দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন উৎসব সাকরাইনকে ঘিরে কোটি টাকার বাণিজ্য চলছে শাঁখারী বাজারে। এ উৎসবকে সামনে রেখে গত এক সপ্তাহ আগ থেকেই কেনা-বেচায় চলছে ধুম। ব্যবসায়ীদের দাবি সাকরাইনকে উপলক্ষ করে এবার শাঁখারী বাজারে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী কেনা-বেচা হবে। এসব পণ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রঙের ঘুড়ি, সুতো, নাটাইসহ বিভিন্ন রকমের আতশবাজি, পটকা সামগ্রী। সাথে চলছে রঙবেরঙ ফানুসের কেনা-বেচাও। সরেজমিনে শাঁখারী বাজারে ঘুরে দেখা যায় চশমাদার, কাউটাদার, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি, চক্ষুদার, ঈগল, সাদা ঘুড়ি, চারবোয়া, দুই বোয়া, টেক্কা,লাভ ঘুড়ি, ৩ টেক্কা, মালাদার, দাবা ঘুড়ি, বাদুর, চিল, অ্যাংগ্রি বার্ডসহ বিভিন্ন নামে ঘুড়ি বিক্রিতে ধুম লেগেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। শাঁখারী বাজারে সাধারণ ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বিদেশি কাগজ ও নানান নকশা করা ঘুড়ি কেনা-বেচা হয় ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। কিছু কিছু ঘুড়ির দাম হাজার টাকার ওপরে।
ঘুড়ির সাথে এখানে বিভিন্ন রকমের নাটাই ও সুতা কেনা-বেচাও পড়েছে ধুম। নাটাইয়ের মধ্যে বাটিওয়ালা নাটাই, মুখবান্ধা নাটাই, লোহার নাটাই, কাঠের নাটাই, চাবাডী নাটাই বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। সুতোর মধ্যে ড্রাগন সুতা, ভুত সুতা, বিলাই সুতো, ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সুতা বিক্রি হয়ে থাকে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন আকৃতির আতশবাজি, পটকা ও ফানুস বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দরে। সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত আতশবাজি পাওয়া যায় এখানে। শাঁখারী বাজারে অন্যতম ঘুড়ির দোকান স্বপ্নচূড়া ডিপার্টমেন্টাল স্টলের স্বত্বাধিকারী সুদেব সুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেড় লাখ পিচের অধিক ঘুড়ি বিক্রি করেছি। আশা করি আগামী দুদিনে আরও এক লাখের অধিক ঘুড়ি বিক্রি করতে পারবো। আমাদের দেশে যত রকমের ঘুড়ির প্রচলন আছে সবগুলোই আমরা বিক্রি করে থাকি। আশা করি এ বছর আমি ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার অধিক কেনা-বেচা করতে পারবো।
এদিকে শুভশ্রী ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ম্যানেজার সুমন নাগ বলেন, বছরে আমাদের দুটি উৎসবেই আতশবাজি কেনা-বেচা হয়। তার মধ্যে একটি নিউ ইয়ারে আরেকটি সাকরাইন উৎসবে। আমাদের এখানে সব ধরনের আতশবাজি, পটকা পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত বাজি বিক্রি করি থাকি আমরা। এ সাকরাইন উৎসবে প্রায় বিশ লাখ টাকার অধিক কেনা-বেচা হবে। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থেকে ঘুড়ি ও আতশবাজি কিনতে আসা সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন আমরা প্রতি বছরই সাকরাইনকে খুব আনন্দের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকি। আজ ইতোমধ্যে ১৫০টি ঘুড়ি কিনেছি এবং সাথে প্রায় আট হাজার টাকার মত বাজি কিনেছি আরও কিনবো। উল্লেখ্য, পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাকরাইন। মহাভারতে যাকে মকরক্রান্তি বলা হয়। এদিনে দিনভর ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ। এখন পুরান ঢাকা ছাড়াও ঢাকার অন্যান্য এলাকায় এ উৎসব পালন করা হয়। আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সাকরাইন পালন করলেও এখন বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে সব ধর্মীয় মানুষের কাছে এটি সমাদৃত হচ্ছে।
দেশকন্ঠ/অআ