• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০৩:৪২    ঢাকা সময়: ১৩:৪২

সাকিব-হাথুরু যুগলবন্দির নবসূচনা

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়ে সিরিজ জেতার পাশাপাশি হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ক্রিকেট কুলীন দেশটির বিপক্ষে এটাই সেরা সাফল্য। চারিদিকে একই আলোচনা, বদলে গেল বাংলাদেশ। পুরানো হাথুরু-সাকিবে নবসূচনায় উড়ছে বাংলাদেশ। দেখছে আগামীর বড় স্বপ্ন।
 
সর্বশেষ কয়েকটা সিরিজের মতো প্রায় একই দল নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলতে নামে সাকিব আল হাসানের দল। তাতেই যেন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। মাঠের বাইরে থেকে পুরো ব্যাপারটির কলকাঠি নেড়েছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আর মাঠে তা বাস্তবায়ন করেছেন সাকিব। এই দুজনের যুগলবন্দিতেই বড় সাফল্য পেয়েছে লাল সবুজের দলটি। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সিরিজেই পেলেন সাফল্য। অথচ সিরিজের শুরুতে কি কেউ ভেবেছিল, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইওয়াশ করবে বাংলাদেশ? ওয়ানডে সিরিজ হারের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বপ্নটা ছিল আকাশছোঁয়া। অথচ সেই আকাশসমান স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে টাইগাররা। ৩ ম্যাচের সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন সাকিব, লিটন, নাজমুল, তাসকিনরা। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই দুর্দান্ত খেলে জশ বাটলারদের পরাস্ত করেছেন সাকিবরা। 
 
সিরিজের তিন ম্যাচেই সহজ জয় তুলে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচ ৬ উইকেটে, দ্বিতীয় ম্যাচ ৪ উইকেটে এবং তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ ১৬ রানে জিতেছে। বাংলাদেশ এই প্রথম কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করেছে। বাটলারের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচ জয়ের বিরল রেকর্ডও গড়েছে টাইগাররা। স্বপ্নের এই পারফরম্যান্সের কুশীলবরা হলেন নাজমুল, লিটন, তাসকিন, মুস্তাফিজরা। তবে নেপথ্যের কারিগর কিন্তু একজন, চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। তার সহযোদ্ধা টাইগার অধিনায়ক সাকিব। হাতুরাসিংহেকে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় সমালোচকরা সমালোচনায় এফোর-ওফোর করেছিলেন ক্রিকেট বোর্ডকে। শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভুত হাতুরাসিংহের মেজাজ নিয়ে নানান কথা প্রচলিত ছিল ২০১৪-২০১৭ সালের প্রথম মেয়াদে। এবার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কথার পুনরাবৃত্তিও হয়েছে। কিন্তু দারুণ টেকনিক্যাল কোচ হাতুরাসিংহে দায়িত্ব নেওয়ার পর পাল্টে গেছে সবকিছু। 
 
একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে গড়া দলকে আত্মবিশ্বাসী করেছেন স্বাধীনভাবে খেলার রসদ জুগিয়ে। দায়িত্ব নেওয়ার পর হাতুরাসিংহে বলেছিলেন, ‘আমি জাদুকর নই। মাঠে যা করার করবে খেলোয়াড়রা। আমি তাদেরকে পেছন থেকে পরামর্শ দিতে পারি।’ অথচ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ৪ জয় পরিষ্কার করেছে, হাতুরাসিংহে একজন সত্যিকারের জাদুকর, সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরেও সাকিব আল হাসানের ব্যস্ততা যেন ফুরোয় না। সোমবার ঝটিকা সফরে জন্মস্থান মাগুরা থেকে ঘুরে এসেছেন। মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তার আগে ফেসবুকে জানিয়ে রেখেছিলেন, ১৫ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে বিজ্ঞাপনের কাজ। ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে সংবাদ সম্মেলন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব তাই কম কথায় দলের সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যা করলেন। যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পছন্দ করা সাকিব জানিয়েছেন, এই সাফল্যের পিছনে বিপিএল, অসাধারণ ফিল্ডিং ও আত্মবিশ্বাসের ভূমিকা আছে। 
 
বাংলাওয়াশ করা ম্যাচ শেষে বাঁ-হাতি স্পিন অলরাউন্ডার সাকিব বলেছেন, ‘টি টোয়েন্টি সিরিজে যারা খেলেছে তারা বিপিএলে পারফর্ম করেছে। বিপিএল ভালো খেলায় প্রভাব রেখেছে, কারণ খুব বেশি গ্যাপ যায়নি। এখানে যারা খেলেছে পাঁচ-ছয়জন বিপিএলের টপ রান স্কোরার। সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া বোলাররা বল করেছে। ভেতরে থাকা ওই আত্মবিশ্বাস সাহায্য করেছে।’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দল সেটেলড হলেও টি-টোয়েন্টি দল পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। নতুন মুখ আসছে। জয়ের পেছনে সেটারও ভূমিকা দেখছেন সাকিব। তবে সিরিজ জিতবেন কিংবা ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করবেন এমনটি ভাবেননি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি, ‘সিরিজ শুরুর আগে জিততে হবে এমনটা কেউ চিন্তা করেনি। তিন ম্যাচেই আমার মনে হয়, অসাধারণ ফিল্ডিং হয়েছে।’ সাকিব জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ থেকেই যে কোন বড় দলের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্ধীতা করার সাহস জন্মেছে তাদের মধ্যে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি- দুই ফরম্যাটের ক্রিকেটেই ইংল্যান্ড এখন চ্যাম্পিয়ন। বিশ্ব ক্রিকেটের এই পরাশক্তির দলটিকে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ তে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। এর আগে ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া হলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ইতিহাস গড়েছেন সাকিবরা।
 
প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে প্রতিটি ম্যাচেই জয় তুলে নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন তারা। এ সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকায় ছিলেন কোচ হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এই দুজনের রসায়নেই ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজে ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাই করার পর আমাদের সময়কে এমন কথাই বলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান এবং সাবেক পেসার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। তবে সাবেক অধিনায়ক ও জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার মনে করেন, দলীয় ঐক্যবদ্ধ পারফরম্যান্সে এ সাফল্য এসেছে। টি-টোয়েন্টির এ সাফল্যের পেছনে মূলত তিনটি কারণ ছিল বলে মনে করেন রকিবুল হাসান।
 
 
 
প্রথমত, কোচ হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিবের রসায়ন কাজে দিয়েছে। সাকিব প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মধ্যে আস্থাটা তৈরি করতে পেরেছেন। ড্রেসিংরুমের বাইরে ও ভেতরে সব জায়গায় কাজ করেছেন অধিনায়ক। তিনি নিজে নেটে দাঁড়িয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছেন, ব্যাটিং দেখেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে গত পরশু আরেকটি জয়। আর তাতেই প্রতিপক্ষকে আরেকটি ধবলধোলাই করার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ। এতদিন পর্যন্ত বিপক্ষ দলকে বাংলাদেশের হোয়াইট ওয়াশ করার সবচেয়ে বেশি সাফল্য ছিল এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে। ওয়ানডেতে তাদের এই অর্জন ১৬ বার। টি-টোয়েন্টি ফরমেটে টাইগারদের বিগত দিনগুলোতে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে। তিনবার এই অর্জন জিম্বাবুয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। অথচ এই সংস্করণে অবস্থান সবচেয়ে নড়বড়ে ছিল, এবার সেই টি-টোয়েন্টিতেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েই হোয়াইটওয়াশ করা। 
দেশকণ্ঠ/আসো
 
 
 
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।