দেশকণ্ঠ কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কালীগঞ্জে নামবিহীন প্যাথলজিসহ ভুয়া ডাক্তার উধাও হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরেজমিনে জানা যায়, কালীগঞ্জ সরকারী হাসপাতালের নাকের ডগায় ফুলে ফেপে বড় হয়ে উঠা নাম বিহীন প্যাথলজির মালিক নয়ন কুমার চাকি (৪৫) একজন ভুয়া ডাক্তার। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে জাল সনদের মাধ্যমে স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছিল বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। সে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার থেকে হঠাৎ সে উধাও। সে সরকারী হাসপাতাল সংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়িতে থেকে এধরনের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যেতেন। নয়ন কুমার চাকি কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালীগাঁও এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি পর্যন্ত রোগী দেখার কাজ করতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির মার্কেটিংয়ের কর্মীদের নিকট হতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অতিসম্প্রতি নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক সংবাদকর্মী পরিচয় গোপন করে চিকিৎসা সেবা নিতে যান সেই ডাক্তারের কাছে। সংবাদকর্মী ডাক্তারের কাছে জানতে চান রক্তের কি কি ধরনের পরীক্ষা করানো হয় ও আলট্রাসনোগ্রাম করা যাবে কি না? উত্তরে ডাক্তার বলেন সকল প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে। তারই ধারাবাহিতায় বিষয়গুলি গাজীপুরের সিভিল সার্জন ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পপনা কর্মকর্তাকে অভিহিত করা হয়। সেমতে কর্তৃপক্ষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভুয়া ডা. নয়ন কুমার চাকির প্যাথলজিতে অভিযান পরিচালনা করেন। কর্তৃপক্ষ তার কাছে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর জানতে চায়। সে তাৎক্ষনিক কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি এবং পরে কাগজ দেখাবে বলে সময় চেয়ে নেন। সেই সুযোগে ঐ রাতেই প্যাথলজির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে যন্ত্রাংশ ও তার বাসার সকল মালামালসহ রাতের আধারে পালিয়ে যায় নয়ন কুমার চাকি।
তার ভিজিটিং কার্ডে তিনি নিজেকে মেডিসিন, ডায়াবেটিস, মা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সোনোলজিস্ট চিকিৎসক বলেও পরিচয় দিতেন। তার প্রেসক্রিপশন প্যাডে এমবিবিএস, এমসিএইচ (ঢাকা), সিসিডি (বার্ডেম), সিএমইউ (ঢাকা) লেখা রযেছে।
২ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে পৌরসভার বালীগাঁও এলাকায় নয়ন কুমার চাকির চেম্বারে গিয়ে দেখা যায় চেম্বাটি বন্ধ আছে। বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড আর চোখে পড়ছে না। কিছু রোগী এসে নয়ন কুমার চাকির ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। এলাকাবাসীর বক্তব্য উপজেলা হাসপাতালের নাকের ডগায় কীভাবে এত বছর প্রতারণার নামে স্বাস্খ্য সেবা দিয়ে আসছিল ভুয়া ডাক্তার নয়ন কুমার চাকি?
চাকির সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে প্রতিবেদককে বলেন, আমি ঢাকায় একটি নতুন কোর্সে ভর্তি হয়েছি। তাছাড়া বাড়ির মালিক ঘর ছেড়ে দেয়ার জন্য বার বার তাগিদ দিচ্ছিল। তাই তড়িঘড়ি করে আমাকে চলে আসতে হয়েছে। বিএমডিসি নম্বর জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাম্বার আছে, তবে গোপনীয়।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মনজুর-ই-এলাহী প্রতিবেদককে বলেন, স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে বেসরকারী ক্লিনিকগুলোতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। চাকি কোন মেডিক্যাল থেকে পাশ করেছেন জানতে চাইতেই ভুয়া ডাঃ চাকি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের কথা বলেন। কোন সালে ও বিএমডিসি নম্বর কত জানতে চাইতেই বলে যে, স্যার নাম্বারটা এই মূহুর্থে আমার মনে নেই। বাসা থেকে এনে আপনার কাছে নিয়ে যাব। কিন্তু তাকে সময় দিয়ে কাগজপত্র চাইতেই তিনি রাতের আধাঁরে পালিয়ে যান।
দেশকণ্ঠ/আসো