স্পোর্টস রিপোর্টার : সিলেট স্টাইকার্সের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যদিয়ে শেষ হওয়া ঢাকা পর্ব শেষে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটের চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হচ্ছে ১৩ ডিসেম্বর। প্রথম ম্যাচে দুপুর দুইটায় স্বাগতিক দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আতিথ্য দেবে ফরচুন বরিশালকে। দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধা সাতটায় মুখোমুখি হবে খুলনা টাইগার্স ও রংপুর রাইডার্স। ২০ জানুয়ারি বিভাগীয় শহর থেকে খেলা চলে যাবে সিলেটে। এদিকে প্রথম পর্ব শেষে মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট চার ম্যাচে সবগুলো জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে। দুইটি করে ম্যাচ খেলে একটি করে জিতে পরের স্থানগুলোতে রয়েছেন রংপুর, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম। পরের দুটি স্থানে কোন ম্যাচ জেতা দুই দল খুলনা ও কুমিল্লা। পয়েন্ট তালিকার হিসেবে অনেকটাই এগিয়ে থেকেই শুরু করবে সিলেট স্টাইকার্স। তবে অগোছালো আয়োজনের পাশাপাশি অসহিষ্ণু আচরণ করেছেন ক্রিকেটাররা। তাতে অবশ্য মাঠের খেলাটা মন্দ হয়নি। আতশি কাচের নিচে ঢাকায় বিপিএলের প্রথম পর্ব নিয়েই তাই বেশি করে আলোচনা হচ্ছে। আগে বিপিএলের দলগুলো চট্টগ্রামে এলে ভক্তরা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। প্রিয় দলের তারকা ক্রিকেটারদের একনজর দেখার জন্য সে কী প্রাণান্তকর চেষ্টা করতেন তারা। সেই ক্রেজ এখন আর নেই। আসর শুরুর দু’দিন আগেও এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে দেখা গেল সেই চিত্র। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অনুশীলনে সমর্থকদের উন্মাদনার ছিটেফোঁটাও ছিল না।
অথচ তারা দ্বিতীয় পর্বের স্বাগতিক দল। এটিকে অনেকেই তাই ‘পানসে’ বিপিএলের এটি একটি খন্ডচিত্র হিসেবে অবিহিত করছেন। এবারের বিপিএলে তারকার সংকট, অব্যবস্থাপনা তুঙ্গে। সব মিলিয়ে আগের বিপিএলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সেও বড় কোনো তারকা নেই। গতবারের মতো তারুণ্যনির্ভর দল তাদের। হয়তো একারণে দর্শক-আগ্রহে ভাটার টান। তবে দলের অনেকেই মনে করছেন, ঢাকায় প্রথম পর্বের দুই ম্যাচের দ্বিতীয়টিতে জয় পাওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে। পাকিস্তানি উসমান খান শতক হাঁকিয়ে নজর কেড়েছেন। দলে আরও প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছেন, যারা চট্টগ্রাম পর্বে চমক দেখাতে পারেন। ঘরের মাঠে দর্শক সমর্থনে চার ম্যাচের সব কটি জিতে পয়েন্ট টেবিলের উপরের দিকে থাকতে চায় চ্যালেঞ্জার্স। দুই ম্যাচে এক জয়ে তাদের অবস্থান এখন পঞ্চমে। আফিফ হোসেন ধ্রুব, উসমান খানের দল অনুশীলনের ফাঁকে পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী রাহি বলেন, ‘শুরুর চেয়ে দলের অবস্থা ভালো। টিম স্পিরিট আছে। নিজেদের অবস্থান বুঝতে পারছি। আমার মনে হয়, আমরা ভালো জায়গায় আছি। দলের সবাই আত্মবিশ্বাসী। চট্টগ্রাম পর্বে ঘুরে দাঁড়াব’।
রাজধানী ঢাকায় বিপিএলের প্রথম পর্ব শেষ হলো। অগোছালো আয়োজন, আস্থাহীন আম্পায়ারিং, খেলোয়াড়দের অসহিষ্ণু আচরণ, বিশৃঙ্খলা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে। তবে মিরপুরে মাঠের লড়াইটাও মন্দ হয়নি। প্রথম পর্ব শেষে সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘এত সমালোচনার পরও খেলাটা ঠিক আছে।’ সাকিব আল হাসানেরও একই মত। মিরপুরে চারটি ম্যাচ খেলেছে সিলেট। চারটিতেই জয়। বাকি ছয় দল খেলেছে দুটি করে ম্যাচ। কেউই দুটিতে জয় পায়নি। দু’শ ছাড়ানো ইনিংস একটি। ঢাকা ডমিনেটরসের বিপক্ষে সিলেট ২০১ রান করে। তারা আরেক ম্যাচে ১৯৫ তাড়া করে জিতেছে। মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচ ব্যাটারদের জন্য পয়া। তরুণ ক্রিকেটাররা আলো ছড়িয়েছেন। তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান ও জাকের আলী নিজেদের মেলে ধরছেন।
শুরুতে নানা বিষয় নিয়ে সমালোচনা করলেও চট্টগ্রাম পর্ব শুরুর আগে এক অনুষ্ঠানে সাকিব বলেন, ‘মিরপুরের কিউরেটরকে কৃতিত্ব দিতেই হয়। এবারের উইকেট অনেক ভালো। মিরপুরে সাধারণত এত ভালো উইকেট পাই না। এ কারণেই রান হচ্ছে। খেলাটাও ভালো হচ্ছে। প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ।’ সাকিব বলেন, ‘অনেকেই ভালো খেলছে। এরমধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয় ও জাকির হাসান, জাকের আলীরা ভালো ব্যাটিং করছে। স্থানীয় ব্যাটাররা ভালো করছে, এটা আমাদের জন্য ভালো লক্ষণ।’ তিনি বলেন, ‘উইকেট ভালো, তাই ব্যাটাররা রান পাচ্ছে। আগে তারা ৩০-৪০ করত, এখন ৭০ করছে। এরপর শিখে যাবে, কিভাবে একশ করতে হয়। তবে দেশীয় বোলাররা ভালো বল করছে না। ভালো উইকেটে কীভাবে বোলিং করতে হয়, আমাদের শিখতে হবে।’ সিলেট টানা চতুর্থ জয় পাওয়ার পর মাশরাফি বলেন, ‘উইকেট ভালো হলে ব্যাটারদের জন্য খেলা সহজ হয়। এরকম ভালো উইকেট পাওয়া যায় না মিরপুরে। গত তিনদিন উইকেট ছিল দারুণ।
এদিকে ঢাকা পর্ব শেষে রানে শীর্ষে তৌহিদ হৃদয়, উইকেটে মাশরাফি ও আল আমিন হোসেন। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটাররা রান করতে হিমশিম খায়, সেখানে সিলেটের ব্যাটারা ব্যতিক্রম। রানের ফুলঝুরি ছুটিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্জনেও চলতি বিপিএলে শীর্ষে সিলেটের ব্যাটাররা। আর বল হাতে কাপ্তান মাশরাফি আছেন বিপিএলে উইকেট নেওয়ায় শীর্ষে। ফলে সিলেটের দলও জিতছে প্রতিটি ম্যাচে। টুর্নামেন্টের আগে যেখানে সিলেটকে মাঝারি মানের ধরা হচ্ছিল সেখানে সেই সিলেট অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এ সবই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক মাশরাফির ছোঁয়ায়। এদিকে রান তোলা ও উইকেট শিকারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করছে সিলেট স্ট্রাইকার্সের খেলোয়াড়রা। রান সংগ্রহে সবার ওপরে সিলেটের টপ অর্ডার তৌহিদ হৃদয় (৪ ম্যাচে তিন ইনিংসে ১৯৫)। দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহকারীও সিলেটের নাজমুল হোসেন শান্ত (১৬৭)। অন্যদিকে ঢাকা পর্বে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হচ্ছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার বয়স বর্তমানে ৩৯। অবসর নিয়েছেন জাতীয় দল থেকেও তবে দমে যাননি তিনি। ৮ মাস প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থেকেও বিপিএলে এসে ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট দখল করেছেন মাশরাফি। তার সমান উইকেট ঢাকা ডোমিনেটর্স পেসার আল আমিন হোসেনের। ৪ ম্যাচে ১৫ ওভার বোলিং করে ১১২ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট দখল করেছেন মাশরাফি।
চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হওয়ার সময়ে তারকা হারাচ্ছে বিপিএল, তাই দর্শক ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই এবারের বিপিএল নিয়ে আছে নানান বিতর্ক। সেই সাথে খুব বেশি নেই বিদেশি তারকা ক্রিকেটার। যাও দু’চারজন ছিলেন তারাও মাঝ পথে ছেড়েছেন নমব আসর। তাতে তারকাশূন্য হয়ে পড়ছে দেশের ক্রিকেটের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগটি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি (আইএলটি-২০) খেলতে ঢাকা ছেড়েছেন অন্তত ৫ বিদেশি ক্রিকেটার। যাদের প্রত্যেকের নামের পাশেই আছে তারকার ট্যাগ। আইপিএল টি-টোয়েন্টি লিগ খেলতে যে ৫ বিদেশি ক্রিকেটার বাংলাদেশ ছেড়েছেন তারা বিপিএলে খেলেছেন দুই দলের হয়ে। এর মধ্যে তিনজনই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের, ডেভিড মালান, মোহাম্মদ নবি ও ফজল হক ফারুকি। আর বাকি দুইজন রংপুর রাইডার্সের, সিকান্দার রাজা ও বেনি হাওয়েল। কুমিল্লার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের পরিবর্তে পাকিস্তানি পেসার হাসান আলি ও ক্যারিবীয় ব্যাটার চ্যাডউইক ওয়াল্টন দলে যোগ দেবেন।
দেশকণ্ঠ/আসো