আব্দুল আজিজ, তিতাস [কুমিল্লা] প্রতিনিধি: সুস্বাদু দামি ড্রাগন ফল এখন চাষ হচ্ছে কুমিল্লার চান্দিনায়। অল্প সময়ে অল্প পুঁজিতে ড্রাগন ফল চাষ করে বেকার যুবকদের কোটিপতি হওয়ার বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে। মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগনে স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং প্রসাধনী গুণ থাকায় দিনদিন কুমিল্লায় এর চাহিদা বাড়ছে। কুমিল্লার মাটি ও আবহাওয়া এর অনুকূলে হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে এ ক্যাকটাস প্রজাতীয় ফলের।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কাদুটির চাঁদসার গ্রামে গেলেই চোখ পড়ে নাছিমা বেগমের ড্রাগন বাগান। দূর থেকে দেখলে মনে হয় স্ব-যতেœ ক্যাকটাস লাগিয়েছে কেউ। একটু পাশে যেতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে অন্য রকম দেখতে এক লাল ফলে। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। ২০১৯ সালে নাছিমা বেগম এ বাগানের সূচনা করেন। মাত্র ১০টি চারা দিয়ে। যেখানে এখন পায় ৫ হাজার গাছ রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে গাছের চারা। সেই সঙ্গে সপ্তাহে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ২/৩ মণ। যা বাজারে পাইকারী কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা দরে। আর প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। তার এ চারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যাচ্ছে ।
কুমিল্লা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এটি লতানো কাটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোনো পাতা নেই। গাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতো। ড্রাগন গাছে শুধুমাত্র রাতে স্বপরাগায়িত ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙয়ের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের/বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ওপরের দিকে তুলে দেয়া হয়।
ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপণের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। এপ্রিল-মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১শ’ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।
ড্রাগন চাষি নাছিমা বেগম বলেন, নাটোর থেকে মাত্র ১০টি চারা দিয়ে ড্রাগন চাষাবাদ শুরু করি। গত বছর মাত্র ২১ শতাংশ জমিতে বিক্রি হয়েছিল দুই লাখ টাকা। আর এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে ড্রাগনের চাষাবাদ করেছি। ড্রাগন চাষ করে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এ বছর আশা করছি ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি হবে। প্রতিদিন এলাকার অনেক কৌতুহলী মানুষ আসে বাগান দেখতে। অনেকেই চারা কিনছেন, চাষাবাদও করছেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ড্রাগন ফল কুমিল্লার আবহাওয়া এবং মাটি এটি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কুমিল্লায় বাউ-১, বাউ-২ জাতের ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। ড্রাগন গাছে একটানা ৬/৭ মাস ফল পাওয়া যায়। এর বাজার মূল্য বেশি এবং অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় কুমিল্লায় চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্থানীয় বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এ ফল চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে।
দেশকণ্ঠ/আসো