• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০৩:৫২    ঢাকা সময়: ১৩:৫২

নিষেধাজ্ঞায় সোহাগ বিতর্কে বাফুফে

বিশেষ প্রতিবেদন : বাংলাদেশের ফুটবলে অনেকটা হঠাৎ করেই নেমে আসল কালো আধার! নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফুটবল ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য ফুটবলের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নানা কর্মকান্ড নিয়ে এতদিন দেশের ভেতরে অনেক প্রশ্ন উঠলেও এবার সেটি পৌছে গেছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থায়। এক সাধারন সম্পাদকের কাছে যে কতটা জিম্মি ছিল দেশের ফুটবল সেটা প্রমাণিত হয়েছে আরও একবার। সাথে বিতর্কের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে গেছে দেশের ফুটবল। এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন ও তার নির্বাহী কমিটি। সোহাগের প্রভাব কতটুকু সেটা প্রমাণিত হয়েছে আরও একবার। বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ছিল ১৪ এপ্রিল। জরুরি সভার আলোচ্যসূচি ছিল নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। বিকেল সাড়ে ৩টায় সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা থেকে বাফুফে সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধের পর রাতে সেই সভা বাতিল করা হয়েছে। যা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কর্মকর্তাদের মাঝে।
 
এই সভা বাতিল হওয়ার পেছনে সোহাগের ফিফা থেকে বহিষ্কারাদেশই একমাত্র কারণ বলে জানা গেছে। ফিফা থেকে সিদ্ধান্ত আসার পরই টালমাটাল হয়ে উঠেছে ফুটবলাঙ্গন। যার রেশ ধরেই নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ নিয়ে আহ্বান করা জরুরি সভা বাতিল করা হয়েছে। এদিকে, জরুরি সভা বাতিল হওয়ায় ফেডারেশনের অনেক কর্মকর্তাও চরমভাবে নাখোশ হয়েছে। নির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ‘সভাপতির আজকেই জরুরি সভা করা উচিত ছিল। প্রয়োজনে নারী ফুটবলের বদলে সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে সভা হতে পারত। আজকের সভা বাতিল করা ঠিক হয়নি।’ সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় বাফুফে বড় সমস্যায় পড়েছে। ফেডারেশনের পক্ষে তিনিই সবকিছু দেখাশোনা করতেন। এখন তাকে দায়িত্ব অব্যাহতি দিয়ে নতুন কাউকে খুজতে হবে ফেডারেশনকে। জানা গেছে, ঈদের আগেই ফেডারেশনের সাধারণ নির্বাহী সভা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে সোহাগ নিজে কথা না বললেও তার আনজীবি দিয়ে একটা বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ফিফার শাস্তি দেয়া ধারাগুলোর সবকটিতে উদ্দেম্য প্রনোদিত, মনগড়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
নানা কান্ডে প্রতিনিয়তই বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাচ্ছিলেন সোহাগ। একা হাতে সবকিছু করতে গিয়ে প্রতিটা কাজেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এখন সাড়ে ৬ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে ফিফা এতকিছু করছে জেনেও বাফুফে সোহাগের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিতর্কিত এই কর্মকর্তার পক্ষে প্রায়শই সাফাই গাইতে শোনা গেছে খোদ বাফুফে সভাপতিকে! আর সে কারণেই আজকে বাংলাদেশের ফুটবলতে শুনতে হলো এত বড় দুর্নীতি কলংক। ফিফা অবশ্য চোঁখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সোহাগ-বাফুফের অসঙ্গতিগুলো। আর্থিক অসঙ্গতি নিয়ে অনেকদিন ধরেই নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাফুফেতে। যার ফল দেশীয় ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি বেশ বড়সড়ভাবেই পেয়েছে। বাফুফের আর্থিক লেনদেনে বড় অসঙ্গতির প্রমাণ পেয়েছে ফিফা। ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৮ হাজারেরও অধিক টাকার লেনদেন নিয়ে মোটাদাগে অভিযুক্ত হয়েছে বাফুফে এবং সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে প্রায় প্রতিটি লেনদেনের নথিতে স্বাক্ষর করায় ফিফা সোহাগকে ফুটবল থেকে দুই বছর নিষিদ্ধ ও প্রায় ১২ লাখ টাকা (১০ হাজার সুইস ফ্রা) জরিমানা করেছে।
 
নজরদারি হওয়ার পর থেকে চারটি ধারায় আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি তদন্তের পর মোটাদাগে প্রমাণিত হয়েছে তিনটি অনিয়ম। অনিয়মগুলো হচ্ছে, ফিফার তহবিলের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে নগদে টাকা উত্তোলন করা, ফিফা সম্পর্কিত প্রকল্প বা প্রোগ্রামে অন্য অ্যাকাউন্টের টাকা ব্যবহার এবং ফিফা তহবিলের টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করা। নিয়মানুযায়ী ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থ খরচের নির্দিষ্ট কিছু খাত আছে। এই অর্থ নির্দিষ্ট একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখাটা ফিফার নিয়মে বাধ্যতামূলক। লেনদেনও শুধু সেখান থেকেই করার নিয়ম। কিন্তু সেটি বারবারই লঙ্ঘন করেছে বাফুফে। সোহাগ ও বাফুফের অর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোট ৪টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে, ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ধারা ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব), ধারা ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) ও ধারা ২৮ (তহবিল তছরুপ ও অপব্যবহার)। এসব ধারার অধীনে ফিফার দেওয়া অনুদানে যথেচ্ছ ব্যবহার এবং কেনাকাটায় বড় ধরনের গলদ পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
ফিফার স্বাধীন এথিকস কমিটির বিচারিক চেম্বার এ বিষয়ে মোট ৫১ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে লেনদেন নিয়েই এই অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয় ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর। পরবর্তীতে ফিফার সদর দফতরে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত শুনানিতে সোহাগ ও তার আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত চলাকালে ফিফার বিচারিক চেম্বার বাফুফের বেশ কয়েকটি লেনদেনের বিশ্লেষণ করেছে। এর ভেতর চারটি খাতের লেনদেন নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে ওই কমিটি। ওই বিশ্লেষণে তারা ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪ মার্কিন ডলার লেনদেনে আর্থিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে। তবে এটি যাচাইকৃত লেনদেনের ১৭.৭৩ শতাংশ।  তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি কোনোভাবেই তুচ্ছ বিবেচনা করা যায় না, এটি বড় ধরনের অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।