বিশেষ প্রতিবেদন : ১২ দিনেও শুরু হয়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) গঠিত তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে ১০ জনের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই সহ সভাপতি আতাউর রহমান ভুইয়া মানিক ও মহিউদ্দিন আহদে মহি। কেনাকাটা নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়ার দায়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে গত ১৪ এপ্রিল দুই বছর নিষিদ্ধ করে। পরে গত ১৭ এপ্রিল জরুরি এক সভায় সোহাগের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করতে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে বাফুফে। এক মাসের মধ্যে সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনের ১০ দিন পার না হতেই কমিটি ভাঙনের খবর এসেছে। মহিউদ্দিন দুদনি পর পদত্যাগ করলেও মানিক সরে দাঁড়ান গত ২৪ এপ্রিল। জানা গেছে, দুজনই পদত্যাগ করেছেন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে। এই দুজন পদত্যাগ করায় তদন্ত কমিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন উঠেছে প্রশ্ন। গত ১৭ এপ্রিলের সেই সভায় তিন মাসের জন্য বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় ইমরান হোসেন তুষারকে। এর আগে তুষার বাফুফের চিফ প্রটোকল ম্যানেজার ছিলেন। এছাড়া আবু নাঈম সোহাগকে ফুটবলের সঙ্গে কখনো সম্পৃক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয় বাফুফে। আবু নাঈম সোহাগের বিপক্ষে মোটাদাগে চারটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণের কথা বলছে ফিফা।
যার মধ্যে ছিল, ২০২০ সালের ফিফা এথিকস কোডের ধারা, আনুগত্যের দায়িত্ব, জালিয়াতি ও মিথ্যাচার এবং অযথার্থতা ও অনুদানের অপব্যবহার করা হয়েছে। এসব ধারায় তাকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রায় ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও কাজে নামেনি বাফুফে গঠিত তদন্ত কমিটি। সোহাগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাফুফে স্টাফদের ওপর বেশি ক্ষুব্ধ ছিলেন সহ সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। ফাইন্যান্স বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতেও বলেছিলেন তিনি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রে অনিয়ম, ফিফা ফান্ডের অপব্যবহারে শুধু সোহাগই নয়; মানিকের কাছে মনে হয়েছে, এর দায়টা এড়াতে পারেন না ফাইন্যান্স বিভাগের কর্মকর্তারাও। তাঁরা এখনও বহাল তবিয়তে থাকায় ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করে বাফুফেতে চিঠি দিয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মানিক। তদন্ত করে বাফুফের মূল উৎপাটন করবেন বলে ঈদের আগে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তিনি। তদন্ত কমিটিতে থাকা চার সহ সভাপতির দু’জনের পদত্যাগে ফের সংকটে বাফুফে।
কারণ কাজ শুরুর আগেই দুই সদস্যের পদত্যাগে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে সোহাগ-কান্ডের সঠিক তদন্ত হবে তো ফেডারেশনে। আর ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা কমিটির। কিন্তু ১২ দিন পার হলেও এখনও নড়েচড়ে বসেনি তদন্ত কমিটি। বাকি ২০ দিনের মধ্যে কীভাবে সোহাগ ও তাঁর অনুসারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজে বের করবে কমিটি, তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। এরই মধ্যে দুই সহ সভাপতির পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে আগামী ২ মে নির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। যদি ওই সভার পর তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হয়, তাহলে হাতে থাকে ১২ দিন! অনিয়ম, জালিয়াতি, ক্লাবগুলোর প্রাপ্য অর্থ নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগে সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলেও সবার ক্ষোভ সালাউদ্দিনের ওপরেই বেশি। সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিষিদ্ধ হওয়ায় বাফুফের ক্ষমতাধর এই ব্যক্তি এখন অনেকটাই একা হয়ে গেছেন। কারণ, কার্যনির্বাহী কমিটির বেশিরভাগই তাঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে খুব কাছের মানুষ মানিকের পদত্যাগে সালাউদ্দিন আরও বেকায়দায় পড়েছেন বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সূত্র। পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে বেশ কয়েকবার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করা হলেও তা রিসিভ করেননি মানিক।
অপর সহ সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহিও এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। কয়েকটি সূত্রের মতে, বাফুফের অনিয়মের বিরুদ্ধে একসময় সোচ্চার থাকা মহির সরে দাঁড়ানোর পেছনে অনেকেই দেখছেন তাঁর দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে। কেননা বাফুফেতে তিনি সোহাগ-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান সহ সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এমপি। আরেক সহ সভাপতি ইমরুল হাসানের সঙ্গে আছেন তিন সদস্য সত্যজিৎ দাস রুপু, জাকির হোসেন ও ইলিয়াস হোসেন। বাকি তিনজন হলেন ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ, হারুনুর রশিদ ও আবদুর রহিম। মানিক ও মহির পদত্যাগের বিষয়টি যেমন জানেন না, তেমনি করে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে, তা নিয়েও অজ্ঞাত ইমরুল হাসান, ‘আমি আপনার কাছ থেকে শুনেছি দু’জন পদত্যাগ করেছেন। আমি বিষয়টি আগে জানি, তারপর চিন্তা করব কী করা যায়। এখনও তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হয়নি। এ জন্য কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’ এখন আদৌ তদন্ত শুরু করা হবে কিনা, হলে কবে শেষ হবে আর শেষ হলে সেটা আলোর মুখ দেখবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
দেশকণ্ঠ/আসো