• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০৪:২৬    ঢাকা সময়: ১৪:২৬

মহসিনকে ফুটবলারদের ভালবাসার ’মোটর সাইকেল’

বিশেষ প্রতিবেদন : বাংলাদেশের ফুটবলে অনেক অর্জনের সাথে মিশে আছে মো. মহসিনের নাম। পাশাপাশি অনেক হতাশায়ও জড়িত রয়েছেন তিনি। এবার অন্যরকম এক ভালবাসায় ফুটবলাররা তাকে ভরিয়ে দিয়েছে। সবাই টাকা চাঁদা দিয়ে একটি মোটর সাইকেল কিনে দিয়েছেন জাতীয় দলের টিম এটেনডেন্টকে। দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যান ইয়াং ক্যাং থেকে শুরু করে বর্তমান স্প্যানিশ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা-বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচদের সঙ্গে ১৯৯৫ সাল থেকে কাজ করছেন মো. মহসিন। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে জাতীয় ফুটবল দলের সাফল্য-ব্যর্থতা ও হাসি-কান্নার স্বাক্ষী সাবেক এই ফুটবলার। বলবয় কিংবা টিম অ্যাটেনডেন্ট-যে পরিচয়েই হোক, মহসিন এখন জাতীয় ফুটবল দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিদেশি কোচদের গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে অনুশীলন মাঠে আর ম্যাচের সময় খেলোয়াড়দের কখন কী দরকার, তার দেখভাল করে আসা মহসিন সবার কাছে প্রিয়মুখ। খেলোয়াড় থেকে কোচ-জাতীয় দলের সব সদস্যের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে যাওয়া মহসিন পেয়েছেন দারুণ এক উপহার। একটি মটরসাইকেল। ক্রয় ও কাগজপত্র তৈরিতে খরচ ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। কিন্তু মহসিনের কাছে এই মটরসাইকেলের মূল্য টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
 
এটি ভালবাসার বড় একটা নিদর্শন তার কাছে। কারণ, মটরসাইকেলটি তাকে উপহার দিয়েছেন জাতীয় দলের ফুটবলাররা। বর্তমান জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সাবেক কয়েকজন মিলে মহসিনকে এই মটরসাইকেল উপহার দিয়েছেন বছর দেড়েক আগে। কৃতজ্ঞতা হিসেবে মটরসাইকেলের সামনে তিনি লিখে রেখেছেন, ‘গিফটেড বাই বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফুটবল টিম’। বছর দেড়েক আগে উত্তরার পুলিশ মাঠে অনুশীলন শেষে বাসায় ফিরছিলেন মহসিন। ফুটবলারদের একজন জানতে চেয়েছিলেন-কিভাবে যাতায়াত করেন? মহসিন বলেছিলেন, বাসে যাতায়াত করি। তখনই ফুটবলাররা বলেন উপহার দেওয়ার কথা। ‘আমাকে আরো বড় কিছু দিতে চেয়েছিলেন ফুটবলাররা। আমি বলেছি, অত দরকার নেই। মটরসাইকেল হলেই চলবে। প্রথমে আরো বড় ও বেশিমূল্যের মটরসাইকেল কিনে দিতে চেয়েছিলেন তারা। আমি বলেছিলাম-ওত বেশি দামেরও দরকার নেই। যাতায়াত করতে পারলেই হলো। তারপর এই মটরসাইকেলটি কিনে দেন সবাই মিলে। বর্তমান জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দুই সাবেক ফুটবলার সাইফুর রহমান মনি ও আরমান আজীজও এই উপহার দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত হন’, এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন মহসিন।
 
বাংলাদেশ ফুটবলের যে কয়েকটি সাফল্য আছে, তার স্বাক্ষী এই মহসিন। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে বাংলাদেশ প্রথম যে ট্রফি জিতেছিল ওই দলের আবাসিক ক্যাম্পের অংশ ছিলেন। যদিও তখন তাকে মিয়ানমার পাঠানো হয়নি। ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডুতে সাফ গেমসের স্বর্ণজয়ী দলের ক্যাম্পেও ছিলেন, সেখানেও যাওয়া হয়নি। তবে ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়টা তিনি মাঠেই উপভোগ করেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করলেও বিদেশ সফর শুরু হয় ২০০২ সালে ভুটান থেকে। তারপর জাতীয় দলের কোনো ট্যুরে বাদ পড়েননি মহসিন। যেখানে জাতীয় দল সেখানেই মহসিন। জাতীয় দলে তার প্রয়োজনীয়তা এখন অপরিসীম। বরিশালের মহসিনের এখন বসবাস ঢাকায়। প্রথম বিভাগ লিগ খেলা মহসিন স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে থাকেন ডেমরায়। তবে মহসিনের বেশিরভাগ সময় থাকা হয় বাফুফে ভবনে কিংবা জাতীয় দলের সঙ্গে কোনো পাঁচতারকা হোটেলে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পার হতে না পারলেও বিদেশি কোচদের সঙ্গে কাজ করতে করতে মহসিন ইংরেজিতে কথা বলতে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন।
 
ইংরেজি কিভাবে বলেন, জানতে চাইলে উত্তরটা ছিল এরকম, ‘বিদেশি কোচদের সঙ্গে কাজ করতে করতে শিখে ফেলেছি। যে কারণে, এখন তাদের সঙ্গে কাজ করাটা আমার আরো সহজ হয়েছে’। জাতীয় খারাপ করলে মন খারাপ হয় মহসিনের। কখনো কান্নায় ভেঙে পড়েন। মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে না পারার পর মহসিনের কান্নার ছবি ফাইরাল হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ‘কি আর বলবো? ওই ম্যাচ জিতলেই ফাইনালের টিকিট। ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে আমরা। ৮৮ মিনিটে পেনাল্টিতে গোল করে ম্যাচ ড্র করে ফাইনালে উঠে যায় নেপাল। আমি ওই রাতে এক মুহূর্তের জন্যও ঘুমাতে পারিনি’, দুই বছর আগের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের স্মৃতি মনে করে বলছিলেন মহসিন। কিভাবে জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন মহসিন? জানা যাক তার কাছেই। ‘বাবা-মা কারো কথা মনে নেই আমার। তাঁরা দুইজনই মারা যান এক বছরের মধ্যে। তখন আমার বয়স ছিল আড়াই বছরের মতো। আমার তিন বড় বোন আমাকে লালন-পালন করেছেন। ফুটবল খেলতাম। বয়স যখন ১০ বছর তখন বন্ধুদের কয়েকজনের সাথে ঢাকায় চলে আসি। গুলিস্তান দলের হয়ে আমি কিশোর লিগে অংশ নেই। এর পেছনে অবদান আছে মনসুর ভাইয়ের (প্রয়াত মনসুর আলী)।’
 
মনসিন আরও জানিয়েছেন, ‘এর পর কোচ মানিক স্যার (প্রয়াত নুরুল হক মানিক) আমাকে বলবয়ের কাজ করতে নিয়ে যান মোহামেডানে। সেখানে ৬-৭ মাস কাজ করি। পরে মানিক স্যার (প্রয়াত নুরুল হক মানিক, কানন স্যার (ছাইদ হাছান কানন) ও কায়সার স্যার (কায়সার হামিদ) আমাকে ১৯৯৫ সালে ক্যাংয়ের (ম্যান ইয়াং ক্যাং) সাথে জাতীয় দলে দিয়ে দেন। তখন থেকেই জাতীয় দলের কোচ ও ফুটবলারদের সঙ্গে পথচলা শুরু আমার’, ২৮ বছর আগের কথা বলছিলেন মহসিন। জাতীয় দলের স্থানীয় ও বিদেশি সব কোচই দারুণ পছন্দ করেছেন মহসিনকে। কোরিয়ান ম্যান ইয়াং ক্যাং তো মহসিনকে নিয়েই যেতে চেয়েছিলেন। মহসিন বলেন, ‘ক্যাং আমাকে তার দেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তখন বয়স ১০ বছর মাত্র। তাই সাহস করিনি।’ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ফুটবলের উন্নতির জন্য চেষ্টা করে যাবেন, লেগে থাকতে চান ভাল কিছু পাওয়ার আশায়।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।