• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০৩:৫১    ঢাকা সময়: ১৩:৫১

ইমরান খানের গ্রেফতারি : নজিরবিহীন বিক্ষোভে ফুঁসছে পাকিস্তান

দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ‌দুর্নীতির মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী নেতা ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর থেকে নজিরবিহীন বিক্ষোভ শুরু হয়েছে পাকিস্তানে। ইতিহাসে এই প্রথমবার দেশটির বিভিন্ন সেনা দপ্তরে হামলা চালিয়েছে উত্তেজিত জনতা। পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদসহ রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, করাচি, গুজারানওয়ালা, ফয়সালাবাদ, মুলতান, পেশোয়ার, মরদানসহ ছোটবড় প্রায় প্রতিটি শহরে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ। সেই সঙ্গে দেশটির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন সেনা দপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, পেশোয়ার ও করাচির বিভিন্ন সেনানিবাসে হামলা চালিয়েছেন।
 
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত। রাজধানী ইসলামাবাদের নিকটবর্তী এই শহরটি পড়েছে পাঞ্জাব প্রদেশে। বিভিন্ন পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে সেনা সদরদপ্তর এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজধানী লাহোরের একটি সেনানিবাসের ফটক ভেঙে ঢুকে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে শত শত জনতা। এ সময় তাদের সবার মুখে সামরিক বাহিনীবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। কাছাকাছি সময়ে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারের সেনা দপ্তরে আগুন ধরিয়ে দেয় পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা। করাচির সেনা সদরদপ্তরেও হামলার সংবাদ পাওয়া গেছে। এর বাইরে পেশোয়ারে পাকিস্তানের সরকারি বেতার সংবাদমাধ্যম রেডিও পাকিস্তানের একটি ভবন ও করাচিতে একটি পুলিশ ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
 
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করে রাজধানী পুলিশ। কিন্তু এই ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন পিটিআইয়ের ইসলামাবাদ শাখার নেতাকর্মীরা। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে ৫ পুলিশ সদস্য ও পিটিআইয়ের ১৩ জন কর্মী আহত হয়েছেন। লাহোর সেনানিবাসে ভাঙচুরের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর লাহোর শাখার শীর্ষ কর্মকর্তার বাসভনেও হামলা ভাঙচুর চালিয়েছে জনতা। জনতার আক্রোশ এড়াতে বিভিন্ন সেনাদপ্তর ও সেনানিবাসে অতিরিক্ত সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে; কিন্তু  তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কোনও ক্ষেত্রেই এই সেনা ও রেঞ্জার্স সদস্যরা শক্তি বা অস্ত্র প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর তেমন কোনো চেষ্টা করেননি।
 
মঙ্গলবার দু’টি মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন ইমরান খান। শুনানি শুরুর আগে আদালত ভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী রেঞ্জার্স এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো’র (ন্যাব) একটি যৌথ দল। ন্যাবের জারি করা পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাকিস্তানের এই বিরোধী নেতাকে। যে পরোয়ানার ভিত্তিতে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটি জারি করা হয়েছিল ১ মে। ন্যাবের চেয়ারম্যান এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাজির আহমেদ বাট স্বাক্ষরিত সেই পরোয়না অনুযায়ী, আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি হিসেবে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ন্যাবের অভিযোগ অনুযায়ী, ক্ষমতায় থাকাকালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সোহাওয়া শহরে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের নামে ব্রিটেনের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে রাষ্ঠীয় কোষাগার থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার দিয়েছিলেন ইমরান খান, তার স্ত্রী বুশরা বিবি এবং ইমরানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের কয়েক জন জেষ্ঠ্য নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে জমি বরাদ্দ নেওয়া হয়, সেখান থেকেও ইমরান ও তার স্ত্রী সুবিধা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে পরোয়ানায়।
 
এদিকে, ইমরান খান গ্রেপ্তারের অল্প কিছু সময়ের মধ্যে পিটিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ মেহমুদ কুরেশি ও সেক্রেটারি জেনারেল আসাদ ওমর দেশবাসীকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভের আহ্বান জানান। তারপর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয় পাকিস্তানজুড়ে। পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে, সত্তরের দশকে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত পাক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলি ভুট্টোর গ্রেফতারির প্রতিবাদেও পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভ হয়েছিল; কিন্তু সরাসরি সরাসরি সামরিক বাহিনীর ওপর সেই আঁচ আসেনি। দেশটির গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সেনানিবাস ও সেনা সদরদপ্তরে সাধারণ জনগণের হামলার ঘটনা ঘটল।
দেশকন্ঠ/অআ

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।