দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার নামটি এখন ইতিবাচক ও নৈতিবাচক, সবখানেই উচ্চারিত হচ্ছে। বিশ্ব ফুটবল, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক থেকে শুরু করে অনেক আসরেই আর খেলার সুযোগ নেই উত্তর ইউরোপের দেশটির। সেটা জাতীয় দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে বয়সভিত্তিক দল এর আওতামুক্ত রয়েছে। সে কারণে প্রথমবারের মতো সাফ অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবলে খেলছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশটি। সে কারণে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাশিয়া। সময়ের হিসেবে ৩০ বছর পর বাংলাদেশে কোন টুর্নামেন্টে খেলছে পারমানবিক শক্তি সমৃদ্ধ দেশটি। ১৯৮৭ সালে পঞ্চম প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ ফুটবলে অংশ নিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ফাকেল ভরজেনহ। সেই আসরে বাংলাদেশ সাদা দলকে ৫-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয়ে দেশে ফিরেছিল রুশ দলটি। এপর ১৯৯৩ সালে সপ্তম প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে অংশ নিয়েছিল ভেঙে যাওয়া রাশিয়ার ক্রিলিয়া সভেতভ সামারা ক্লাবটি। তিন দশক পর আবার রাশিয়ার কোনো দল বাংলাদেশে এসেছে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে, সেটি সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে, অতিথি দল হয়ে।
আলোচনার রসদ যোগাচ্ছে এই বিষয়টি। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে ফিফা থেকে নিষিদ্ধ রাশিয়া। তারপরও সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছে রাশিয়ার বয়সভিত্তিক দলটি। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার লক্ষ্য নির্ধারণ করে এসেছে ইউরোপের দেশটি। টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্ট-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার কোচ ইয়েলেনা মেদভেদ বলেন, যে কোন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া প্রতিটা দলই চায় চ্যাম্পিয়ন হতে, অবশ্যই আমরাও চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাশিয়া নিয়ে যেতে চাই।’ কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে পাঁচ দলের এই টুর্নামেন্ট। আসরের প্রথমদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ভুটানের বিপক্ষে স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং তার আগে সোয়া ৩টায় দিনের প্রথম ম্যাচে ভারত ও নেপাল একে অপরের মোকাবেলা করে। আগামীকাল মাঠে নামবে অতিথি দল হিসেবে অংশ নেওয়া রাশিয়া। আাগমীকাল দুপুর সোয়া তিনটায় বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে রাশিয়া।
এই ম্যাচটাকে তাই পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মানেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মিলনমেলা। মেয়েদের বয়সভিত্তিক সাফে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতায় আছে বাংলাদেশের। এবারই প্রথম নারী সাফে অংশ নিচ্ছে ইউরোপিয়ান কোনো দেশ। টুর্নামেন্টে খেলতে গত শনিবার ঢাকায় পা রেখেছেন রাশিয়ান মেয়েরা। রুশকন্যাদের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়েই যত আগ্রহ লাল-সবুজের দলটির। ঢাকায় খেলতে আসলেও বাংলাদেশ নিয়ে তেমন কিছুই বলতে পারলেন না রাশিয়ান কোচ, ‘বাংলাদেশ দল সম্পর্কে কিছু বলা খুবই কঠিন আমাদের কাছে। কারণ এই দল সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’ মেদভেদ যোগ করেন, ‘আমাদের দলের জন্য চমৎকার টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে। এশিয়া অঞ্চলে আমরা কখনোই কোন টুর্নামেন্টে অংশ নেইনি। এমন টুর্নামেন্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম।’ ঢাকার ট্রাফিক নিয়ে কোচের মন্তব্য, ‘অনেক মানুষ এবং এখানে অনেক ট্রাফিক জ্যাম। সময় মেনে অনুশীলনে যাওয়া এবং ম্যাচে অংশ নেয়াই আমাদের এখন কাজ। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি।’
দুই মাস আগে এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণপত্র পেয়ে তুরস্কে অনুশীলন ক্যাম্প করেছে রাশিয়া। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে তারা। ঢাকার টুর্নামেন্টে রাশিয়া ছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দল রয়েছে। সাফে সব সময় ভারত, নেপাল কিংবা ভুটানের বিপক্ষে খেলে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু এবারই প্রথম রাশিয়ার সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশের কিশোরীরা। এবার তাদের নতুন প্রতিপক্ষ রাশিয়া হওয়ায় দেশটির ফুটবলারদের ঘিরেই বাংলাদেশ দলের যত আগ্রহ। টুর্নামেন্টে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান ছাড়াও অংশ নিচ্ছে ইউরোপের প্রতিনিধি রাশিয়া। উদ্বোধনী দিনে ভুটানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ২২ মার্চ রাশিয়া, ২৪ মার্চ ভারত ও ২৮ মার্চ স্বাগতিকদের শেষ প্রতিপক্ষ নেপাল। টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে নতুন প্রতিপক্ষ রাশিয়াকে নিয়েই বাংলাদেশ দলের কোচ ও অধিনায়ককে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। স্বাগতিক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় যে স্ট্যান্ডার্ডে খেলে থাকি সেই তুলনায় ইউরোপের স্ট্যান্ডার্ড তো এক নয়। রাশিয়ার বিপক্ষে খেললে অবশ্যই আমরা কোন স্ট্যান্ডার্ডে আছি, তা বেরিয়ে আসবে। তবে এখানে আমাদের ভালো দিক, মেয়েরা যে প্রতিনিয়ত পারফর্ম করছে, আমাদের কোথায় উন্নতি হয়েছে এবং ভালো টিমগুলোর সঙ্গে খেলতে গেলে কোথায় উন্নতি করা উচিৎ, তা ভালোভাবে জানতে পারবো’।
চ্যাম্পিয়ন কোচ আরও বলেন, ’তবে ইউরোপের একটা দলের বিপক্ষে খেলবো-এটা ভেবে মেয়েরা শিহরিত। কিন্তু তারা চাপ অনুভব করছে না। দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর বিপক্ষে খেলে অভ্যস্ত আমরা। এবার রাশিয়া যোগ হয়েছে, এটা আমার মেয়েদের জন্য বিরাট সুযোগ বলে মনে করি। তারা অনেক কিছু শিখতে পারবে। বিরাট সুযোগ এই কারণে, আমরা ইউরোপের দলের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি। তারা শক্তিশালী। আমাদের মেয়েরাও প্রস্তুত তাদের বিপক্ষে লড়াই করার জন্য। যেটা সব সময়ই লক্ষ্য থাকে ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো খেলা এবং জয় পাওয়া। আগের টুর্নামেন্টগুলোতে আমরা যা করে আসছি, আশা করি তা করার জন্য সবাই প্রস্তুত আছে।’ নতুন প্রতিপক্ষ হলেও বাংলাদেশ অধিনায়ক রুমা আক্তার জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘লক্ষ্য আছে ভালো কিছু করার, সবগুলো ম্যাচ জেতার। আপনারা দোয়া করবেন। রাশিয়া ইউরোপের দল। ওদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আশা করছি, ভালো কিছু করবো।’
দেশকণ্ঠ/আসো