দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : বিদায়ী বছরে সারা দেশে ১০টি বিভাগীয় সমাবেশের মধ্যে দিয়ে বিএনপির আন্দোলন যে নতুন মাত্রা পেয়েছিল, রাজধানী ঢাকাতে তার ছন্দপতন ঘটেছে। এখন তাই ঢাকার আন্দোলনকে বেগবান করতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। বিএনপির নেতারা বলছেন, সারা দেশে ১০টি বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন প্রাণ ফিরে পায়। কিন্তু ঢাকায় এসে সেটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। যে কারণে বরাবরের মতো ঢাকার আন্দোলন নিয়ে আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিএনপি। আর তাই রাজধানীতে আন্দোলন নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করছে দলটি। বিএনপির নেতারা বলেছেন, রাজধানীতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। রাজধানীর আন্দোলন যত বেশি জোরদার হবে সরকারের ‘কনসার্ন বডি’ তত বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হবে। আর তখনই সরকার বিএনপির দাবি-দাওয়া মানতে নমনীয় হবো। তাই এখন আমাদের মূল টার্গেট রাজধানীতে আন্দোলন করা। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য নেতা জানান, বিএনপি যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছুটির দিনগুলোতে কর্মসূচি দেওয়া। পাশাপাশি কর্মসূচি ঘোষণার সময় বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা দাবির সঙ্গে চলমান জনসম্পৃক্ত ইস্যুকে যুক্ত করা। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আশ্বস্ত করা এবং তাদের কাছে থেকেও আশ্বস্ত হওয়া।
যে দলের নেতারা মনে করেন, তারা ভোটে জয়ী হয়ে সংসদে যেতে পারবেন না, তাদের মনোনয়ন দিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলনে নামানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে বিএনপি। দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা নেতাদেরও আন্দোলনে সক্রিয় করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এছাড়া দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যে কমিটিগুলো অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত, সেই কমিটিগুলো ভেঙে দেওয়া অথবা তাদের দেখভালের জন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে ঢাকাতে বিএনপির আন্দোলনের ছন্দপতনের বিষয়টি মানতে নারাজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, ঢাকায় আন্দোলনের কোনো ছন্দপতন ঘটেনি। আন্দোলন কখনও তুঙ্গে উঠবে, আবার কখনও ঢিলে হবে, এটাই হলো আন্দোলনের ধরন। আস্তে-আস্তে আন্দোলন আরও কঠোর হবে। কঠোর কর্মসূচি আসবে। এটাই আন্দোলনের নিয়ম। ঢাকায় সমাবেশ ঘিরে গত বছরের ডিসেম্বরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিএনপির নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে টুকু বলেন, আমাদের স্থায়ী কমিটিতে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা তো আমি বলতে পারব না। এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে কথা বলা যাবে না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, রাজধানীতে আন্দোলনে এখন সাধারণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আগামীতে আরও বাড়বে। আশা করছি, ধীরে-ধীরে ঢাকায় আন্দোলন জমে উঠবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রমও চলমান আছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো মধ্যে বর্তমানে ছাত্রদলের মধ্যে বেশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। আবার অনেকে দলীয় স্বার্থকে বাদ দিয়ে নিজের স্বার্থে ছাত্রদলকে ব্যবহার করার লক্ষ্য দেখা গেছে। যার কারণে দীর্ঘ ৭ বছর পর রকিবুল ইসলাম বকুলকে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। যাতে করে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে তাদের রাজধানীর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারে। তিনি আরও বলেন, আন্দোলন নিয়ে বিএনপির নেওয়া অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই বাইরে চলে যাচ্ছে। দলের নেতারাই এগুলো বাইরে ফাঁস করে দিচ্ছে বলে ধারনা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। তাই আগামীতে আন্দোলন নিয়ে নেওয়া পরিকল্পনাগুলো গণহারে সবাইকে না জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের মধ্যে গোপন রেখে বাস্তবায়ন করারও একটা সিদ্ধান্ত আছে। গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা ও বিএনপির ১০ দফাকে এক করে বিরোধী আন্দোলনের একটি ইশতেহার তৈরির আলোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ৫ দিনের মতো হলো আমি ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হয়েছি। এরমধ্যে আমাদের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ছিল দুটি, তাই ছাত্রদলের সমস্যাগুলো নিয়ে আমার বসা হয়নি। এরমধ্যে শুধু তাদের সঙ্গে আমার পরিচয় পর্ব হয়েছে। আশা করি আগামী কিছুদিনের মধ্যে ছাত্রদলের প্রতিটি ইউনিটের সঙ্গে বসব, তাদের সমস্যাগুলো শুনব। সেই অনুযায়ী সমাধানও করার চেষ্টা করব।
বিএনপির এক নেতার অভিমত, বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এখনও সমস্যা রয়ে গেছে। আবার অনেক নেতার কার্যক্রম আন্দোলনের চাইতে নির্বাচনকেন্দ্রীক ও অনেকের রাজনীতি পদ-পদবী পাওয়াকে কেন্দ্র করে। তাই এগুলোকে আগে সমাধান না করলে, সরকার পতনের আন্দোলন কখনও জমে উঠবে না। ফলে, আগে প্রধান হচ্ছে দলের মধ্যকার সমস্যা সমাধার করে নেতাকর্মীদের মধ্যে এই ভাব আনতে হবে যে, আন্দোলনের সফলতা এলে, প্রশাসন এমনিতে নিরপেক্ষ হয়ে যাবে, নির্বাচনের সফলতা তখন আনায়াসে ঘরে আসবে। আর আন্দোলনের সফলতা তখনই আসবে, যখন রাজনীতিতে আন্দোলনের ভিত মজবুত হবে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা বলছেন, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনসহ বেশ কিছু কমন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যমত্য হয়েছে বিরোধী দলগুলোর। প্রাথমিকভাবে এই ইস্যুগুলো সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে যেতে হলে আগে বিরোধী আন্দোলনের একটি ইশতেহার তৈরি করতে হবে। আর এই যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান শরিক দল যেহেতু বিএনপি, তাই তাদের এই ইশতেহার তৈরিতে এগিয়ে আসতে হবে। আর এটি হলে রাজধানীতে গণ-আন্দোলন শক্তভাবে গড়ে উঠবে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা ও বিএনপির ১০ দফাকে এক করে বিরোধী আন্দোলনের একটি ইশতেহার তৈরির আলোচনা চলছে। আশা করি, চলতি মাসে আমরা এটা চূড়ান্ত করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এটা চূড়ান্ত হলে আন্দোলনের নতুন মাত্র পাবে। পুরো বিরোধী আন্দোলন নতুন উদ্যম পাবে। নতুন পর্বের আন্দোলন উন্নতি হবে।
দেশকন্ঠ/অআ