মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ফিরতি সফরে আয়ারল্যান্ডে যাবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। সেখানকার আবাহওয়া আর সিলেটের সাথে কিছুটা মিল থাকায় প্রস্তুতির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় লন্ডনকে। সেখানেই নিজেদের পুপোপুরি প্রস্তুত করছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শীষ্যরা। মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। যা অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে। তাই সেখানকার উইকেট ও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সিলেটে ক্যাম্প করেছে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। তিন দিনের এই ক্যাম্পটি শেষ হয়েছে রবিবার। সিলেটের পিচ ও কন্ডিশনে সন্তুষ্ট হয়েছেন জাতীয় দলের হেড কোচ হাথুরুসিংহে। তার দাবি, পিচ ও কন্ডিশন তারা যেমনটা চেয়েছিলেন, ঠিক তেমনটাই ছিল। তিনদিনের প্রস্তুতি শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের এই লংকান প্রধান কোচ।
শীষ্যদের প্রস্তুতি নিয়ে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেন, ’যে কন্ডিশনে নিজেদের প্রস্তুত করতে চেয়েছিলাম সেটা করতে পেরেছি। আমরা কন্ডিশন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। আমরা যেমন চাই, তেমন পিচ কন্ডিশন তৈরি করতে তারা (কিউরেটর ও মাঠকর্মীরা) কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। আপনি দেখতে পারেন ছেলেদের এনার্জি। ইন্টেনসিটি খুব ভালো ছিল, আমি এটাতে খুশি’। দ্বিতীয় মেয়াদে কোচিং করাতে আসা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারকে ভালোভাবেই জানেন। ওপেনিংয়ে রীতিমতো ধুঁকতে দেখা যায় বাংলাদেশি ব্যাটারদের। ওপেনারদের ভালো করার টোটকা দিয়ে রাখলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ বলেন, ’ওপেনার হলে ১০ ওভার ব্যাট করতে হবে, কীভাবে শুরু করতে হবে এবং ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের (৩০ গজের মধ্যে ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতা) সর্বোচ্চ ব্যবহার কীভাবে করতে হবে সেটাও ভাবতে হবে। মাঝে ব্যাট করলে পরিস্থিতি অন্যরকম থাকবে’।
তখন কখনো চারজন বা পাঁচজন আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে আসতে হবে বলে স্বরণ করিয়ে দেন। এদিকে জাতীয় দল লন্ডন যাবে দুই ভাগে ভাগ হয়ে। সিলেটে ৩ দিনের প্রস্তুতি পর্ব শেষে রাজধানীতে ফিরে এসেছে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। মাত্র ২৪ ঘণ্টা পরই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের একদিনের সিরিজ খেলতে লন্ডন যাবে জাতীয় দলের বহর। প্রথমে শোনা গিয়েছিল ৩০ এপ্রিল দিবাগত রাত তথা ১ মে প্রথম প্রহরে লন্ডন যাবে জাতীয় ক্রিকেট দল; কিন্তু সর্বশেষ খবর, কয়েক ভাগে ভাগ হয়েই তবে লন্ডন যাবে টিম বাংলাদেশ। বিসিবি লজিস্টিক কমিটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৩০ মে দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটে (ঘড়ির কাঁটায় তখন ১ মে) রাজধানী ঢাকা ছাড়বে জাতীয় দলের প্রথম বহর। আর দ্বিতীয় ভাগ যাবে পরদিন, মানে ২ মে সকাল সোয়া ১০ টায়। এদিকে কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে আইপিএল খেলতে ভারত যাওয়া লিটন দাস রাজধানীতে এসে পৌঁছেছেন আগের দিন শুক্রবার বিকেলে। সে কিছুটা বিলম্বে যাবে এই সফরে।
জানা গেছে, লিটন দাস দলের সঙ্গে দ্বিতীয় বহরে লন্ডন যাবেন। তবে পেসার মোস্তাফিজ কবে, কখন দলের সঙ্গে যোগ দেবেন? বিসিবি থেকে তা পরিষ্কার করে তা জানানো হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে আইপিএল খেলায় ব্যস্ত মোস্তাফিজ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশে ফেরত আসবেন। তারপর লন্ডন যাবেন। তবে সেটা কবে? সূত্র তা জানাতে পারেননি। এদিকে ১ মে প্রথম বহর ও ২ মে সকালের দ্বিতীয় বহরে ১১ জন করে ২২ জন ক্রিকেটার, কোচিং ও সাপোর্টিং স্টাফ এমিরেটসের ফ্লাইটে লন্ডন যাচ্ছেন। এর বাইরে ৩ ও ৪ মে ও কজন কর্মকর্তা যাবেন ইংল্যান্ড। ধারণা করা হচ্ছে তাদের সাথেই হয়ত যুক্ত হবেন মোস্তফিজ। মাগুরা বাবা মার সাথে ঈদ করে স্ত্রী ও সন্তানের সান্নিধ্যে কাটাতে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়া সাকিবও দলের সাথে সরাসরি চেমসফোর্ডে মিলিত হবেন। প্রসঙ্গতঃ আগামী ৫ মে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে টাইগারদের। আর ৯, ১২ ও ১৪ মে চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের সাথে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলবে তামিম ইকবালের দল।
এদিকে সিলেটে ইংল্যান্ডের বাউন্স পাচ্ছেন দলের নতুন মুখ পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। সিলেটে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। মে মাসের আয়ারল্যান্ড সিরিজের ক্যাম্প সিলেটে করেছে বাংলাদেশ দল। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয় বাংলাদেশ দলের তিন দিনের ক্যাম্প। এরপর সিলেট থেকে ঢাকা ফিরে ইংল্যান্ডের বিমান ধরবেন তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমরা। ইংল্যান্ডে খেলার আগে ক্যাম্প সিলেটে কেন করছে বাংলাদেশ দল, ঢাকা থাকতেই সেটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কোচের সঙ্গে সুর মেলালেন প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পাওয়া মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সিলেটে প্রথম দিনের অনুশীলনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘ইংল্যান্ডের উইকেট বাউন্সি। আর এ রকম উইকেটের সঙ্গে কিছুটা মিল আছে সিলেটের। এই সুনাম থাকায় এখানে ক্যাম্প করা হচ্ছে। আজ আমরা অনুশীলনে উইকেটে অনেক বাউন্স পেয়েছি। যা আমাদের ইংল্যান্ডের উইকেটে খেলতে বাড়তি সুবিধা দেবে। তবে হুবহু তো আর ইংল্যান্ডের উইকেট আমাদের দেশে পাওয়া যাবে না, তবু সিলেটে যতটুকু হয়েছে তাতে আমরা আশাবাদী।’
অনুশীলনে পাওয়ার প্লের ১০ ওভার ও শেষদিকে ডেথ ওভারে কীভাবে ব্যাটিং করবে তার পরীক্ষা হয় ক্রিকেটারদের। তামিম, রনি তালুকদার ও নাজমুল হোসেন শান্ত পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিংয়ের পরীক্ষা দিয়েছেন। মৃত্যুঞ্জয় বললেন ‘অনুশীলন হয়েছিল ম্যাচ পরিস্থিতির ওপর। প্রথম ১০ ওভারে কীভাবে খেলতে হবে, শেষদিকে কীভাবে খেলতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যাটসম্যানদের নামানো হয়েছে। এভাবেই পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে, তারা সেভাবেই ব্যাটিং করেছে। শুধু ম্যাচ পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার অনুশীলন হয়েছে।’ আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই ইংল্যান্ডে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল।
দেশকণ্ঠ/আসো