দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে থাকলেও বাদ পড়েন টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল থেকে। এরপরই টানা ৩ ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়ে লাল সবুজের দল। ইংলিশদের প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাওয়াশ করে সাকিব আল হাসানের দল। অথচ এই দলে থাকতে পারতেন রিয়াদও। কিন্তু সুযোগ পেয়েও পারফর্ম করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে দলের বাইরে রাখা হয়েছে। সামনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও তার না থাকার সম্ভাবনাই বেশি ছিল, হয়েছেও তাই। তাইতো অনেকেই বলছেন এটা রিয়াদের শেষের শুরু। সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো করতে পারেননি মিডল অর্ডার এই ব্যাটার। তবে আসন্ন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নেই টাইগারদের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। ধারণা করা হচ্ছে তাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। রিয়াদের অনুপস্থিতিতে অবশ্য কপাল খুলেছে জাকির হাসানের। মাস কয়েক আগেই টেস্ট অভিষেক হওয়া এই ক্রিকেটার প্রথমবারের মতো রঙিন পোশাকের দলে জায়গা পেলেন।
গত সিরিজের দল থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়াও বাদ পড়েছেন তাইজুল ইসলাম। ইংলিশদের বিপক্ষে দীর্ঘদিন পর ওয়ানডে দলে ফিরলেও এবার জায়গা ধরে রাখতে পারলেন না এই বাহাতি স্পিনার। দলে ফিরেছেন ইয়াসির আলি রাব্বি। আগামী ১৮, ২০ ও ২৩ মার্চ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে আইরিশদের ৩টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দুই ওয়ানডে শুরু হবে দুপুর দুইটায় এবং শেষ ওয়ানডে হবে আড়াইটায়। এরপর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ৩টি অনুষ্ঠিত হবে ২৭, ২৯ ও ৩১ মার্চ। ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, যা শুরু হবে দুপুর দুইটায়। এ ছাড়া আগামী ৪ এপ্রিল থেকে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি। আইরিশদের তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্ব দেবেন অ্যান্ড্রু বালবার্নি। সিরিজ শুরুর আগে বুধবার একটি ওয়ার্ম-আপ ম্যাচও খেলার কথা আছে আইরিশদের। এদিকে রিয়াদের দলে না থাকা নিয়ে মুখ খুলেছেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে রিয়াদের বিষয় নিয়ে বাশার জানালেন বিশ্রামে রাখা হয়েছে তাকে। রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছে কি না এই প্রসঙ্গে বাশার বলেন, ‘ব্যাপারটা আসলে কিছুই না। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেখানে ব্যাটিং করছেন সেখানে আমাদের দুই-একজন বিকল্প আছে দেখার মতো। এজন্য বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, আর কিছু না। ব্যাটিং অর্ডারটা আমরা দেখতে চাচ্ছি, ১-৪ আমাদের নতুন কাউকে দেখার সুযোগ নেই। ছয়-সাত এই জায়গায় দেখার একটু সুযোগ আছে। আমরা তাকে আবারও দলে নিতে চাই।’
এদিকে পরবর্তী যে কোন সিরিজে রিয়াদ ফিরবেন কি না এমন প্রশ্নে বাশার বলেন, ’আমার মনে হয় আমরা এই সিরিজটা নিয়েই থাকি। আপাতত আমরা এই সিরিজটা নিয়ে চিন্তা করছি। এই সিরিজটা দলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পরের সিরিজের আগেই আমরা এটা নিয়ে ভাববো। এই মুহূর্তে আমরা যেটা করেছি সেটা নিয়েই থাকি।’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পরীক্ষিত খেলোয়াড় তার প্রমাণ করার কিছু নেই সেটাও জানিয়ে রাখলেন বাশার। পরিসংখ্যান মতে সময়ের হিসাবে ১৫ বছর ৭ মাস ১২ দিন। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। প্রায় ১৬ বছর ‘আনসাং হিরো’ হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন এই ডানহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার এখন শেষলগ্নে। একটি একটি ফরম্যাট থেকে বাদ পড়তে পড়তে তিনি এখন অতল গহ্বরে। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলেও তার জায়গা হয়নি, দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম। এই বিশ্রাম যে দীর্ঘমেয়াদের সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে ভালোই চলছিল রিয়াদের ক্যারিয়ার। মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে সত্যিকারের একজন লড়াকু সৈনিক হয়ে উঠছিলেন সাবেক টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
ভক্তরা তাইতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ নাম দিয়েছেলেন। এই নামটা অবশ্য তার সঙ্গে খুব একটা বেমানান নয়। ক্যারিয়ারে অনেক বড় বড় জয়ে অবদান রাখলেও কখনোই আলোয় ছিলেন না তিনি। নীরবেই সবার অলক্ষে নিজের কাজটুকু ঠিকঠাক করে গেছেন। দলের বিপদে ইনিংস মেরামত করায় মাহমুদউল্লাহর জুড়ি ছিলো না। তার ভক্তরা তাইতো তাকে ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসেবে ডাকতেন। কিন্তু সেইসব এখন সুদূর অতীত। প্রথমে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলছিলেন সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাটে। কয়েক টেস্ট বিরতির পর দলে ফিরে প্রত্যাবর্তনটা সেঞ্চুরিতে রাঙিয়েছিলেন। কিন্তু রাগে-ক্ষোভে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণাই দিয়ে দিলেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। এরপর নিয়মিত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলছিলেন তিনি। ২০ ওভারের ক্রিকেটের অধিনায়কও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু হতশ্রী পারফরম্যান্সের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি দলের জায়গাও হারাতে হয়েছে তাকে।
মুশফিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেও রিয়াদ ফেরার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। কিন্তু ফেরার প্রথম চ্যালেঞ্জেই সর্বশেষ বিপিএলে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স এসেছে তার ব্যাট থেকে। এবার জায়গা হারালেন ওয়ানডে দল থেকে। যদিও বিসিবি বলছে রিয়াদের বিকল্পের খোঁজেই অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে! কিন্তু বাস্তবতা বলছে, তার এই বিশ্রাম আজীবনের জন্যই! ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি করে নিজের নামটা রেকর্ড বুকে তোলার পরও তিনি পার্শ্বনায়ক হয়েই আছেন। এছাড়া আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে তোলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। এমন অনেক বড় বড় জয়ে অবদান রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ওয়ানডে ফরম্যাটে দলের জয়ে খুব একটা অবদান রাখতে পারছেন না। ম্যাচ ফিনিশ করার যে দায়িত্ব ছিলো, সেই দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করতে পারছিলেন না তিনি। দেখার বিষয় এখন আদৌ ফিরতে পারবেন কি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। না কি শেষের শুরুর যে ধারনা করা হয়েছিল সেটাই ঠিক।
দেশকণ্ঠ/আসো