দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, মেয়র পদে যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি তাকে মেনে নিয়েছেন। পাশাপাশি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আজমত উল্লা খানের পরাজয়ের কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন তার কর্মী, সমর্থক ও ভোটারেরা।
অনেকেই বলছেন, এক প্রার্থীর ব্যাজ পরে অপর প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া, কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাজ ধারন করে নৌকার বিপক্ষে কাজ করা, আগের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের কেন্দ্র কমিটির সদস্য বাদ না দিয়ে তাদের নিয়েই কেন্দ্র কমিটি করা, প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা কারণ উল্লেখ করেছেন অনেকেই।
টঙ্গী অলিম্পিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন শাহাদত হোসেন পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (বৈদ্যুতিক মালামাল খুচরা বিক্রেতা)। তার মতে, আজমত উল্লা খান পরাজয়ের পেছনে তার কর্মীরাই কাজ করেছে। অনেক কর্মী নৌকা প্রতীকের ব্যাজ ধারন করে অন্য প্রতীকের ভোট চেয়েছেন।
এই ব্যবসায়ীর জানান, টঙ্গী অলিম্পিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের কোনো নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন না। জায়েদা খাতুনের পক্ষে ভোট কেন্দ্রের আশপাশে কোনো কর্মীকেও প্রকাশ্যে পাওয়া যায়নি। অথচ ওই কেন্দ্রেই নৌকা প্রতীকের ব্যাজ লাগিয়ে জায়েদা খাতুনের ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রে ঘড়ি প্রতীক সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে।
মহানগরে আরিচপুর এলাকার ফিরোজ হোসেন বলেন, “সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা জায়েদা খাতুন ভোট চাওয়ার সময় মানুষের মনে আবেগের জায়গায় নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং সক্ষম হয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার, এরপর থেকে গণমাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমের কান্না, মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া এসব বিষয়গুলোকে তারা খুব কৌশলে সামনে নিয়ে এসেছেন। ভোট চাওয়ার ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলমকে আইনিভাবে অভিযুক্ত করার বিষয়ে আইনী ফাঁক-ফোকর ভোটারদের মধ্যে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। তারা বঞ্চিত হওয়ার যেসব কারণ উল্লেখ করেছেন ভোটারেরা সে কারণগুলো আইনের চোখে বিচার করেনি। আবেগ-অনুভূতির দৃষ্টিতে বিচার করেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের ভোট তাদের পক্ষে গেছে।”
নগরীর ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। নিজেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক দাবি করে তিনি বলেন, “গত নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সে সময় কেন্দ্র কমিটিতে যারা ছিলেন এবারও তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন। তাদের মধ্যে এরকমও ছিলেন যারা জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত লোক ছিলেন। দলীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে প্রকাশ্যে যোগাযোগ করেননি। তাদেরকে স্থানীয় দলীয় লোকজন নির্বাচনের কারণে মেনে নিয়েছেন। অর্থাৎ জাহাঙ্গীর আলমের গঠিত কেন্দ্র কমিটি পুরোপুরি পরিবর্তন করে নতুন মুখদের দিয়ে কেন্দ্র কমিটি করলে হয়তো এমন ফল হতো না।”
মেয়র পদে নির্বাচিত জায়েদা খাতুনের ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা বড় ভাই। তাকেসহ নগরীর সকল পর্যায়ের মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।”
অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। মেয়র পদে যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি তাকে মেনে নিয়েছেন। ইভিএমের ত্রুটির কারণে অনেকে ভোট দিতে পারেননি। ফল যা হয়েছে, আমি তা মেনে নিয়েছি। তিনি (জায়েদা) কোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে সেটা যদি যৌক্তিক হয় তাহলে সহযোগিতা করবো। যেহেতু আমি দলীয় মনোনীত প্রার্থী ছিলাম, সেহেতু ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে পর্যালোচনা করে চিহ্নিত করবেন। দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
নির্বাচনে জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি) ২,৩৮,৯৩৪ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২,২২,৭৩৭ ভোট।
দেশকণ্ঠ/আসো