মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টির পর এবার টেস্ট লড়াইয়ে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড। মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল সিরিজের একমাত্র ম্যাচটি শুরু হবে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দুই দেশের মধ্যকার তিন ফরম্যাটের সিরিজের বাকি দুটি সিলেট ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এবার রাজধানীতে প্রথমবারের মতো লাল বলের লড়াইয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে ইউরোপের দেশটির বিপক্ষে। এই ম্যাচের আগে দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে তাসকিন আহমেদের ইনজুরি। সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টে ম্যাচে সাইড স্ট্রেইনের চোটের কারণে থাকছেন না এই ইনফর্ম পেস বোলার। যা বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। রবিবার প্রথমদিন অনুশীলনের মতো সোমবারও মাঠে আসেন, কিন্তু কোন বল না করেই ফিরে যান। এরপরই বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগ থেকে তার না খেলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাস দলে থাকায় শক্তির খুব বেশি হেরফের হয়নি। যদিও আইপিএলে খেলতে আইরিশদের বিপক্ষে টেস্ট থেকে ছুটি চেয়েছিলেন তারা! যদিও শেষ অবধি সেটি পাননি । রোববার সাকিব ও লিটনকে রেখেই টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। সব ঠিক থাকলে ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন সাকিবই। বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক রাজ।
বড় তারকাদের ছাড়া খেলার মতো পরিস্থিতিতে এখনও নেই দেশের ক্রিকেট, এই কথা জানিয়ে রাজ্জাক বলছিলেন, ‘ওরা দুজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। সাকিব তো অধিনায়কই। আর লিটন এই মুহূর্তে আমাদের মূল খেলোয়াড়দের একজন। ওরা যদি দলের মধ্যে থাকে, খুব স্বাভাবিকভাবেই দলের আবহ বদলে যায় এবং কিছুটা ভালো হওয়ারই কথা। তা-ই হচ্ছে।’ ‘আমি তো চাই, আমার ব্যক্তিগত দিক থেকে বলছি একদম সেরা দলটাই খেলুক। যেহেতু এটা একটা টেস্ট ম্যাচ। টেস্টে আসলে আমার মনে হয় না, কোনো দলের বিপক্ষে কোনো সুযোগ নেওয়া উচিত। কারণ টেস্ট ম্যাচ জিতে রাখাই ভালো। আর আমরা এখনও ওরকম পরিস্থিতি যাইনি যে, ৪-৫ জন ক্রিকেটার না থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। আমার মনে হয়, ওই পর্যায়ে যেতে আমাদের এখনও সময় লাগবে।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ হেরেছে আয়ারল্যান্ড।
অবশ্য শেষ টি-টোয়েন্টিতে জিতেছে তারাই। পুরো সিরিজের পারফরম্যান্সের বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, টেস্ট ক্রিকেট বরাবরই আলাদা। আইরিশদের হালকা করেও নিতে চান না তিনি। রাজ্জাক বলছিলেন, ‘টেস্ট ম্যাচ একটা ভিন্ন জিনিস। আমরা একদম প্রথম দিকে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট খেলতে গেলে কিন্তু ওদের মূল দলটাই খেলত। ভারত কিন্তু টেস্ট খেলতে মূল দলটাই আসে। এটা হয়তো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নয়। তবে টেস্ট জিতে রাখা একটা ভিন্ন বিষয়। এটা থেকে কেউ আসলে নিজেদের বঞ্চিত করতে চায় না।’ ‘অনেক সময় এমন হয় যে, খুব বেশি পার্থক্য থাকে। আয়ারল্যান্ডের প্রচুর ক্রিকেটার আছে যারা কাউন্টি খেলে। তাদেরকে সেভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। এখানে আমাদের সঙ্গে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি সিরিজ দেখে যদি মনে হয় যে ওরা খুব ভালো একটা দল নয়। এটা কিন্তু ভুল হবে। ওরা যা খেলছে এর চেয়ে অনেক ভালো দল। হয়তো কোনো কারণে শুরুতে মানিয়ে নিতে পারেনি। কিন্তু ওদের যা পারফরম্যান্স দেখা গেছে এর চেয়ে অনেক অনেক ভালো দল। ওদের মনে হয় প্রায় ৯০ শতাংশ ক্রিকেটারই কাউন্টি ক্রিকেট খেলে। আমরা যারা ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত, তাদের সবারই কিন্তু কাউন্টির মান সম্পর্কে ধারণা আছে’।
এদিকে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আগ্রাসী টাইগারদের কড়া বার্তা দিয়ে রাখে আয়ারল্যান্ড। ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়ের পর টি টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে নাকানি-চুবানি খেয়েছে টাইগাররা। বৃষ্টিবিঘ্নিত দুই ম্যাচেই করেছে দুই শ’র ওপরে রান। কোনো প্রতিদ্বন্ধিতাই গড়তে পারেনি আইরিশরা। শেষ ম্যাচে টাইগাররা যখন ছক কষছিল বাংলাওয়াশের, তখনি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়াল সফরকারীরা। একপ্রকার প্রতিশোধই নিলো আগের ম্যাচগুলোর। আগামী মাসেই আয়ারল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ। সাগরিকার এই জয়ই কি বার্তা দিয়ে রাখল আয়ারল্যান্ড। ম্যাচে গত ওয়ানডেতে সমীহ জাগানিয়া দল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এবার পরিবর্তনের পরিকল্পনাটা ছিল টি-টোয়েন্টিকে ঘিরে। চলতি বছর ভারতে বিশ্বকাপটাও একটা ফ্যাক্টর। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আভাসটা দ্বিতীয় ম্যাচের পরই দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়েছে। এবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পালা। সেটি দেখা গেল সিরিজের শেষ ম্যাচের একাদশেও। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো। তাকে জায়গা করে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলে ফিরেছেন বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামও, মোস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় খেলেছেন তিনি। তাতে বাংলাদেশ দলের সমন্বয়টা হলো ছয় ব্যাটসম্যান ও পাঁচ বোলারের। একাদশ ও সমন্বয়ে পরিবর্তন এলেও বদলায়নি বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের ব্যাটিং স্টাইল। ২০ ওভারের খেলাটা যেভাবে খেলা উচিত।
দেশকণ্ঠ/আসো