• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০৩:৪৯    ঢাকা সময়: ১৩:৪৯

বাংলাওয়াশের স্বপ্নপূরণ

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
অনেক বিষয়ে নাক সিটকানো ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে বাংলাওয়াশ করেই ছাড়ল বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ হারের প্রতিশোধটা টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিল সাকিব আল হাসানের দল। কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম সিরিজেই সাফল্য পেয়েছে লাল সবুজের দল। ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারের শোধটা কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে নিল ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে। অনেকের কাছে যা বাংলাওয়াশ।
 
অনেক অবজ্ঞা, অবহেলা আর না পাওয়ার জবাবটা যেভাবে দিল বাংলাদেশ, সেটি অনেকদিন মনে থাকবে ইংলিশদের। ২০১৬ সালের পর আবারো বড় সাফল্য পেল টি-টোয়েন্টি বিম্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে। এর আগে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। এবার সিরিজের শেষ ম্যাচে ইংলিশদের ১৬ রানে হারিয়ে বাংলাওয়াশের স্বাদ দিল টাইগাররা। যেকোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবার এমন কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ। কর্মব্যস্ত দিনেও মঙ্গলবার তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না মিরপুরের গ্যালারিতে। হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম ছেয়ে যায় লাল-সবুজে। 
 
অনেক আশা নিয়ে মাঠে আসা সমর্থকদের হতাশ করেননি সাকিবরা। বহুদিন পর আবারো শোনা গেল আতাহার আলির কণ্ঠে সেই ‘বাংলাওয়াশ’। টার্গেট তাড়া করতে নেমে লজ্জা এড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে বাটলার-মালানরা। তাদের ব্যাটে এক সময় ম্যাচটা ইংল্যান্ডের অনুকূলেই ছিল। তবে শেষ দিকে তাসকিনদের দারুণ বোলিংয়ে শেষটা রাঙাল বাংলাদেশই। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারীরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সল্টকে শূন্য রানে ফিরিয়ে ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি তার প্রথম উইকেট। অবশ্য ৫ রানে সল্টকে হারানোর পর মালান-বাটলারের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ইংলিশরা। বিশেষ করে ডেভিড মালান এদিন শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে জস বাটলারকে সঙ্গে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন পঞ্চাশ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথেই রাখেন এই ওপেনার। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ মালান সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। 
 
৪৩ বল খেলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি। এরপর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৫৩ রান করে মুস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। মালান ফেরার পরের বলেই রান আউটে কাটা পড়েন বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪০ রান। একই ওভারে দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে আবারও ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। বিপরীতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় ইংল্যান্ড। এরপর মঈন আলিকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ। ৯ রান করা এই অলরাউন্ডারকে মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান এই পেসার। একই ওভারের শেষ বলে বেন ডাকেটকে বোল্ড করেন তাসকিন। এর ফলে ২ উইকেটে ১০০ থেকে ১২৩ এ পৌঁছাতে আরও তিন উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য ৩১ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই স্যাম কারানকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর লেগের সারির ব্যাটাররা চেষ্টা করলেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি। 
 
এরপর শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান তোলে ইংল্যান্ড। রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১৬ রানের জয় পায় স্বাগতিকরা। এর আগে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে চট্টগ্রামে ৬ উইকেট এবং দ্বিতীয়টিতে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছিল সাকিব বাহিনী। এর আগে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তুর ব্যাটে বড় লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। যদিও চলতি ইংল্যান্ড সিরিজে ব্যাট হাতে ভালো সময় যাচ্ছিল না লিটন দাসের। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন এই ডান হাতি। এছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত করেছেন অপরাজিত থাকেন ৪৭ রান। এই দুই জনের ব্যাটে চড়ে ইংল্যান্ডকে ১৫৯ রানের বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার মিরপুর শেরে-ই বাংলা স্টেডিয়ামে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। শুরু থেকেই টাইগার দুই ওপেনারের ব্যাটে দারুণভাবে এগোতে থাকে দল। তবে দলীয় ৫৫ রানের মাথায় একবার জীবন পেয়েও ব্যক্তিগত ২৪ রান করে ফিরে যান রনি তালুকদার। 
 
এরপর তিনে নামা শান্তকে নিয়ে লড়তে থাকেন লিটন। অবশ্য অর্ধ-শতকের পরই ফিরে যেতে পারতেন লিটন তবে লিটনের সহজ সেই ক্যাচ ছেড়ে দেন বেন ডাকেট। এরপরই শুরু হয় লিটনের চার-ছক্কার ফুলঝরি। অন্যপ্রান্তে শান্তও ব্যাট চালাতে থাকেন। তবে লিটন থেমে যান ৭৩ রানের মাথায়, ক্রিস জর্ডানের বলে ক্যাচ আউট হয়ে। ১৩৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের দায়িত্ব নিতে মাঠে নেমে পড়েন সাকিব আল হাসান। তবে ব্যাট হাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক। এছাড়া ওপেনার রনি তালুকদার তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি।
 
শেষদিকে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের উপর যে প্রত্যাশা ছিল সেটি পূরণ হয়নি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে ফেরেন লিটন। ফিফটির পর দ্রুত রান তোলায় মনযোগী ছিলেন লিটন। তবে বেশি দূর এগোতে পারলেন না। ক্রিস জর্ডানের করা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে  ডিপ মিডউইকেটে সল্টের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। তার আগে ৫৭ বল খেলে ১০ চার এবং এক ছক্কায় ৭৩ রান করেছেন এই ওপেনার। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। সে সময় ১৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান। শান্ত তখনো উইকেটে ছিলেন ৩৪ রান নিয়ে। অপর অপরাজিত ব্যাটার সাকিবের সংগ্রহ ছিল মাত্র ১ রান। এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদারের জুটিতে পঞ্চাশ ছাড়ায় স্বাগতিকদের সংগ্রহ থাকলেও স্বস্তিতে ছিলেন না দুই ওপেনার। এলোমেলো ব্যাটিংয়ে বারবার পরান্ত হচ্ছিলেন। বেশ কয়েকবার সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় সফরকারীরা। 
 
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই যেমন আর্চারের বলে শর্ট থার্ডম্যানে রনির সহজ ক্যাচ মিস করেন রেহান আহমেদ। জায়গা থেকে নড়তেও হয়নি রেহানের। অনেক সময় পেয়েছিলেন, দুই হাতে নিয়েছিলেনও বল। কিন্তু শেষ সময়ে তালগোল পাকিয়ে মুঠো থেকে ফস্কে যায় ক্যাচ! তবে জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি রনি। উইকেটে থিতু হওয়ার পরও ইনিংস বড় করতে পারলেন না দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এই ওপেনার। আদিল রশিদের বলে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ২৪ রান। রনি দ্রুত ফিরলেও আরেক প্রান্তে ঝড় তোলেন লিটন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতেই ব্যর্থ ছিলেন এই ওপেনার। তবে শেষ ম্যাচে এসে খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন। ৪১ বল খেলে ৮ বাউন্ডারিতে অর্ধশতক পূরণ করেন লিটন।
 
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৫৮/২ [লিটন ৭৩, রনি ২৪, শান্ত ৪৭*, সাকিব ৪*; রশিদ ১/২৩।] 
ইংল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৪২/৬ [মালান ৫৩, বাটলার ৪০, ডাকেট ১১, ওকস ১৩*; তানভির ২-০-১৭-১, তাসকিন ২/২৬, সাকিব ১/৩০, মুস্তাফিজ ১/১৪।] 
ফল : বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী 
ম্যান অব দা ম্যাচ : লিটন কুমার দাস (বাংলাদেশ)
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।