দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : যুক্তরাষ্ট্রে ‘মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা’র সংক্রমণে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই ব্যক্তি দেশটির ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। মগজ খেকো এই অ্যামিবা নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নামে পরিচিত। শুক্রবার (৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের এক বাসিন্দা বিরল মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্লোরিডার শার্লট কাউন্টির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি সম্ভবত কলের পানি দিয়ে নাক পরিষ্কারের পর মস্তিষ্ক খাওয়া এই অ্যামিবাতে সংক্রমিত হন।
নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নামে পরিচিত এই অ্যামিবা নাক দিয়ে মস্তিষ্কে সংক্রমিত হয়ে থাকে। কর্মকর্তারা বলছেন, তবে পানির মাধ্যমে এটি পান করা বিপজ্জনক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রধান সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর তথ্য অনুসারে সংক্রমণ প্রায় সবসময়ই মারাত্মক। অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তারা নিহত ওই ব্যক্তির পরিচয় জানাতে পারেননি। বিবিসি বলছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার স্বাস্থ্য দপ্তর জানায়, একজন রোগী ‘সম্ভবত সাইনাস ধুয়ে ফেলার অভ্যাসের কারণে’ ট্যাপের পানির ব্যবহার করে সংক্রামিত হয়েছেন। আর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার অঙ্গরাজ্যটির স্বাস্থ্য সংস্থার একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
মুখপাত্র জে উইলিয়ামস বলেছেন, ‘এই সংক্রমণ কীভাবে ঘটেছে তা জানতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন’ একাধিক সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা। বিবিসি বলছে, অ্যামিবা সাধারণত সুইমিং পুল, হ্রদ এবং পুকুরের মতো উষ্ণ মিষ্টি পানিতে বাস করে। এটি নাক দিয়ে প্রবেশ করলে মানুষের মস্তিষ্কে গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে, তবে এটি সাধারণত মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে সেটিকে নিরাপদ বলেই মনে করা হয়। কারণ পাকস্থলীর অ্যাসিড একক কোষের এই অণুজীবকে মেরে ফেলে। অবশ্য যারা সংক্রমিত হন তারা প্রাইমারি অ্যামেবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিস নামে একটি রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব, বমি, বিভ্রান্তি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, খিঁচুনি এবং/অথবা হ্যালুসিনেশন।
সিডিসির তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর প্রায় তিনজন আমেরিকান এই অ্যমিবায় সংক্রামিত হয়। যাদের প্রায়শই মারাত্মক পরিণতির মুখে পড়তে হয়। ১৯৬২ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যামিবায় সংক্রামিত ১৫৪ জনের মধ্যে মাত্র চারজন বেঁচে ছিলেন। সিডিসির পরিসংখ্যান বলছে, শীতের মাসগুলোতে এই অ্যামিবার সংক্রমণ অবিশ্বাস্যভাবে বিরল। কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, সংক্রমণ এড়াতে লোকেদের তাদের নাকের ভেতরের অংশ অপরিশোধিত কলের পানি দিয়ে ধোয়া বা পরিষ্কার করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত বা ডিস্ট্রিল্ড পানি ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়া ট্যাপের পানিও ব্যবহার করা যেতে পারে যদি এটি কমপক্ষে এক মিনিট সিদ্ধ করা হয় বা ফোটানো হয় এবং ব্যবহারের আগে ঠান্ডা করা হয়। একইসঙ্গে সুইমিং পুলে সাঁতার বা গোসল করার সময় বা ঝর্ণার পানি ব্যবহার করার সময় নাকের ভেতরে পানি না দিতে লোকদের সতর্ক করা হয়ে থাকে।
দেশকন্ঠ/অআ