মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বাংলাদেশের সাফল্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। হঠাৎই আশাটা বেড়ে গেল। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ থেকে যে ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলছে; তাতে অনেকেরই চোঁখ কপালে উঠে যাবার জোগার। সিরিজ জিততে না পারলেও শেষ ওয়ানডেতে ইংলিশদের হারানোর পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিনটি ম্যাচই জিতেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ বাদ দিলে আয়ারল্যান্ড পড়েছিল মহাঝরে। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা তাই সামনের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভাল করার সম্ভাবনা দেখছেন। বিশেষ করে যখন খেলাটি ভারতের মাটিতে, তখন টাইগারদের হিসেবের মধ্যে রাখছে সব দলই।
কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই লংকানের হাত ধরে বদলে গেছেন- মুশফিক, অধিনায়ক তামিম ইকবাল আর নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন শান্ত। আর স্পিনারদের দখলদারী হিসেবে উপমহাদেশের দেশগুলোর পরিচিতি হলেও বাংলাদেশ সেখান থেকে বের হয়ে এসেছে। এখন এলান ডোনাল্ডের হাত ধরে পেস বোলিংয়ে নতুন উচ্চতায় লাল সবুজের দল। সব হিসেবেই বাংলাদেশ এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় শক্তি। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে যে দুর্বলতা ছিল সেগুলোও কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। অন্ততঃপক্ষে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সেটা বোঝা গেছে। ইংলিশরা টেস্ট না খেললেও আয়ারল্যান্ড কিন্তু একটা পাঁচদিনের ম্যাচ খেলবে। সেখানে দীর্ঘদিন পর মাঠে নামা দলটার পরিবর্তন দেখতে পাবেন দর্শকরা।
সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নটা আরও বড় হলো। কার কাছে তো, সাফল্যের এ হাওয়া বয়ে যাক বিশ্বকাপের দিকে। আয়ারল্যান্ডের মতো খর্বশক্তির ইউরোপিয়ান দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। অযৌক্তিক কথা তো নয়! ভারতকে যখন ঘরের মাটিতে হারিয়ে দেওয়া গেছে, সেখানে আইরিশরা শক্তির বিচারে চুনোপুঁটি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ক্রিকেট সব সময়ই গৌরবময় অনিশ্চয়থার খেলা। যার অনেক উদাহরণ আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেও। সেদিক থেকে দেখলে তুলানামূলক সহজ প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা কিছুটা হলেও বেশি চাপের। জিতলে খুব একটা প্রশংসা পাওয়া যায় না, কিন্তু হারলেই চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার! তবে বাংলাদেশ ভুল করেনি। পা কাটেনি পচা শামুকে, আর তামিম, সাকিব, মুশফিকদের পড়তে হয়নি সমালোচনার মুখে। মাঠে প্রভাব বিস্তার করে দাপুটে ক্রিকেট খেলে সিলেট স্টেডিয়ামে যে প্রদর্শনী হলো, তাতে যোগ হলো নতুন এক অধ্যায়। ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে এ যেন এক অন্য বাংলাদেশের ছবি। টি-টোয়েন্টির তাওহিদ হৃদয় ওয়ানডেতে নতুন স্বপ্নের বাহক হিসেবে প্রায় প্রমাণ কতরে ফেলেছেন। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেলেও তার ব্যাট এখনো কতটা ধারালো তার প্রমাণ পাওয়া গেল। ওয়ানডেও কার্যকর হয়ে উঠলেন নতুন পেস সেনসেশন হাসান মাহমুদ। এর সঙ্গে যোগ করুন একটার পর একটা রেকর্ড গড়া জয়। প্রাপ্তির খাতায় সংযোজন হচ্ছে দারুন দারুণ কিছু অর্জন।
আয়ারল্যান্ড সিরিজের তিন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের স্কোরের দিকে তাকালে আপনাকে স্যালটু দিতে হবে, যেটা মাঠে সাকিব দিয়েছেন এবাদত হোসেনকে। প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩৮, দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৪৯ এবং শেষ ওয়ানডেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০২, তাও আবার মাত্র ১৩.১ ওভারে। ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোর ঠিকই গড়েছে তামিম ইকবালরা। ৩৩৪ রানের রেকর্ড টিকেছে মোটে একদিন। পরের ম্যাচেই মুশফিকের ঝড়ে রেকর্ড ৩৪৯ রান। দুটো ম্যাচেই আবার লেখা হয়ে গেছে সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়। ১৮৩ রানের পর ১০ উইকেটের জয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আপাতত লেখা সোনার অক্ষরে!
এত এত প্রাপ্তির মাঝেও রান বৃষ্টির এই সিরিজে আফসোস হয়ে থাকলো দ্বিতীয় ওয়ানডে। বৃষ্টি বাগড়া না দিলে হয়তো হোয়াইটওয়াশের আনন্দও সঙ্গী হতো বাংলাদেশের। যদিও প্রকৃতির ওপর তো আর কারো হাত নেই, তাই এই আলোচনায় না করাই উত্তম। দারুণ সব স্মৃতি সঙ্গী করে সময় এখন শুধুই উপভোগের, যা প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিয়েছে আত্ববিশ্বাস। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাওয়াশ করার পর ফরম্যাট পাল্টে গেলেও লাল-সবুজ জার্সিধারীদের সাফল্যের গাড়ি থামেনি। পরে দেখা গেছে, ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ আরও ভয়ঙ্কর। সাফল্যের এই ধারা অব্যহত থাকুক বিশ্বকাপ পর্যন্ত। সেটাই প্রত্যাশ্যা সমর্থকদের। তবে একটি দুঃখ থাকছে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচকে ঘিরে। এতো কম রান; বড় হার। সাম্প্রতিক সময়ে এটা যেনো খুব বেমানান। তবে দিনটিকে ব্যাড ডে হিসেবে মেনে নিয়েছেন সাবিকরা।
দেশকণ্ঠ/আসো