এবং উত্তরে সবসময়ই বলতো সে মুসলিম নয়।”
‘‘যদি আমি তাকে হিজাব পরতে জোর করতাম, তবে তো সেটা তার পরিচয় নিয়েই মিথ্যাচার হত। কোথায় আমার ধর্ম পালনের অধিকার? তার উপর এটা একটি সরকারি স্কুল।”
এ ঘটনায় ইন্দোনেশিয়া জুড়ে তোলপাড় শুরু হলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওই স্কুলের অধ্যক্ষ ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বলেন, "শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পোশাক পরতে দেওয়া উচিত।"
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দেশটির ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানান, "পৃথিবীর কোনো ধর্মই সহিংসতা সমর্থন করে না। শুধু তাই নয় যারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী তাদের প্রতি কোনো রকম অন্যায় আচরণও গ্রহণযোগ্য নয়।"
দেশকণ্ঠ/অআ