দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : বিদেশে কফ বা কাশির সিরাপ রপ্তানির আগে সেগুলো সরকারি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করাতে হবে। সোমবার (২২ মে) এমন নির্দেশনা জারি করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী ১ জুন থেকে নির্দিষ্ট কয়েকটি সরকারি ল্যাবে এ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত বছর গাম্বিয়া ও উজবেকিস্তানে ভারতীয় কফ সিরাপ সেবনের পর শতাধিক শিশুর মৃত্যুর পরই এমন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। গত এক বছরে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের কফ সিরাপ রপ্তানি করেছে ভারত। এরপরই গাম্বিয়ায় শিশুদের মৃত্যুর বিষয়টি সামনে আসে। ডিরেক্টর জেনারেল অফ ফরেন ট্রেডের পক্ষ থেকে সোমবার বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, কফ সিরাপ রপ্তানির আগে সরকারি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করাতে হবে। নমুনা পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই বিদেশে রপ্তানির অনুমতি মিলবে।
ভারত বিশ্বব্যাপী জেনেরিক ওষুধের বৃহত্তম সরবরাহকারী। বিভিন্ন ভ্যাকসিনের ৫০ শতাংশের বেশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জেনেরিক চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে সমস্ত ওষুধের প্রায় ২৫ শতাংশ সরবরাহ করে দেশটি। এছাড়া ভারত বিশ্বব্যাপী ওষুধ উৎপাদনের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে বিশাল আকারের এই শিল্পকে গত বছর ধাক্কা দিয়ে যায় গাম্বিয়া ও উজবেকিস্তানের শিশুদের মৃত্যু। কিডনি জটিলতায় ভুগে ২০২২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় অন্তত ৭০ জন এবং মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে ১৯ শিশুর মৃত্যু হয়। মৃত এই শিশুদের নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, এরা সবাই ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভারতীয় কোম্পানি মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস ও ম্যারিয়ন বায়োটেকের তৈরি কফ সিরাপ সেবন করেছিল এবং সিরাপে থাকা দুষিত পদার্থের বিষক্রিয়াতেই তাদের কিডনি বিকল হয়েছে।
গাম্বিয়ার শিশুদের মৃত্যুর জন্য দায়ী মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদিত কফ সিরাপ, আর উজবেকিস্তানে শিশুদের মৃত্যু ঘটেছে ম্যারিয়ন বায়োটেকের তৈরি সিরাপ সেবন করে। পরে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরীক্ষায় দুই কোম্পানির কফ সিরাপে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে এথিলিন গ্লাইকোল এবং ডায়াথিলিন গ্লাইকোল নামের দু’টি রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই দু’টি রাসায়নিক তেমন ক্ষতিকর না হলেও শিশুদের জন্য এগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারা বলেন, মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ম্যারিয়ন বায়োটেকের সিরাপে অধিক পরিমাণ এথিলিন গ্লাইকোল ও ডায়ালিথিন গ্লাইকোলের উপস্থিতি তারা দেখেছেন, এই পরিমাণ রাসায়নিক কোনো পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে প্রবেশ করানো হলে তিনিও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরবেন। মেইডেন এবং ম্যারিয়ন অবশ্য শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই দুটি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন ও বিপননসহ যাবতীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গত বছরই।
দেশকন্ঠ/অআ