• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০১:৫৪    ঢাকা সময়: ১১:৫৪

ঢাকা রিজেন্সি হোটেল জমি ক্রয়-বিক্রয়ে লুটপাট আছে পাচারের অভিযোগ

দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের এমডিসহ তিন মালিকদের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে জমি ক্রয় দেখিয়ে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানির টাকায় নিজেদের নামে জমি ক্রয় করে আবার অভিনব কৌশলে হোটেলের কাছে বিক্রি করার মাধ্যমে ওই অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। এছাড়া আরও আছে আইপিডিসির সাড়ে ৭ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণে দুর্নীতি এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ। ২০১৮ সাল থেকে দুর্নীতির এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জমি ক্রয়ে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেলেও দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় বিষয়টি পুলিশ বিভাগের তদন্তে মামলার সুপারিশ ছিল কমিশনের। সেখানে বাধা হয় মামলা বাদী না হওয়া নিয়েও। তাই ঘুরে-ফিরে আবারও দুদকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারে দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান এবং সহকারী পরিচালক মো. রাকিবুল হায়াতের সমন্বয়ে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। এর আগে অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক মো. মোশারফ হোসেইন মৃধা অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। 
 
এবারে অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি, ঋণ গ্রহণে অনিয়ম ও যুক্তরাজ্য থেকে অর্থ বিনিয়োগে কোনো লন্ডারিং অপরাধ হয়েছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এর আগে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পাবলিক সার্ভেন্ট না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বিভাগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পুলিশ বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু পুলিশ বিভাগ থেকে মামলা না হওয়ায় পরবর্তীতে কমিশনের আইন অনুবিভাগ হতে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে ঋণ প্রদানে দুর্নীতি কিংবা মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ হয়েছে কিনা এ বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য সুপারিশ করা হয়। এরপরই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই কর্মকর্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান বলেন, ‘একই বিষয়ে কোম্পানি আইনে মামলা হয়েছে। ওই মামলার আলোকে বর্তমানে তদন্ত ও কোম্পানি অডিট চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় কোনো বক্তব্য দেওয়া যায় না। আর দুদকের বিষয়টি আমার জানা নেই। এর বাইরে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না।’ দুদক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হোটেল শুরুর দিকে মাসিক ৬ লাখ টাকা ইউকে পাউন্ডে রিসিভ করার বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।
 
অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্যোক্তা ছিলেন যথাক্রমে সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান এমডি  কবির রেজা, শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক মুসলেহ উদ্দীন আহমেদ এবং  সাবেক ফাউন্ডার চেয়ারম্যান ও পরিচালক আরিফ মোতাহার প্রতিষ্ঠাকালীন ওই তিন জন উদ্যোক্তা। তারা নিজেদের নামে কোম্পানির টাকায় কক্সবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে (দলিল নং- ২০/০১) ২৬ শতাংশ নাল জমি নিজেদের নামে ক্রয় করেন। কক্সবাজারের দুইটি দলিল মূলে ২৬ শতাংশ নাল জমি এবং ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ১৪ তলা মর্টগেজ রেখে আইপিডিসি থেকে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর ঋণ অনুমোদন হয়। প্রকৃতপক্ষে তারা কবির রেজা, আরিফ মোতাহার ও মুসলেহ উদ্দিন হোটেলের টাকায় নিজেদের নামে জমি ক্রয় করে প্রতারণার মাধ্যমে আবার সেই জমির বায়নানামা দলিলমূলে হোটেলের নিকট বিক্রি করে ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বায়না বাবদ অগ্রিম গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেছেন, যা ফৌজদারি অপরাধ।
 
সূত্র আরও জানায়, বায়নানামা দলিল অনুযায়ী তারা অগ্রিম হিসেবে নগদ ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। পুলিশ বিভাগের মাধ্যমে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারায় এ বিষয়ে মামলা করার সুপারিশ করে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে কমিশন থেকে এ বিষয়ে একমত হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বরাবর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত প্রতিবেদনসহ একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে অভিযোগকারী জনৈক মহিদ আলী মিঠু বাদী হয়ে বর্ণিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে ইচ্ছুক নয় বিধায় নথিটি আবার দুদকে পাঠানো হয়। এরপর দুদকের আইন বিভাগের সুপারিশের প্রেক্ষিতে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ঋণ প্রদানে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছিল কিনা কিংবা কোনো মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল কিনা এমন বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য টিম গঠন করা হয়।
 
অভিযোগের বিষয়ে আরও জানা যায়, এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের ওই তিনজনসহ কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান ৫ তারকা হোটেল প্রতিষ্ঠার জন্য লন্ডন জুড়ে প্রচারণা চালায়। বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ অর্থের শতভাগ মালিকানা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। তাদের প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে ঢাকা রিজেন্সি লিমিটেড নামে কোম্পানি গঠনে লন্ডনে বসবাসরত ১২০ জন প্রবাসীরা এতে বিনিয়োগ করেন। ১০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে প্রবাসীরা শেয়ার হোল্ডার হিসেবে ৪৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বিনিয়োগের অর্থ প্রদানের পর আর কোনো খবরই রাখেননি উদ্যোক্তারা। এমনকি বিগত পরিচালনা বোর্ডে রাখা হয়নি কোনো প্রবাসী বিনিয়োগকারী। পারিবারিক বোর্ড বানিয়ে অন্তত ১৪ বছর ধরে পাবলিক কোম্পানি ঢাকা রিজেন্সি হোটেলকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করেছেন তারা। পরিচালনা বোর্ডের সদস্য তো দূরে থাক, এজিএমে আমন্ত্রণও করা হয়নি তাদের। ১৪ বছরে মাত্র ৪ বার নামে মাত্র লভ্যাংশ দেওয়া হলেও, কি পরিমাণ আয় তা জানতে পারেনি প্রবাসী শেয়ার হোন্ডাররা। এটি ১০০ কোটি টাকার কোম্পানি হলেও বর্তমানে সবকিছু মিলিয়ে ১ হাজার কোটি টাকার বাজারমূল্য রয়েছে। যা পুরোটাই পরিচালনা পর্ষদের ওই ৩ জন ভোগ-দখল করছেন। এছাড়া তারা লন্ডন, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দেশকন্ঠ/অআ

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।