• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ১৫:১৮    ঢাকা সময়: ০১:১৮

বিপিএলে হতাশ করছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : প্রত্যাশা পুরণ করতে পারছেন না জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এক সাকিব আল হাসানের বাইরে যারা বিপিএল খেলছেন তারা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। জাতীয় দলের বাইরে থাকা মাশরাফি বিন মর্তুজা ও নাসির হোসেনের মতো ক্রিকেটার দারুণ খেলছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম সংস্করণে এই তিনজনসহ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ভালো খেললেও জাতীয় দলে নিয়মিত খেলোয়াড়েরা এখনো পারছেন না।
 
সাকিব ছাড়া তাঁদের কেউ-ই নেই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও উইকেটশিকারির সেরা পাঁচের তালিকায়। সে হিসেবে তবে এবারের বিপিএলে অভিজ্ঞদেরই দাপট দেখা যাচ্ছে। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, উইকেটশিকার কিংবা ডিসমিসালে শীর্ষস্থান সব ৩০ বছরের ওপরের খেলোয়াড়দের দখলে। বিপিএলে আগের আট সংস্করণে চারবারই টুর্নামেন্টসেরা নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব। এবারও দুর্দান্ত  তিনি। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক ঢাকা পর্বের খেলা শুরুর আগে ৫ ইনিংসে করেছেন ২৭৫ রান, যেটি এই বিপিএলে এখনো সর্বোচ্চ। অসাধারণ ব্যাটিং গড়ের (৯১.৬৬) সঙ্গে ২০০ ছুঁই ছুঁই স্ট্রাইক রেট। ৬.০৪ ইকোনমিতে উইকেট ৩টি। 
 
নানা বিতর্কে নিজেকে জড়িয়ে গেল চার বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে রয়েছেন নাসির হোসেন। এই বিপিএলে দেখা মিলেছে ভিন্ন এক নাসিরকে। ঢাকা ডমিনেটরস ভালো না করলেও ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুর্দান্ত এই অলরাউন্ডার। ৬ ইনিংসে ৮৯.৬৬ গড়ে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৯ রান নাসিরের। ৭.৩৫ ইকোনমিতে ৭ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় চারে ৩১ বছর বয়সী নাসির। ৩৭ পার করা ওয়াহাব রিয়াজ খুলনা টাইগার্সের হয়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট এই পাকিস্তানির। এছাড়া ৩৯ বছর বয়সী সিলেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ৬.৭৫ ইকোনমিতে ৯ উইকেট নিয়ে উইকেটশিকারে দুইয়ে। 
 
স্পিনার হিসেবে জাতীয় দলের হয়ে কখনো খেলা হয়নি তানভীর ইসলামের। ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বাঁহাতি স্পিনার। জাতীয় দলে ক্রিকেটাররা নিয়মিত আলো না ছড়াতে পারলেও তরুণ ক্রিকেটাররা বিপিএলে বেশ নজর কাড়ছেন। এর মধ্যে আছেন সিলেটের তৌহিদ হৃদয়। ৩ ইনিংসে ৬৫ গড়ে তাঁর রান ১৯৫। চোটে পড়ে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব খেলতে পারেননি তিনি। রংপুরের হয়ে তরুণ পেসার রবিউল হক নিয়েছেন ৭ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অসাধারণ ছন্দে থাকা লিটন দাস চট্টগ্রাম পর্বের মাঝামাঝি সময়ে জ্বলে উঠেছেন। ঢাকায় প্রথম পর্বে ভালো করলেও নাজমুল হোসেন শান্ত ভালো করতে পারেননি চট্টগ্রামে। শুরুতে রান না পেলেও ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন আফিফ হোসেন। 
 
এর বাইরে জাতীয় দলে নিয়মিত থাকা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, মুনিম শাহরিয়ার, ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি ও সাব্বির রহমান রুম্মানরা এখনো নিজেদের ছায়া হয়ে আছেন। এখনো ইবাদত হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমানদের সেরাটা দেখার অপেক্ষায় বিপিএল। এখনো অনেক তারকাকে তাই ম্লানই বলতে হবে। টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়া ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে ফেরার বড় মঞ্চ বিপিএল। এখানে পারফর্ম করলে পুরস্কার হিসেবে জাতীয় দলে সুযোগ মেলে তাদের। নতুন মুখের ভিড়ে বড় চ্যালেঞ্জ থাকে বাদ পড়াদের। অথচ এবারের বিপিএলের ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্বের খেলা শেষ হলেও তেমন কাউকে চোখে পড়েনি। নতুন তো আসেনইনি, জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ারাও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ব্যাটিং-বোলিংয়ে পাঁচে নেই মোহাম্মদ নাঈম, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান কিংবা সাইফউদ্দিন, এবাদত হোসেন ও মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধরা। সেরা দশের তালিকায় তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন। 
 
উইকেট শিকার কিংবা ইকোনমি রেটেও বেশ পিছিয়ে তারা। কিছুদিন আগে বোলারদের উন্নতি না দেখে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিবকেও। পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৬.৭৫ ইকোনমিতে ৯ উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকার দুইয়ে মাশরাফী। বাকি ১০ তরুণের মধ্যে আছেন একমাত্র হাসান মাহমুদ। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দুর্দান্ত মাশরাফী। তবে তার এমন পারফরম্যান্স যতটা ইতিবাচক, ততটা শঙ্কাও বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। মিরপুরে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে আশরাফুল বলেন, ‘অঅমার কাছে মনে হয় মাশরাফির পারফরম্যান্স একদিক থেকে ইতিবাচক, আরেকদিক থেকে মনে হয় আমরা উন্নতি করছি কিনা? কারণ, সে পাওয়ার প্লেতে ৩ ওভার বল করছে ১১০ পেসে, চমৎকার লাইন লেংথে বল করছে। কিন্তু আমাদের যারা টপ প্লেয়ার যেমন সৌম্য সরকার ওর বলে আউট হচ্ছে, পাওয়ার হিট করতে পারছে না। ওই জায়গায় চিন্তা হচ্ছে, আসলে আামাদের খেলায় উন্নতি হচ্ছে কিনা। 
 
সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেট হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি এমনিতেই নেই। ওয়ানডে দল যতটা তৈরি, টি-টোয়েন্টি দল ততটাই এলোমেলো। এখনো একটা নির্দিষ্ট দল দাঁড় করাতে পারেননি বিসিবির নির্বাচকরা। সৌম্য, নাঈম, সাব্বির, তিনজনই জাতীয় দলের নিয়মিত পারফরমার। কিন্তু সর্বশেষ কয়েক বছর ধরে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন তারা। তিন বছর পর এশিয়া কাপে জাতীয় দলে ফিরে সাব্বির করেছিলেন ৫, ০, ১২ ও ১৪ রান। এক বছর পর ফেরা সৌম্য করেন ২৩, ৪, ১৪, ১৫, ০ ও ২০ রান। দুজনই খেলেছিলেন টপঅর্ডারে। কিন্তু তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। এতে ফিরেই বাদ পড়েন সাব্বির। সৌম্যও আছেন সে তালিকায়। জাতীয় দলের পারফরম্যান্স না হয় বাদ থাকল। বিপিএলেও যেন একই হাইলাইটস দেখাচ্ছেন তারা। খুলনা টাইগার্সের হয়ে তিন ম্যাচে ব্যাটিং করে সাব্বির করেন মোটে ২২ রান। ঢাকার ওপেনার সৌম্য ৬ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪২ রান। আর রংপুরের হয়ে নাঈম ৫ ম্যাচে করেছেন ৮৪ রান। 
 
এ যখন সিনিয়রদের অবস্থা, তখন আশপাশেও নেই পাইপলাইনে থাকারা। এবারের বিপিএলে তুলনামূলক ভালো উইকেট পাচ্ছে দলগুলো। ঢাকা-চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি ম্যাচে দুইশর বেশি পুঁজিও বলে সে কথা। সাকিব, নাসিররা ভালো করলেও সৌম্য-সাব্বিরদের লড়াই করা নিয়ে আশরাফুল বলেন, যে ধরনের উইকেটে আমরা খেলছিলাম, আমি আশা করছিলাম আমাদের খেলোয়াড়রা আরও ভয়ডরহীন খেলবে। বড় বড় ইনিংস ও ভালো স্ট্রাইকরেট ব্যাটিং করবে, সে জিনিসটা একটু মিসিং। সবকিছুর বাইরে তৌহিদ হৃদয়, রেজাউর রহমান রাজা, রবিউল ইসলাম কিংবা আল আমিনদের পারফরম্যান্স হয়তো কিছুটা স্বস্তি বয়ে দিতে পারে। তবে পাইপলাইনের ক্রিকেটারদের ব্যাটিং-বোলিং দুশ্চিন্তাই বয়ে দিচ্ছে। সেটা ঢাকা পর্বে বাড়বে না কমবে সেটাই দেখার বিষয়।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।