দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) রাতের আঁধারে ৮০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) মাঝরাতে উচ্ছেদের নিয়ম না মেনে ক্লাব কার্যালয় ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে নগর ভবন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা না দিলেও উচ্ছেদকে স্বাগত জানিয়েছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আর ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি ভাঙতে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্লাবটির সদস্যরা। এতে ক্রীড়াঙ্গন নেতিবাচক বার্তা পাবে বলে মত তাদের। দক্ষিণাঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গনে একসময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উত্তর পাশে জেলা পরিষদের ৩০ শতাংশ জমি বরাদ্দের অনুকূলে ক্লাব কার্যালয় ও কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছিল। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এই অঞ্চলের ফুটবল, ক্রিকেটসহ জাতীয় ও স্থানীয় খেলায় বিশেষ অবদান রেখেছে। এই ক্লাব থেকে আলোচিত অনেক খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে।
ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহসান কবির হাসান বলেন, প্রায় তিন শতাধিক নিবন্ধিত সদস্যের ভোটে পরিচালনা কমিটি গঠন হওয়ার বিধান থাকলেও নানা জটিলতায় ২০১৪ সালের পর নতুন কমিটি গঠন হয়নি। তবে এর আগে এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন বিডি হাবিবুল্লাহ, লকিতুল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, গোলাম মাওলা, বর্তমান বিসিবির পরিচালক আলমগীর হোসেন আলোর মতো আলোচিত ব্যক্তি। তিনি আরও বলেন, ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ক্লাবটি ঢাকার মোহামেডান ক্লাব প্রতিষ্ঠার আগেই প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এটি এই অঞ্চলের মানুষের সম্পদ। কিন্তু সেটি রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দরকার ছিল না। সিটি করপোরেশন চাইলে ক্লাবটি সুন্দর করে পরিচালনা করতে পারত কিংবা আমরা যারা ক্লাবের সদস্য তাদের নিয়ে বসে গঠনমূলক যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে আমরা দ্বিমত করতাম না। কিন্তু এভাবে একটি ইতিহাসকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এতে এই অঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গন কোনো ভালো বার্তা পাবে না।
ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম গুলজার বলেন, উচ্ছেদের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্লাবটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। এখানে ক্লাবের মূল্যবান কাগজপত্র, আসবাবপত্র ছিল। সেগুলোও আমরা রক্ষা করতে পারিনি। এছাড়া আমাদের কোনো চিঠিও দেয়নি। সকালে উঠে শুনি ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্তও তারা ক্লাবটি দেখে গেছেন। সকালে এসে দোকান খুলতে গিয়ে দেখেন ক্লাবের চিহ্নও নেই। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন দাসের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মেয়র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা কল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে কল রিসিভ করে ৩৭ সেকেন্ড কথা বলেন। নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি তাকে ভালোভাবে জেনে জানাতে হবে। এজন্য ১০ মিনিট পরে কল দিতে বলেন। কিন্তু ১০ মিনিট পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তার জবাব দেননি। তবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ক্লাবটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এটি খুব ভালো সংবাদ। ওখানে মদ, গাঁজা সেবন চলতো। সুতরাং এই উচ্ছেদে আমি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সাধুবাদ জানাই।
দেশকন্ঠ/অআ