দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন মাসুম। বছর পাঁচেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেন তিনি। স্ত্রী হনুফা বিভিন্নজনের বাসায় আয়ার কাজ করে সংসার চালান। স্বামী মাসুম, ছেলে হাসান ও মেয়ে মুনমুন চার সদস্যের সংসার চলে হনুফার আয়ে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। এরই মাঝে গত ৩০ নভেম্বর হনুফা এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। অভাবের সংসারে খরচ বাড়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়ে তাদের কপালে। সিদ্ধান্ত নেন সন্তান বিক্রি করার। অভাবের তাড়নায় গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ওই ছেলেকে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। পরে সন্তানকে ফিরে পেতে বিভিন্নজনের দারস্থ হন মা হনুফা। কিন্তু কোনো মতেই কাজ হচ্ছিল না। কোনো উপায় না পেয়ে এলাকাবাসী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
বিষয়টি জানার পর গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ঢাকা জেলার দোহার সদর থানা এলাকার নারিশা গ্রামের কাশেম-স্বর্ণা দম্পতির কাছ থেকে বৃহস্পতিবার শিশুটিকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর আইনুদ্দিনের বাড়িতে লিমা হনুফা (৩৬) স্বামী মাসুম ও তিন সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন। নিম্ন আয়ের পরিবার হওয়ায় সংসারের খরচ জোগাতে গিয়ে বেশ ঋণ হয়ে যায় তাদের। পরে এ টাকা শোধ করার চাপ এলে অভাবের তাড়নায় তাদের শিশু সন্তানকে ৩০ হাজার টাকা বিনিময়ে ঢাকার দোহার এলাকার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিশুটিকে বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়। পরে সন্তানদের লালন-পালন করা সুবিধার্থে পুলিশের উদ্যোগে শিশুর বাবা মাসুমকে টঙ্গীর হক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় পুলিশ।
শিশুটির মা লিমা হনুফা বলেন, অভাবের তাড়নায় ও দেনা পরিশোধ করার জন্য পরিবারে সকলের চাপের মুখে সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে আমার কোল থেকে শিশুকে দেওয়ার পর থেকে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। পুলিশের সহযোগিতায় আমার বাচ্চা ফিরে পেয়ে বুকটা ভরে গেছে। সেই সঙ্গে আমার স্বামীর চাকরির ব্যবস্থাটা হওয়ায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি। হক গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা হযরত আলী ঈশান বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর শিশুটির বাবা মাসুমকে আমাদের কারখানায় কাজের সুযোগ করে দিয়েছি। তার বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সবসময়ই পজিটিভ চিন্তা নিয়ে কাজ করে। এ রকম একটি ঘটনা আমার হৃদয়কে নাড়া দেয়। আমি ঘটনাটি জানার সাথে সাথে দত্তক নেওয়া শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিই। পুলিশ খোঁজ নিয়ে শিশুটির অবস্থান জেনে উভয়পক্ষের আলোচনায় ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে শিশুকে মায়ের কোলে দেওয়া হয়। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে হক গ্রুপের একটি কারখানায় শিশুটির বাবা মাসুমের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই পরিবারের বড় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো, অভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ ছিল। আমরা তার পড়ালেখা চালুর ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও অপর এক ব্যবসায়ী ওই পরিবারকে ১০ মাসের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন।
দেশকন্ঠ/অআ