• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ১১:৩১    ঢাকা সময়: ২১:৩১

‘কালো’ বলেই বারবার বর্ণবাদের শিকার ভিনিসিয়ুস

দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : বর্ণবাদের কালো থাবা এখন ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের দিকে তাক করা আছে। শুধু তাই নয়, এই ব্রাজিলিয়ানকে ঘিরেই এখন সবকিছু আবর্তিত হচ্ছে। তাকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন সাদা চামড়ার মানুষগুলো। মূলত গায়েল রং কালো বলেই বারবার শিকারে পরিণত হচ্ছেন তারা। সে কারণে ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ স্পেন আর লিগ বলতে লা লিগাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মায়োর্কা, রিয়াল ভায়াদোলিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ, বার্সেলোনার পর ভ্যালেন্সিয়া—লা লিগার এবারের মৌসুমে এ নিয়ে পাঁচবার প্রতিপক্ষের মাঠে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। দু’দিন আগে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে বর্ণবাদের শিকার হওয়ার পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভিনি। একের পর এক বর্ণবাদের ঘটনায় দায়ী করেন লা লিগা কর্তৃপক্ষকে। মেস্তায়া স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদের হারের ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার এক সমর্থক ভিনিকে উদ্দেশ করে কিছু একটা বলেন। জবাবে সেই দর্শকের দিকে তেড়ে যান রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। ম্যাচের শেষ দিকে ভ্যালেন্সিয়া খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে লাল কার্ড দেখানো হয় তাকে।
 
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর বর্ণবাদ নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভূমিকার সমালোচনা করেন ভিনিসিয়ুস। ২২ বছর বয়সী তারকা টুইটারে লেখেন, ‘এটা প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার নয়। লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন এটা মনে করে এবং সমর্থকদের দলগুলো সাহস জোগায়।’ সঙ্গে এও বলেন, ‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্পেন আজ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।’ ভিনিসিয়ুসের বক্তব্যের পর লা লিগার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করতে ম্যাচের সব ছবি ও ভিডিও নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে ঘৃণিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এখন প্রশ্ন, কেন বারবার বর্ণবাদের শিকার ভিনিসিয়ুস? রবার্তো কার্লোস, রোনালদিনহো থেকে স্যামুয়েল ইতো, কেউই বাদ যাননি। লা লিগায় এসে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছিলেন তাঁরাও। লাতিন ও আফ্রিকার অনেক কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারকে এমন দুঃসহ মুহূর্তের মুখোমুখি হতে হয়েছে বহুবার। ইউরোপীয় ফুটবলে বর্ণবাদ যেন নৈমিত্তিক ঘটনা!
 
ইন্টার মিলান ছেড়ে কার্লোস রিয়াল মাদ্রিদে এসে বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন। সেবার বার্সেলোনার সাবেক মিডফিল্ডার পেপ গার্দিওলা বলেছিলেন, স্প্যানিশ ফুটবলে বর্ণবাদ স্বাভাবিক বিষয়। ম্যানচেস্টার সিটির কথা যে ঠিক, সেটা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে ১-০ গোলে হেরেছে রিয়াল। তবে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের হারের চেয়েও ম্যাচটি এখন আলোচনায় ভিনির আবারও বর্ণবাদের শিকার হওয়া ঘটনা। প্রতিপক্ষ দলের এক সমর্থক রিয়াল উইঙ্গারকে উদ্দেশে কিছু বললে তেড়ে পাল্টা জবাব দেন ভিনি। এ সময় অনেকক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। এ ঘটনায় ভিএআর দেখে যোগ করা ষষ্ঠ মিনিটে ভিনিকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম লাল কার্ড দেখলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। দর্শকদের বর্ণবাদী আচরণ ভিনির জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে মে পর্যন্ত ভিনি বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন সাতবার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে গিয়ে তাঁর গোল উদ্‌যাপন নিয়ে তো স্প্যানিশ ফুটবল পন্ডিতেরাও তির্যক মন্তব্য করেছিলেন। দর্শকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া ভিনিকে খেলার মাঠেও অন্য লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয়।
 
চলতি মৌসুমে ইউরোপের শীর্ষ সাত লিগের মধ্যে সর্বোচ্চ ফাউলের শিকার হয়েছেন তিনিই। সংখ্যাটা গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল ৭৯ বার। সবশেষ ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে চটেছেন ভিনি। ঘটনার পর ব্রাজিলিয়ান তারকার টুইট, ‘লা লিগায় বর্ণবাদী আচরণ খুবই স্বাভাবিক বিষয়। ফেডারেশনও তাই মনে করে। যে টুর্নামেন্ট একসময় রোনালদিনহো, রোনালদো, ক্রিস্টিয়ানো, মেসিদের ছিল, এখন তা বর্ণবাদীদের। স্প্যানিশদের অনেকেই হয়তো আমার সঙ্গে একমত হবেন না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন ঘটনা প্রতি সপ্তাহে ঘটে। আমার কিছুই করার থাকে না তখন। তবে আমি এই বর্ণবাদের শেষ দেখে ছাড়ব।’ তবে বর্ণবাদের ঘটনায় উল্টো ভিনির ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছেন লা লিগা সভাপতি। হাভিয়ের তেবাসের পাল্টা টুইট, ‘লা লিগার সমালোচনা করার আগে নিজেকে সঠিকভাবে জানা জরুরি। তোমাকে যেন কেউ কাজে লাগাতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত।’ কথার লড়াই এখানেই থেমে থাকেনি। ভিনির পাল্টা টুইট, ‘বর্ণবাদের সমালোচনা না করে লা লিগার সভাপতি সামাজিক মাধ্যমে আমাকে পাল্টা আক্রমণ করলেন। আপনি যতই না বোঝার ভান করুন, এটা আপনার সুনাম নষ্ট করবে। আপনার পোস্টের কমেন্টগুলো দেখলে অবাক হবেন। নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ায় আপনার আর বর্ণবাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য রইল না।’
 
তেবাস প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ালেও ভিনির ওপর বর্ণবাদীর অভিযোগের তদন্তের কথা জানিয়েছে লা লিগা। তাঁর ক্লাব রিয়ালও বর্ণবাদকে ‘ঘৃণামূলক অপরাধ’ অভিহিত করে স্প্যানিশ প্রসিকিউটরদের কাছে ফৌজদারি অভিযোগ করেছে। এছাড়াও ভিনি পাশে পাচ্ছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোকে। রিয়াল তারকাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থন জানিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, রোনালদো নাজারিও, আনচেলত্তি, রিও ফার্দিনান্দ, গ্যারি লিনেকার। এরপর বর্ণবাদের শিকার হওয়ার প্রমাণ দিলেন ভিনিসিয়ুস। কেউ কথা বলছেন ভিনির পক্ষে, কেউ তাঁর বিপক্ষে। থেমে থাকছেন না ভিনি নিজেও। নিজের ওপর বর্ণবাদী আক্রমণের প্রমাণ দিলেন ব্রাজিলের এই স্ট্রাইকার। নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন ভিনি। গত এক বছরে তিনি কীভাবে বর্ণবাদের শিকার হলেন তাঁর প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরেছেন এই ভিডিওতে। দর্শকদের স্লেজিং তো রয়েছেই। তাঁকে উদ্দেশ্য করে মাঠ থেকে ছোড়া হচ্ছে কলা। কৃষ্ণাঙ্গ বাঁদর, এসব বলেও কটূক্তি করা হয়েছে। এমনকি তাঁর মৃত্যু কামনা করে গ্যালারি থেকে স্লোগান দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্রও দেখা গেছে মাদ্রিদের রাস্তায়।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।