মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : নাজমুল হোসেন শান্তর মতো সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে যে পরিমান ট্রল করা ক্রিকেটার বাংলাদেশে তো বটেই উপমহাদেশে সেভাবে নেই। জাতীয় দলের সাবেক কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকেও কম কথা শুনতে হয়নি। তবু এই দক্ষিন আফ্রিকান টলে না গিয়ে এই বাহাতি ব্যাটারকে খেলার সুযোগ দিয়ে গেছেন। কি কারণে তার সুযোগ পাওয়া সেটা কিছুটা বিলম্বে হলেও প্রমাণ করে চলেছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের শান্তর প্রথম সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরা হয়ে সতীর্থ তাওহিদ হৃদয়কে কৃতিত্ব দিয়ে দারুণ মনের পরিচয় দিয়েছেন। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ এখন সিরিজে এগিয়ে রয়েছে ১-০ গোলে। এখন তাই সিরিজ হারের কোন শংকা নেই তামিম ইকবালের দলের সামনে। রবিবার শেষ ম্যাচ জিতলে ২-০ ব্যবধানে জিতবে বাংলাদেশ। ৩২০ রানের টার্গেটে জিতে পরদিনই দারুণ সুখবর পেয়েছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শীষ্যরা। র্যাংকিংয়ে ভারতকে পেছনে ফেলে এখন তিন নাম্বারে উঠে এসেছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। এই জয়ে আইসিসির ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে তিনে বাংলাদেশ।
দারুণ আর রোমাঞ্চকর ম্যাচে আইরিশদের ৩ উইকেটে হারিয়ে আরও ১০ পয়েন্ট যোগ হওয়ায় বাংলাদেশের পয়েন্ট দাঁড়ায় ১৪৫-এ। ভারতের চেয়ে ৬ পয়েন্ট বেশি নিয়ে তিনে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ২৩ ম্যাচে তামিমবাহিনীর জয় ১৪টি। ২১ ম্যাচে ভারতের জয় ১৩টি। বাংলাদেশের উপরে আছে কেবল ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। দুইয়ে থাকা ইংলিশদের পয়েন্ট ১৫৫ এবং শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ১৭৫ পয়েন্ট। আর ১৩০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে অবস্থান করছে পাকিস্তান। এদিকে নাজমুল হোসেন শান্তর অভিষেক সেঞ্চুরি এবং তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়তে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। যেখানে সব মিলিয়ে এটি থাকছে দুই নম্বরে। এর আগে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের দেড়শতম জয়ের মাইলফলক এটি। ৪১১ ম্যাচ খেলে এই কীর্তি অর্জন করেছে তারা। বিপরীতে হেরেছে ২৫২ ম্যাচ।
ফল আসেনি বাকি ৯টিতে। নিরপেক্ষ ভেন্যু ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে দ্বিতীয় ম্যাচেও বৃষ্টির কারণে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। বাংলাদেশ সময় ৩টা ৪৫ এর সময় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেই টস অনুষ্ঠিত হয়েছে সাড়ে ৫টায়। খেলা শুরু হয়েছে ৬টায়। দেরিতে শুরু হওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্যও কমিয়ে আনা হয়েছে। দুই দল ৪৫ ওভার করে ব্যাট করার সুযোগ পায়। যেখানে প্রথমে ব্যাট করা আইরিশরা নির্ধারিত ৪৫ ওভার শেষে ৩১৯ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে আয়ারল্যান্ড। হ্যারি টেক্টরের অনবদ্য ১৪০ ও জর্জ ডকরেলের ঝড়ো ৭৪ রানে এই সংগ্রহ তোলে তারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শান্তর সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেট হারিয়ে ও ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৩২০ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৩ রানের মাথায় আউট হন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ওয়ান ডাউনে মাঠে নামেন শান্ত। প্রথমে লিটন দাস, এরপর সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে তুলে নেন নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও।
যদিও ৩২০ রানের লক্ষ্যে ১৩ রানে তামিমের বিদায়ের পর ৪০ রানের মাথায় ফেরেন লিটন (২১)। ১০১ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব (২৬)। চতুর্থ উইকেটে তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে এরপরে শান্ত গড়েন অনবদ্য জুটি। এই জুটিই মূলত বাংলাদেশকে জয় পাইয়ে দেয়। যেখানে দুজনে মিলে ১০২ বলে ১৩১ রান তোলেন। হৃদয় অভিষেক ফিফটির পর ৫৮ বলে ৬৮ রান করে ডকরেলের শিকার হন। তিনি ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। আর বাঁহাতি শান্ত ৯৩ বলে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১৭ করে ক্যাম্ফারের বলে বিদায় নেন। শেষ দিকে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ২৮ বলে ৪টি চারে অপরাজিত ৩৬ রানে জয় নিশ্চিত করে সফরকারীরা। এছাড়া ১৯ রান করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আইরিশ বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট পান ক্যাম্ফার ও ডকরেল। টস হেরে এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নামে আয়ারল্যান্ড। ব্যাটে নেমে পেসার হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে পড়ে আইরিশরা। ১৬ রান তুলতেই হারায় দুই উইকেট। প্রথম ওভারেই আইরিশ শিবিরে আঘাত হানেন হাসান। ওভারের পঞ্চম বলে পল স্টার্লিংকে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। কোনো রান না করেই ফেরেন স্টার্লিং। সপ্তম ওভারে আবারও হাসানের আঘাত। এরপর যা করার সেটাই করেন হ্যারি টেক্টর ও জর্জ ডকরেল। বাংলাদেশি বোলারদের রীতিমতো ছাতু বানিয়ে ছাড়ের এই দুই ব্যাটার। যদিও শেষ র্পযন্ত ম্যাচটা জিতে ফিরতে পেরেছে সফরকারীরা এটাই শান্তনা। এবার তৃতীয় ম্যাচেও জয়ের লক্ষ্য।
দেশকণ্ঠ/আসো