দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ভারতের ৫৯ শতাংশ এলাকাই ভূমিকম্প-প্রধান অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু সেখানে ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে এমন বাড়ি খুব কম। তুরস্ক ও সিরিয়ার মতো অত শক্তিশালী ভূমিকম্পেরও দরকার নেই। রিখটার স্কেলে সাড়ে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধসে যাবে। সব বড় বড় বাড়িঘর নিচের নরম মাটির ভেতরে তলিয়ে যাবে। ২০১১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে চার বছর ধরে সমীক্ষা চালানোর পর এই হুমকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল আইআইটি খড়্গপুরের সমীক্ষক দল। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে সল্ট লেক, রাজারহাট-নিউটাউন, কসবা, পার্ক স্ট্রিট, ডালহৌসি স্কয়ার বা বিবাদী বাগ, বড়বাজার, বাগুইআটি এলাকা-সহ কলকাতার বিশাল অঞ্চল মাটির মধ্যে বসে যাবে। কারণ কলকাতার অনেকখানি এলাকা কার্যত কাদামাটির ওপর ভাসছে।
সেই ২০১৫ সালে খড়্গপুর আইআইটির অধ্যাপক হিন্দুস্তান টাইমসে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছিলেন, ভূমিকম্প হলে কলকাতার নিচের নরম মাটির সঙ্গে পানি মিশবে। তার ফলে বাড়িঘর নিচে ধসে যাবে। পুরীর সমুদ্রে স্নান করতে গেলে পায়ের নিচ থেকে যেমন বালি সরে যায়, ঠিক তেমনই অবস্থা হবে। কলকাতার পায়ের নিচ থেকে নরম মাটি সরে যাবে এবং কলকাতা বসে যাবে নিচে। ৪৩৫ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে ৩৫০টি জায়গায় বোরওয়েল তৈরি করে, নানাভাবে পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল গবেষক দল। তারপর আট বছর কেটে গেছে। এই ভয়াবহ ছবি সামনে আসার পরও কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে? একের পর এক বহুতল বাড়ি তৈরি হচ্ছে, সল্টলেক ও রাজারহাট-সহ বিপজ্জনক এলাকায় একের পর এক নির্মাণ হচ্ছে, সেখানে কি ভূমিকম্প-রোধক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? মনে হয় না।
আরেকটি সমীক্ষা বলছে, কলকাতায় মাত্র ৭ শতাংশ বাড়িতে ভূমিকম্প নিরোধক ব্যবস্থা ঠিকভাবে আছে। বড় ভূমিকম্প হলে ৩৪ শতাংশ বাড়ির মাঝারিমাপের ক্ষতি হবে। ২৬ শতাংশ বাড়ি ধসে যেতে পারে, ১৮ শতাংশ বাড়ির প্রভূত ক্ষতি হবে, ১৫ শতাংশ বাড়ির সামান্য ক্ষতি হবে। কিন্তু তারপরও সরকার বা সাধারণ মানুষের কোনো হেলদোল হয় না। তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের খবর পড়ে তাদের আতঙ্ক হয়। তবে তা খুবই ক্ষণস্থায়ী। কলকাতার ৯০ শতাংশ মানুষ মনেই করেন না, কলকাতা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে আছে। তারা নিজেদের ভূমিকম্পের হাত থেকে নিরাপদ মনে করে বসে আছেন। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার যে ভূমিকম্প জোন চিহ্নিত করেছে, তাতে কলকাতার কিছু এলাকা নিরাপদ দেখানো আছে। কিন্তু অনেক এলাকা পাঁচ নম্বর বা ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ জোনে আছে, অনেক এলাকা চার নম্বর জোনে আছে। এটুকু সচেতনতা যেখানে নেই, সেখানকার মানুষদের সম্পর্কে একটা কথাই বলতে হয়, আগ্নেয়গিরির শিখরে বসে পিকনিক করা ভালো। কিন্তু যেদিন অগ্নুৎপাত হবে, সেদিন পুরোটা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই দয়া করে নীরোর মতো বেহালা না বাজিয়ে আগে থেকে সতর্ক হয়ে প্রয়োজনীয় বিধি মেনে বাড়ি করলে শহরটা বাঁচতে পারে। নাহলে কলকাতার অবস্থা সিরিয়া-তুরস্কের মতো হলে বলার কিছু নেই।
দেশকন্ঠ/অআ