দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর এলাকার জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে একদিকে উর্বর ভূমি বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে নদী ভাঙন ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। প্রশাসন দেখেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দৃশ্যমান কোন প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশাসনের মতো তারাও নিশ্চুপ রয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। চরকালকিনি ইউনিয়নের নবীগঞ্জ এলাকার নদীর পাশ থেকেই বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইটভাটার জন্য মাটি কাটতে দেখা যায়। একদিনে নদীর তীরের প্রায় ৬০ ট্রাক্টর মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে চরলরেন্স ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন নিশাদের ইটভাটায়। মাটি কাটার শ্রমিক ও ট্রাক্টর চালকরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে জমির মালিক কে বা কারা তা জানা যায়নি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে নবীগঞ্জ এলাকা হয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফেরদৌস আরা মেঘনার নতুন চর কাকড়াতে যান। তখন মাটি কাটার ঘটনাটি তাদের নজরে পড়লেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। নবীগঞ্জ এলাকার নদীর তীরে সরেজমিনে দেখা যায়, জমিতে সয়াবিন চাষ করেছেন কৃষকরা। আর দক্ষিণ পাশে বিস্তীর্ণ জমির উপরিভাগের মাটি কাটছেন কয়েকজন শ্রমিক। পরে তারা নিজেরাই ওই মাটি ট্রাক্টোর বোঝাই করছেন। এর পাশেই নদী থেকে প্রায় ১০ ফুট দূরে সম্প্রতি প্রায় ৩০ শতাংশ জমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখেই মনে হয় সেখানে একটি বড়সড় পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে জোয়ারে নদীর ঢেউ এলেই খুব সহজেই ওই জমি ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। পাশেই নবীগঞ্জ বাজার। ভাঙন বাড়লেই দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজারটি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন মিয়া বলেন, পাশের জমিতে সয়াবিন বীজ ফেলা হয়েছে। এখানে ফসল ভালো হয়। নদী ভাঙনে বিলীনের ভয়ে জমির মালিক এবার ভাটা মালিকের কাছে মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রতি ৮ শতাংশ জমির মাটি ৪-৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার পর দুই বছর পর্যন্ত সেখানে ফসল উৎপাদন হয় না। মফিজ আহমেদ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, বিনামূল্যে ভাটা মালিকরা ইট তৈরির জন্য নদীর তীর এলাকা থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নদীতে ভেঙে বিলীন হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন। আবার অনেকে জমি চাষাবাদের পর ভাঙনে বিলীনের ভয়ে ফসল উৎপাদনে অনীহা প্রকাশ করছেন। সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে নদীর তীরের মাটি ভাটা মালিকরা নিয়ে যাচ্ছে। এতে নদী ভাঙনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। জেলে ইব্রাহিম, আক্কাছ, আনিসসহ (ছদ্মনাম) কয়েকজন জানায়, নদীতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তাদের জরিমানা ও জেল দেওয়া হয়। জাল পুড়িয়ে দেয় প্রশাসন। কিন্তু নদীর তীর থেকে প্রতিনিয়ত ইটভাটার জন্য মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে নদী ভাঙনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু তা প্রশাসনের চোখে পড়লেও কোনো ব্যবস্থা নেন না তারা।
মাটি কাটার শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন ও জহির হোসেন জানান, সকাল থেকে তারা ১৫ জন মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। স্থানীয় ইটভাটা মালিক আনোয়ারের হয়ে তারা কাজ করেন। প্রতি ট্রাক্টর মাটি কাটার জন্য তারা (১৫ জন শ্রমিক) ১৫০ টাকা মজুরি পান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা প্রায় ৬০ ট্রাক্টর মাটি কেটে ভাটায় পাঠিয়েছেন। ট্রাক্টর চালক মো. সোহেল বলেন, আমি ইটভাটা মালিক আনোয়ারের ট্রাক্টর চালাই। নদীর পাড় এলাকার মাটি ইট তৈরির জন্য নেওয়া হয়। ভাটা মালিক মাটি কিনে নিয়েছে জমির মালিকের কাছ থেকে। বক্তব্য জানতে ভাটা মালিক আনোয়ার হোসেন নিশাদের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, আমি ঘটনাস্থল এলাকা হয়ে চরে গিয়েছি। সেখান থেকে অন্য পথে চলে আসি। এজন্য নদীর পাড় থেকে ইটভাটার জন্য মাটি কাটা নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। সেখানে অভিযান চালিয়ে মাটি কাটা বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশকন্ঠ/অআ