মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বিশ্ব ফুটবলের ফোকাসটা এখন এশিয়ার মাটিতে। গত ১৮ ডিসেম্বর কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের পর গতকাল সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত রিয়াদ অলষ্টার বনাম পিএসজির মধ্যকার প্রীতি ম্যাচ। এই ম্যাচকে আবার টাকার অংকে হাজার কোটি হিসেবে অবিহিত করা হচ্ছে। রোনালদো-মেসিদের ৯ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে শেষ হাসি পিএসজির। দীর্ঘদিন পর ফুটবল মাঠে দেখা গেলো এই দুই সুপারস্টারকে। প্রীতি ম্যাচ হলেও মেসি ও রোনালদোর এই দ্বৈরথ উত্তাপ ছড়াচ্ছিল আগে থেকেই। সেই উত্তাপ রোমাঞ্চে রূপ নিয়েছে ম্যাচ শুরু হতেই। প্রথম মিনিট থেকে শুরু হয় টানটান উত্তেজনার এক লড়াই। যতক্ষণ খেললেন মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তারা। তবে ৯ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে হারের স্বাদ পেয়েছেন রোনালদো। সৌদি আরবের দুই ক্লাব আল নাসর ও আল হিলালের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দল রিয়াদ অল স্টারস একাদশের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটি বৃহস্পতিবার রাতে ৫-৪ গোলে জিতেছে পিএসজি। ফরাসি দলটির হয়ে একটি করে গোল করেন মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, রামোস, মার্কিনিয়োস ও উগো একিতিকে। তবে পেনাল্টি মিস করে স্কোরশিটে নাম তোলার সুযোগ হারান নেইমার। এছাড়া রিয়াদ অল স্টার্স একাদশের হয়ে জোড়া গোল করেন রোনালদো।
সৌদির রাজধানী রিয়াদের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই মেসির কাছ থেকে বল কেড়ে নেন রোনালদো। তবে বল হারানোর জবাবটা ম্যাচের তিন মিনিটের মাথায় গোল করেই দেন আর্জেন্টাইন তারকা। নেইমারের সহায়তায় দারুণ এক শটে বল জালে জড়ান তিনি। পিছিয়ে পড়েও ঘাবড়ে যায়নি অল স্টার একাদশ। তাই ফলাফলও এসেছে। ৩৪তম মিনিটে পিএসজির গোলরক্ষক কেইলর নাভাস রোনালদোকে ফাউল করলে পেনাল্টি পেয়ে যায় অল স্টার। স্পটকিক থেকে দলকে সমতায় ফেরান অধিনায়ক রোনালদো। ৩৯ তম মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন পিএসজির ডিফেন্ডার হুয়ান বার্নেট। ফলে ১০ জনের দলে পরিণত হয়ে যায় পিএসজি। কিন্তু একজন কম নিয়েই ৪ মিনিটের মাথায় আবারও লিড নেয় মেসিরা। ৪৩তম মিনিটে এমবাপ্পের ক্রস থেকে জালে বল জড়ান মারকুইনহোস। কিন্তু পিএসজিকে লিড ধরে রাখতে দেননি রোনালদো। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে সবাইকে চমকে দিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন পর্তুগিজ মহাতারকা।
২-২ গোলের সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুদল। দ্বিতীয়ার্ধে বিরতি শেষে সার্জিও রামোসের গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। তবে কয়েক মিনিট পরেই জ্যাং হিউন-সো’র গোলে ম্যাচে আবার ফেরে সমতা। তখন গোল সংখ্যা হয় ৩-৩। ৬০ মিনিটে পেনাল্টির সুযোগ পান কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাতে ৪-৩ গোলে এগিয়ে যায় ফরাসি ক্লাবটি। সে সময়ে দুই দলের তারকা খেলোয়াড়দের পরিবর্তন করায় ভক্তদের হতাশ হতে হয়েছে। তবে হতাশার মাঝেও গোল করেছে মেসিদের দল। এমবাপ্পের বদলে মাঠে নামা হুগো একিতিকে ৭৮ মিনিটে গোল করে ম্যাচে ব্যবধান গড়েন ৫-৩ গোলের। এরপর আর দ্রুত ম্যাচে ফিরতে পারেনি অল স্টার। অতিরিক্ত সময়ে তালিসকার গোল শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে। ৫-৪ গোলে শেষ হয় মেসি-রোনালদোর বহুল প্রতীক্ষিত দ্বৈরথ। বিশ্বকাপ ফুটবলের পর আবারও বড় ম্যাচ দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। সেখানে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াদ ইলেভেন-পিএসজি। এই ম্যাচের বড় দুটি আকর্ষনের নাম ছিল লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কারণ দুই দলের দুই সেরা তারকা যে এই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলেন। পরিসংখ্যানের বিচারে হিসাব হয়তো মিটেই গেছে তাদের।
একসময়ে তাদের মুখোমুখি লড়াই দারুণ উত্তেজনা ছড়াত। ব্যালন ডি’অরের কাড়াকাড়িতেও ছিলেন তারা দুজন। অথচ এখন গতি বাড়িয়ে অনেক দূর চলে গেছেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপ জয় তাকে পেলে, দিয়েগো ম্যারাডোনাদের উচ্চতায় উঠিয়েছে। একসময় (২০১৬ সালের দিকে) ইউরো জিতে রোনালদো ছিলেন এগিয়ে। তবে সেসব দূর অতীত। মেসি এখনো ইউরোপে আছেন কিন্তু রোনালদো সেখান থেকে অনেক দূরে এশিয়ায়। যারা ভেবেছিলেন তাদের আর মুখোমুখি দেখার সুযোগ নেই! তাদের আক্ষেপ মিটিয়ে দিল সম্প্রীতি। এই সম্প্রীতি বা প্রীতিম্যাচেই সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে লড়াইয়ে নামেন মেসি-রোনালদো। সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরের হয়ে এখনো মাঠে নামতে পারেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। হলুদ জার্সিতে তাকে মাঠে দেখার অপেক্ষায় ফুটবলভক্তরা। দুই দলের খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের পাশাপাশি দর্শকদের মাঠে প্রবেশ করতে যে খরচ হয়েছে তাতে এই ম্যাচকে হাজার কোটি টাকার বললে কোণ অংশে ভুল বলা হবেনা। এবার সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে। তার আগেই ডাবল আনন্দ নিয়ে আসছে গতকাল রাতের ম্যাচ। রিয়াদ সিজন কাপ নামের প্রীতিম্যাচে পিএসজির বিপক্ষে খেলবে আল নাসর ও আল হিলাল ক্লাবের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া রিয়াদ ইলেভেন। স্বাগতিকদের নেতৃত্ব দেন রোনালদো।
তাদের দুজনের লড়াইটা যেন শেষ হওয়ার ছিল না। মাঠে বা মাঠের বাইরে কে সেরা তা নিয়ে দুজনের সমর্থক-ভক্তরা আলোচনা করতই। গত বিশ্বকাপের পর এই আলোচনায় ভাটার টান পড়েছে। আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় বিশ্বকাপ এনে দেওয়ায় সর্বকালের সেরাদের একজন হয়েছেন মেসিই। পেছনে ফেলেছেন রোনালদোকে। এদিকে বিশ্বকাপের পর রোনালদো সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলে পর্তুগিজ কিংবদন্তির সঙ্গে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির তুলনা হওয়ার আর কোনো সুযোগই ছিল না। কারণ মাঠে তাদের লড়াইয়ের সম্ভাবনা আর নেই। সেই আশঙ্কা দূর করে আবারও তাদের লড়াই দেখার সুযোগ চলে এলো।
দেশকণ্ঠ/আসো