দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : অনেক প্রত্যাশা থাকলেও তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ নারী জাতীয় ক্রিকেট দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা তিন হারে বিদায় নিয়েছে আসর থেকে। আর প্রথম দল হিসেবে প্রথম পর্ব থেকেই হতাশার বিদায় হয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের। বিশ্বকাপে তিন নাম্বার ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও মানতে হয়েছে বড় পরাজয়। অথচ পয়েন্ট তালিকার সবচেয়ে তলানির দল ছিল তারা। সেই দলের কাছে ৭১ রানের পরাজয় বাংলাদেশের সামর্থকের ফেলে দিয়েছে প্রশ্নের মুখে। প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া লাল সবুজ দলের জন্য বিশ্বকাপটা এখন হয়ে পড়েছে আনুষ্টানিকতার। কুড়ি ওভারের ক্রিকেট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনে এখন পর্যন্ত ব্যর্থতাই সঙ্গী বাংলাদেশ নারী দলের। টানা ৫টি বিশ্ব আসরে খেলে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি টাইগ্রেসরা। এবারের বিশ্বকাপেও প্রথম তিন ম্যাচে সে পরিসংখ্যানে পরিবর্তন আনতে পারেননি কে এম মাহমুদ ইমনের দল। উল্টো প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ বিদায়ের লজ্জায় পড়েছে টাইগ্রেস দল।
দক্ষিন আফ্রিকার কেপ টাউনে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭১ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ৮১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন সুজি বেটস। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশকে ১৯০ রানের লক্ষ্য দেয় কিউই নারীরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ১১৮ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশের নারীরা। ম্যাচের শুরু থেকেই রানের লাগাম টানতে পারেনি বাংলাদেশের নারী বোলাররা। অবশ্য খুব একটা সুযোগও দেননি নিউজিল্যান্ডের ওপেনাররা। দুই ওপেনার মিলে ৭৭ রানের জুটি গড়ে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন কিউইদের। ৪৪ রান করা বার্নাডাইনকে ফেরান স্বর্ণা আক্তার। ১৩ রান করে ফেরেন অ্যামেলিয়া কর। সোফিয়া ডিভাইন ফেরেন প্রথম বলেই। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করে গেছেন কর। ৬১ বলে খেলেছেন ৮১ রানের অনবদ্য ইনিংস। আর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে শেষদিকে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন ম্যাডি গ্রিন। এই অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে এসেছে ২০ বলে ৪৪ রান।
আর তাতে ১৮৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়ে যায় কিউইরা। ব্যাট করতে নেমে কখনোই ম্যাচের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাট করতে পারেনি বাংলাদেশের নারীরা। উল্টো নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর রোগ তো ছিলই। আগের দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে দাপট দেখানো নিগার সুলতানা আজ ফিরেছেন ৮ রানে। একাই লড়েছেন স্বর্ণা আক্তার। ২২ বলে ৩১ রানে তিনি ফেরার পর ৮ উইকেটে ১১৮ রানে থামে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটা ছিল গ্রুপের তলানির দুই দলের। যারা কিনা এর আগে জয়ের দেখা পায়নি। প্রথম জয় পাওয়ার সেই লড়াইয়ের ম্যাচে বড় ব্যবধানেই জিতেছে নিউজিল্যান্ড। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা তৃতীয় হার বাংলাদেশের মেয়েদের। তিন ম্যাচে শুন্য পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপটা এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা নিগারদের। যে নিউজিল্যান্ড কিনা এর আগের দুই ম্যাচের একটিতেও ১০০ পার করতে পারেনি। তারাই এদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১৮৯ রান করে ৩ উইকেটে। এর আগে শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার পর এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও পাত্তা পায়নি তারা। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগ্রেসরা।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরেছিল ৭ উইকেটের ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছে তারা। তাই তৃতীয় ম্যাচটি বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে এক চার ও এক ছক্কার মারে ওপেনার শামীমা সুলতানা আশা দেখালেও তৃতীয় ওভার থেকেই পথ হারায় বাংলাদেশ। শামীমা ১১ বলে ১৪ রান করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। পর পর বিদায় নেন সোবানা মোস্তারি (৪) ও নিগার সুলতানা জ্যোতি (৮)। দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশ আর প্রয়োজনীয় রানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান বেশ বড়। ম্যাচেও প্রমাণ পাওয়া গেল তার। শুরুতে স্কোরকার্ডে বড় রানের সংগ্রহ দাঁড় করালো কিউই মেয়েরা। জবাব দিতে নেমে স্বাভাবিকভাবেই পাল্লা দিতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা।
তবে এর মধ্যেও আশার আলো হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা স্বর্ণা আক্তারের ব্যাটিং। ১৮৯ রানই অবশ্য কিউইদের বিপক্ষে টাইগ্রেসদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার দলটির বিপক্ষে দলীয় সংগ্রহ পাড় হয়েছে তিন অঙ্ক। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পায় নিউজিল্যান্ড। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দারুণ করছিলেন স্বর্ণা। ৪ চারে ২২ বলে ৩১ রান করে তিনি অবশ্য উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। এর আগেই ৪৬ রানের জুটি ভাঙে মুর্শিদা ৩৮ বলে ৩০ রান করে আউট হলে। তাদের বিদায়ের পর আর বাংলাদেশ বেশিদূর যেতে পারেনি। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারের পথ আগেই কঠিন করে ফেলেছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। সেমিফাইনালের দৌড়ে থাকতে ম্যাচটি জিততেই হতো তাঁদের। আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম। তবে বেশি হতাশ করছে মেয়েদের ব্যাটিং। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পর ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছিলেন জ্যোতি। তবে এখনও সেমির আশা ছেড়ে না দিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘ভাল করার এখনো সুযোগ আছে। আমাদের বোলিং সাইড খুব ভালো করছে। এটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। আগের ম্যাচে কিছু ইতিবাচক দিক ছিল। এখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো কিছু করে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের চেষ্টা থাকবে।’ কিন্তু মাঠে আর এসকল কথার কোন প্রতিফলন পাওয়া যায়নি।
যদিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই কদিন আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কিউই মেয়েদের অবস্থানও খুব স্বস্তিদায়ক নয়। নিজেদের আগের দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে তাঁরা। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড দুই দলের জন্যই ম্যাচটি ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যে দল জিতবে তাদের সেমির স্বপ্ন বেঁচে থাকবে। হারলে অনেকটাই বিদায় নিশ্চিত। সেখানে হেরে বিদায় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
দেশকণ্ঠ/আসো