দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : সিলেট স্ট্রাইকার্সের টিম ম্যানেজমেন্ট কি কারণে মাশরাফিকে চেয়েছিল তার প্রমাণ আরেকবার পাওয়া গেল। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ম্যাচে এই অধিনায়ক ফিরতেই আবারো জয়ের ধারায় ফিরেছে তার দল। ৬ উইকেটে জয় দিয়ে প্রথম পর্ব শেষ করেছে। পাশাপাশি পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকেই কোয়ালিফায়ারে খেলবে পূন্যভুমির দলটি। চোট কাটিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সের একাদশে ফিরেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
বিপিএলে লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের মুখোমুখি হয় সিলেট। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টায় শুরু হওয়া ম্যাচটিতে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিং করে শীর্ষে থাকা সিলেট। পাকিস্তান সুপার লিগে খেলতে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিম। তবে সিলেটের হয়ে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে ফের ঢাকায় আসেন দুজন। একাদশে আছেন তারা। সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করা সিলেটের লক্ষ্য এখন শীর্ষ দুইয়ে থেকেই লিগ পর্ব শেষ করা। খুলনার অবশ্য বিদায় নিশ্চিত হয়েছে আগেই।
এই ম্যাচের পর আরও একটি ম্যাচ খেলবে তারা। তবে দুটি ম্যাচই তাদের জন্য আনুষ্ঠানিকতার। এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে সিলেট। ১০ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে সাত দলের মধ্যে সবার নিচে খুলনা। আগের ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন মাশরাফি। নড়াইল এক্সপ্রেসের অনুপস্থিতিতে বড় হার দেখে সিলেট স্ট্রাইকার্স। সেই দলটিই নিয়মিত অধিনায়ককে ফিরে পেয়ে ফের চাঙ্গা। মিরপুরে ৬ উইকেট আর ১৫ বল হাতে রেখে খুলনা টাইগার্সকে হেসেখেলেই হারালো সিলেট। এই জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে গ্রুপপর্ব শেষ করলো মাশরাফির দল। খুলনা রইলো তলানিতেই। বোলাররাই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন। সিলেটের সামনে জয়ের লক্ষ্য ছিল মোটে ১১৪ রানের। ১০ রানের মধ্যে তৌহিদ হৃদয় (৫) আর নাজমুল হোসেন শান্তকে (৩) ফিরিয়ে কিছুটা আশা জাগিয়েছিল খুলনা। তবে সেই আশা দূরাশায় পরিণত হতে সময় নেয়নি।
তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিম আর জাকির হাসান মিলে ৯০ রানের জুটিতে ম্যাচ বলতে গেলে বের করে নিয়ে আসেন। জাকির ৪৬ বলে ৫ চার আর ১ ছক্কায় খেলেন ৫০ রানের ইনিংস। ৩৫ বলে ৩৯ করা মুশফিক ননস্ট্রাইকে হন দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার। তবে রায়ান বার্ল একটি করে চার-ছক্কায় ৬ বলে ১২ করে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি খুলনা টাইগার্স। চোটের কারণে তামিম ইকবাল ছিটকে গেছেন। অভিজ্ঞ ওপেনারকে ছাড়া খেলতে নেমে ৩৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে খুলনা। দলের বিপদে হাল ধরেন মাহমুদুল হাসান জয়। তার বল সমান ৪১ রানের ইনিংসে তার ৩টি চারের সঙ্গে ছিল ২টি ছক্কার মার। শেষদিকে ১৭ বলে ২২ করেন নাহিদুল ইসলাম। অধিনায়ক ইয়াসিরের ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ১২। বাকিরা কেউ দুই অংকের ঘরও ছুঁতে পারেননি।
সবমিলিয়ে ৮ উইকেটে ১১৩ রানেই থামে খুলনা। সিলেট স্ট্রাইকার্সের পেসার তানজিম হাসান সাকিব দারুণ বোলিং করেছেন। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে তিনি নেন ৩টি উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন ইমাদ ওয়াসিম আর রুবেল হোসেন। এবারের বিপিএলে শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল সিলেটের। তবে শেষদিকে এসে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল শীর্ষস্থান ধরে রাখা নিয়ে। কিন্তু সেসব শঙ্কাকে উড়িয়ে দিল মাশরাফির দল। লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে উড়িয়ে শীর্ষস্থানে থেকেই প্লে-অফে গেল সিলেটের দলটি। প্রথমে ব্যাট করে ১১৩ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় খুলনা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে খুব সহজেই জয় নিশ্চিত করে সিলেট। এই জয়ে ১২ ম্যাচে সিলেটের পয়েন্ট এখন ১৮। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কুমিল্লার পয়েন্ট ৮ ম্যাচে ১৬। তিন নম্বরে থাকা বরিশালের পয়েন্ট ১৪। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে খুলনা।
এই ম্যাচের আগে এমনিতে দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটার ইমাদ ওয়সিম ও মোহাম্মদ আমিরকে হারিয়ে বোলিং আক্রমণে ধার কমে গিয়েছিল। যদিও এই দুজন আবারো ফিরে এসেছেন। নতুন করে মাশরাফিকে পাওয়া না গেলে নিশ্চিত ভাবেই পিছিয়ে পড়বে শিরোপা প্রত্যাশী সিলেট। কিন্তু ওই ম্যাচে মাশরাফিকে পাওয়া যাবেই, এমনটা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না দলটির কেউ। এবারে বিপিএল যেন মাশরাফি বিন মুর্তজার পুনর্জনমের মঞ্চ। সাবেক এই দেশসেরা অধিনায়কের পুরনো রূপটি চেনাচ্ছেন নতুন করে। চল্লিশের কোটায় পা দিয়েও যেমন মাঠ মাতাচ্ছেন বল হাতে তেমনি দেখাচ্ছেন নেতৃত্বের জাদুর ভেল্কি। তাতে শুরু থেকেই উড়ন্ত ফর্মে তার দল সিলেট স্ট্রাইকার্স। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান দখলের পাশাপাশি নিশ্চিত করেছে প্লে-অফও। গতকাল দলের সঙ্গে অনুশীলনে থাকলেও টাইগারদের সফল এই অধিনায়ককে নিয়ে আপাতত সিলেট সমর্থকদের জন্য নেই কোনো সুসংবাদ। মাশরাফির সবশেষ অবস্থা জানিয়ে সিলেট কোচ রাজিন সালেহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন গ্রুপ পর্বের পরবর্তী ম্যাচেও মাশরাফিকে পাওয়া যাবে না। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঠিকই মাঠে নেমেছেন। যদিও বোলিং করেননি। তবে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছেন। আর এতেই তার দলে থাকাটা স্বার্থক হয়েছে।
দেশকণ্ঠ/আসো