দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচও জিতেছে বাংলাদেশ। বুধবার ২৯ মার্চ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করতে চায় লাল সবুজের দেশটি। বৃষ্টির বাগড়ার আগে ২০৭ রান করে সাকিব আল হাসানের দল। এরপর স্বাগতিক দলের ইনিংস আর শেষ হয়নি ভারী বৃষ্টির কারণে। এরপর যখন খেলা শুরু হয় তখন ৮ ওভারে আয়ারল্যান্ডের টার্গেট দাড়ায় ১০৪। প্রতি ওভারে প্রয়োজনীয় রান উঠিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখা সফরকারীদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেন তাসকিন আহমেদ। ৮১ রানে আইরিশদের ইনিংস শেষে বাংলাদেশ জয় পায় ২২ রানের ব্যবধানে। বলা যায় বেশ দাপুটে ক্রিকেটই খেলেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শীষ্যরা। দলের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর সেটা হয়েছে এই প্রধান কোচের হাত ধরে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করেছেন এই লংকান। বাংলাদেশের প্রধান কোচ একদিন আগে জানিয়েছেন ড্রেসিং রুমে মানসিকতা বদলের বীজ বুনছেন। আর তাতেই সাফল্য ধারাবাহিক হতে শুরু করেছে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে তাসকিন আহমেদ জানালেন ব্যর্থতার ভয় কাটাতে সাহায্য করছেন হাথুরু। টাইগারদের প্রধান কোচ নিজের নতুন মেয়াদ শুরু করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হার দিয়ে। সিরিজ হারলেও এক জয়ের বিপরীতে হারা ম্যাচগুলোতেও লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজেতো ইংলিশদের কোনো ম্যাচই জিততে দেয়নি সাকিব আল হাসানের দল। টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা হয়েছে হোয়াইট ওয়াশ (৩-০)। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জয় এসেছে হেসেখেলে। ব্যাটে-বলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দাপুটে পারফরম্যান্স দেখা গেছে। গত সোমবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও আধিপত্য দেখিয়ে জিতেছে স্বাগতিকরা। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন জানালেন হাথুরুসিংহে সহ পুরো টিম ম্যানেজম্যান্ট ড্রেসিং রুমে কি বার্তা দিচ্ছেন। আর হাথুরুসিংহে ক্রিকেটারদের কোন ভয়টা দূর করছেন? এমন প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন তাসকিন।
দারুণ ফর্মে থাকা ডানহাতি এই পেসার বলেন, ’মাঠে ভাল খেলার পাশাপাশি ড্রেসিংরুমের পরিবেশটাও ভাল রাখতে হয়। আসলে ফেয়ার অব ফেইলরের ভয়টা আটকে ছিল। ফ্রি ক্রিকেট খেলতে বলা হচ্ছে, প্রত্যেকটা টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে। সবাই সাপোর্ট করছে। ম্যানেজমেন্ট থেকেও ফ্রিডম দেওয়া হচ্ছে। এক্সিকিউশনে করতে দ্বিধাদ্বন্ধ না থাকি, কারণ স্বাধীনভাবে যেন খেলি। উজাড় করে। এই গেমটা আনতে মাঠের মধ্যে, অ্যাগ্রেসিভ ক্রিকেট’। এদিকে দুর্দান্ত জয়ের পর যা বলেন সাকিব আল হাসান সেটা অনেকদিন থেকে শোনেনি বাংলাদেশ। বিশ্বসেরা বাহাতি অলরাউন্ডারের নেতৃত্বে আরো একটি ম্যাচে জয় পেল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বৃষ্টি আইনে নূন্যতম ব্যবধানে জয় পায় টাইগাররা। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপুটে ব্যাটিং করে টাইগার দুই ওপেনার লিটন দাস এবং রনি তালুকদার। যে কারণে ম্যাচ শেষে দুই ওপেনারকে নিয়ে অধিনায়ক সাকিবের কন্ঠে ঝরেছে প্রশংসার বাণী।
সাকিব বলছিলেন, ‘প্রতিটা ম্যাচে আমরা এটাই চাই। এক বা দুজনের সবসময় অবদান রাখা কঠিন, এরকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্সই দরকার। তারা (লিটন-রনি) যেভাবে ইনিংস উদ্বোধন করেছে। ম্যাচের গতি ঠিক করে দিয়েছে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটও খেলেছে’। এদিকে তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদরা করেছেন দুর্দান্ত বোলিং। শুরুর দুই ওভারে বেশ খরুচে ছিলেন নাসুম ও মুস্তাফিজ। এরপর বল হাতে তুলে নিয়ে আইরিশ ব্যাটারদের তোপের মুখে ফেলেছিলেন হাসান। এরপর সময় যত গড়িয়েছে ততই তাসকিন আগুনে পড়ে কাবাব হয়েছে আইরিশ ব্যাটাররা। এই বোলার একাই শিকার করেছেন ৪ উইকেট। অবশ্য অধিনায়ক সাকিব মনে করেন পেসারদের দারুণ পারফর্মে নতুনরা সুযোগ পাচ্ছে কম। সাকিব বলেন, ’নতুন ছেলেরা এসে প্যানিক হয়নি। তারা এসে পারফর্ম করতে চেয়েছে। যেভাবে বোলাররা বল করেছে, দুর্দান্ত। আমাদের আরও কয়েকজন আছে যারা আমাদের এই পেসারদের দারুণ পারফরম্যান্সের কারণে সুযোগ পাচ্ছে না’।
এদিকে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ের পরদিন কোন অনুশীলন রাখেনি টিম ম্যানেজম্যান্ট। সে কারণে সুযোগটা দারুনভাবে কাজে লাগিয়েছেন সাকিব। ক্রিকেট থেকে খানিকের এই বিশ্রামেই এবার বিজ্ঞাপনের কাজে ছুটলেন সাকিব আল হাসান। মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ বন্দর নগরীর সিআরবিতে শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে। এবারই যে প্রথম কোনো সিরিজের ফাঁকে বিজ্ঞাপনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন সাকিব, তা কিন্তু নয়। এর আগেও আরও বেশ কয়েকবার সিরিজের ফাঁকেই বিভিন্ন কাজে টিম হোটেলের বাইরে যেতে দেখা গেছে এই অলরাউন্ডারকে। সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের সময়ও সিরিজের মাঝে একটি শোরুমের উদ্বোধন করেছিলেন সাকিব। তাছাড়া ইংলিশদের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার ফাঁকেই একদিনের ঝটিকা সফরে নিজের গ্রামের বাড়ি মাগুরাতেও গিয়েছিলেন তিনি। আসলে সাকিব এমনই। যখন যেখানে যে অবস্থায় থাকেন না কেন ক্রিকেটই তার সবকিছু। অন্ততঃপক্ষে মাঠে নামলে সেটা পরিস্কার বোঝা যায়।
দেশকণ্ঠ/আসো