মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : সর্বোচ্চ রান করা থেকে শুরু করে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ৩৩৮ রান করে ১৮৩ রানের রেকর্ড জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। তাসকিন-এবাদতদের তোপের মুখে ১৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় এটি। ৩৩৯ রানের পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে নেমে ধীরগতির ব্যাটিংয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে আয়ারল্যান্ড। দুই আইরিশ ওপেনার স্টিফেন ধোয়েনি ও পল স্টার্লিংকে দুই প্রান্ত থেকেই চেপে ধরেন তাসকিন-এবাদত-মুস্তাফিজরা। প্রথম ছয় ওভারে সফরকারীরা কোনো উইকেট না হারালেও স্কোরবোর্ডে তুলে ২৩ রান। আর তাতে আইরিশদের প্রয়োজনীয় রান রেইট বেড়ে দাঁড়ায় ৭ এর ওপরে। শুরুর সেই চাপ কমাতে এরপর আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেন দুই আইরিশ ওপেনার। কাউন্টার অ্যাটাকে কিছুটা হলেও সাফল্য পেয়েছেন তারা। ৬০ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ৭৬ রান তুলতেই সাজঘরে টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটার। ১৬ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে আইরিশরা যখন ধুঁকছে তখন দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলার চেষ্টা করেন জর্জ ডকরেল ও কুর্টিস ক্যাম্পার।
ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজনে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ৩০.৫ ওভারেই অলআউট হয়ে যায়। বলা যায় বাংলাদেশের রান পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে যায় সফরকারীরা। সুযোগ পেয়েই ৪২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেন পেসার এবাদত হোসেন। এছাড়া তাসকিন আহমেদ ১৫ রানে ২, নাসুম আহমেদ ৪৩ রানে ২ ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ২৩ রানে ১ উইকেট লাভ করেন। অভিষেক ম্যাচে ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলার সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার লাভ করেন তৌহিদ হুদয়। আগামীকাল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
এর আগে সাকিব-হৃদয়ের ব্যাটে রেকর্ড সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। অভিষেকেই রেকর্ড গড়লেন তৌহিদ হৃদয়। সাজঘরে ফেরার আগে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন এই তরুণ ব্যাটার। হৃদয়-সাকিবের জোড়া ফিফটিতে সিলেটে রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসেই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করেছে এদিন টাইগাররা। টসে হেরে শুরুতে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। যেখানে ৯৩ রানের দুর্দান্ত আর লড়াকু এক ইনিংস খেলেছেন সাকিব। আর অভিষক্ত হৃদয়ের ব্যাট থেকে এসেছে ৯২ রান। শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। যদিও শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি স্বাগতিক দলের।
ব্যক্তিগত ৩ রানের মাথায় আইরিশ পেসার মার্ক অ্যাডায়ারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ওপেনার তামিম ইকবাল। এরপর শুরুর সেই চাপ কিছুটা সামলে নেন লিটন দাস এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে দলীয় ৪৯ রানের সময় সাজঘরে ফেরেন লিটনও। কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে পল স্টার্লিংয়ের হাতে তালুবন্দী হওয়ার আগে তিনি ৩১ বলে ২৬ রান করেছেন। এরপর দলেকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান সঙ্গে থাকেন শান্ত। তবে বেশিদূর এই জুটি এগোতে পারেনি। দলীয় ৮১ রানে শান্ত সাজঘরে ফেরেন ব্যক্তিগত ২৫ রান করে। তখনও অপরপ্রান্তে অবিচল ব্যাট হাতে সাকিব। এরপর ক্রিজে আসেন অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়। সাকিবকে নিয়ে গড়েন বড় জুটি। এদিনই সাকিব ওয়ানডেতে নিজের ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
অন্যপ্রান্তে অভিষিক্ত হৃদয়ও দারুণ খেলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক। যদিও দুজনের সামনেই সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও কেউই পারেননি ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে। ৯৩ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে ইয়র্কার ধরনের ডেলিভারি করেছিলেন গ্রাহাম হিউম। দূর থেকেই খেলার চেষ্টা করলেন সাকিব। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে গেল কিপার লরকান টাকারের হাতে। আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত জানাতেই ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা ধরলেন সাকিব। এই অলরাউন্ডারের বিদায়ের পরই মারমুখী হতে থাকেন হৃদয়। অন্যপ্রান্তে মুশফিুকর রহিম খেলেন টর্নেডো এক ইনিংস। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকান অভিজ্ঞ এই টাইগার ক্রিকেটার। যদিও শেষ পর্যন্ত অর্ধশতক তোলার আগেই বিদায় নেন মুশফিক। ২৫ বলে ৪১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। তখনও ব্যাট হাতে লড়ছিলেন হৃদয়। অবশ্য অভিষেকে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও তা আর পাওয়া হল না।
বলা যায় নেহায়েত কপাল মন্দ! সাকিবের মতো নার্ভাস নাইন্টিতে কাটা পড়েন তরুণ এ ব্যাটারও। গ্রাহাম হিউমের করা ৪৬তম ওভাররের পঞ্চম বলটি গুড লেন্থে পড়ে লেগ স্ট্যাম্প বরাবর আসছিল, সেখানে ঘুরে দাঁড়িয়ে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে লফটেট শট খেলতে চেয়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু ব্যাটে-বলে কোনো রকম সংযোগই হয়নি, তাতে বল সরাসরি তার উইকেটে আঘাত হানে। শেষপর্যন্ত ৯২ রানে বোল্ড হয়েই থেমে যায় হৃদয়ের ইনিংস, দলের রান তখন ২৯৭। এরপর দলের হয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন ইয়াসির আলি রাব্বি। যদিও অন্যপ্রান্তে তাসিকন আহমেদ ফিরে যান ১১ রান। এরপর রান আউটে কাটা পড়ে রাব্বি ফেরেন ১৭ রান করে। নাসুম আহমেদ থাকেন ১১ রানে অপরাজিত। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান করে বাংলাদেশ। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকেই টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল তৌহিদ হৃদয়ের। এবার সপ্তাহ তিনেকের ব্যবধানে পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যাপ। আর অভিষেকটা তিনি রাঙালেন বড় হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। যদিও সাজঘরে ফিরেছেন সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা সঙ্গী করে।
বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে এটাই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি ছিল নাসির হোসেনের দখলে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এই অলরাউন্ডার। এবার তাকে সরিয়ে শীর্ষে উঠে গেলেন হৃদয়। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওয়ানডে জার্সিতে ১৪০তম ক্রিকেটার হৃদয়। এই সংস্করণের ক্রিকেটে সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে অভিষেক হয়েছিল ইবাদত হোসেনের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে নামার আগে তাকে অভিষেক ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ২০২০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের একাদশে ছিলেন হৃদয়।
দেশকণ্ঠ/আসো