মৃণাল কুমার বন্দ্য : বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নির্বাচিত সেক্রেটারি জেনারেল ঢাকা থিয়েটার’র জ্যেষ্ঠ সদস্য কামাল বায়েজীদকে নিয়ে ফেডারেশনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলেছে দীর্ঘদিন। এক পর্যায়ে ফেডারেশন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় কামাল বায়েজীদকে। সাধারণ নাট্যকর্মী থেকে শুরু করে নাটকপাড়ায় চলছে বেশ আলোচনা- সমালোচনা। কামাল বায়েজীদকে ফেডারেশন থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রতিবাদে দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল ঢাকা থিয়েটার ফেডারেশন থেকে তাদের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। গত ২২ মার্চ এই মর্মে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী বরাবর লিখিত আকারে এই প্রত্যাহারপত্র প্রদান করা হয়। আর এই খবর গতকাল প্রকাশ্যে আসে দলটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফের দেয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। যদিও এ সংক্রান্ত একটি গুঞ্জন নাটক পাড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ প্রত্যাহারের ঘোষণায় মূলত নাটকপাড়ায় স্পষ্ট বিভক্তি তৈরি হলো।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী একই সাথে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। লিয়াকত আলী লাকী বরাবর পাঠানো এই চিঠিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নাসির উদ্দীন ইউসুফ জানান, অত্যান্ত বেদনার সাথে জানাচ্ছি যে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’ ফেডারেশনের নির্বাচিত সেক্রেটারি জেনারেল ও ঢাকা থিয়েটার’র জেষ্ঠ সদস্য কামাল বায়েজীদকে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটি অগঠনতান্ত্রিকভাবে তার পদ থেকে অব্যহতি দেয়ার প্রতিবাদে ফেডারেশন থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এই পদত্যাগ বেদনার এবং কষ্টের। কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমাদের আদর্শ। যে ফেডারেশনের জন্মের সাথে ও দীর্ঘ চার দশকের কর্মকান্ডের সাথে ঢাকা থিয়েটার ওতপ্রোতভাবে জড়িত সে ফেডারেশনে ত্যাগ করা সত্যিই কঠিন সিদ্ধান্ত বটে।‘
এর আগে ১৪ এপ্রিল ২০২২ আরও একটি চিঠি দেয়া হয়েছিলো উল্লেখ্য করে বলেন, ১৪ এপ্রিল ২০২২, ঢাকা থিয়েটারর পক্ষে আমি আপনার বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করে জানাই যে কামাল বায়েজীদকে সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি। তাই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবচনা করার অনুরোধ করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবী জানাই। একই সাথে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে কামালের বিরুদ্ধে আনীত তহবিল তশরুফের মত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবীও জানাই। ঢাকা থিয়েটারে দীর্ঘ ৪৬ বছর নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালে কামাল বায়েজীদকে কোন প্রকার অর্থনৈতিক দূর্নীতি করতে আমরা দেখিনি। তাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস কামাল বায়েজীদ তহবিল তশরুফের মত ঘৃণ্য কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারেনা। প্রস্তাবিত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি কর্তৃক যদি কামাল বায়েজীদ দোষী সাব্যস্ত হয় তবে ঢাকা থিয়েটার ফেডারেশনের যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি আমাদের পত্রের কোন সন্তোষজনক উত্তর আমরা পাইনি।আমি একাধিক বার আপনার সাথে সংকট নিরসনে কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।একজন নির্বাচিত সেক্রেটারি জেনারেলকে কেন্দ্রীয় কমিটি নয় জাতীয় কাউন্সিল অব্যহতি দিতে পারে একথা জানিয়ে বিষয়টি সম্মেলনের সময় সম্মানিত কাউন্সিলারদের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেবার প্রস্তাব করি। কিন্তু সে বিষয়ে ফেডারেশনের কোন সাড়া পাইনি। সর্বশেষ এশিয়ান বাইনিয়াল চলাকালীন আমি ও আপনি একটি বৈঠকে মিলিত হই এবং কামালের উপর যে শাস্তি আরোপ করা হয়েছে তা প্রত্যাহার না করে স্থগিত করে তদন্তের ব্যবস্থা করতে আপনাকে অনুরোধ করি। সবদিক বিবেচনা করে ঢাকা থিয়েটার তার পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত ‘প্রত্যাহার থেকে পিছিয়ে এসে ‘স্থগিত’ করার আহ্বান জানায়। তারপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে সংকট নিরসনে কোন প্রকার উদ্যোগ ফেডারেশন নেয়নি। এমত অবস্থায় প্রায় চারযুগের পরিক্ষীত নাট্যকর্মী কামাল বায়জীদের সম্মান,সামাজিক মর্যাদা রক্ষা ও কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকা থিয়েটার ফেডারেশনের সদস্যপদ প্রত্যাহারের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।‘
উল্লেখ্য, এই সংকট সমাধানের জন্য উদ্যোগী হয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা-নির্দেশক আসাদুজ্জামান নূর ও নাট্যকার-নির্দেশক-অভিনেতা মামুনুর রশিদ ফেডারেশনের সঙ্গে তৎপরতা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। এরপর আরও বেশ ক’টি উদ্যোগও সমস্যা সমাধানে কাজে লাগেনি। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন কিংবা লিয়াত আলী লাকী্র কাছ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেশকণ্ঠ/আসো