দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মোখা সেন্টমার্টিন উপকূল অতিক্রম করার সময় জোয়ার পায়নি, যার কারণে জলোচ্ছ্বাসও হয়নি। এতে দ্বীপের ক্ষতি কমেছে কয়েকগুণ। ক্ষতি কমলেও সেন্টমার্টিনে ভয়ংকর তাণ্ডব চালিয়েছে মোখা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর অংশের উপকূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সাগর গর্ভে হারিয়ে গেছে। এছাড়াও দ্বীপের গলাচিপা অংশের দুই পাশ ইরোসনের (ক্ষয়) কারণে সাগরতলে মিশে গেছে। আবু শরীফ মো. মাহবুব-ই-কিবরিয়া বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সাগরে এক ধরনের আন্দোলন তৈরি হয়। সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে কেন্দ্রমুখে চারদিকের বায়ু একত্রিত হতে থাকে। এতে সাগরের ওপর বায়ু প্রবাহের একটি চক্র গঠিত হয়ে ঘুরতে থাকে। সাধারণত সমুদ্রের উপরিভাগ থেকে ১০০ মিটার গভীর পর্যন্ত পানির মধ্যে ঝড়ের প্রভাব দেখা যায়। তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে। এটা নির্ভর করে সাগরের ভৌত কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের ওপর।’
তিনি জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা বঙ্গোপসাগরের গভীর থেকে বিশাল আকারের বায়ুচক্র নিয়ে কক্সবাজার উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয়। গভীর থেকে অগভীর সমুদ্র দিয়ে উপকূল পাড়ি দেওয়ার সময় সাগরের নিচের ঠান্ডা পানিকে উপরে আর উপরের গরম পানিকে নিচে স্থানান্তরিত করে। ফলে নিচের নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ পানি উপরে এসে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোপ্লাঙ্কটন তৈরি করে। ফাইটোপ্লাঙ্কটনের আধিক্যের ফলে জুপ্ল্যাঙ্কটনের আধিক্যও বেড়ে যায়। এতে সাগরের উৎপাদনশীলতা বাড়ার কারণে সাগরে বসবাসরত সব জীবের খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি পায়। এ কারণে ঝড় পরবর্তী সময়ে সাগরে মৎস্য সম্পদ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি হবে। এছাড়াও, সাগরতলের মিক্সড লেয়ার, বেরিয়ার লেয়ার, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও অন্যান্য প্যারামিটারগুলোর পুনর্সাজন সংঘটিত হয়। যা সাগরের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন বোরি বিচ উপকূল এলাকায় ফাইটোপ্লাঙ্কটন ব্লুম পরিলক্ষিত হয়। ডায়াটম নামক এক ধরনের এককোষী জীবের আধিক্যের কারণে এটি হয়েছে বলে প্রাথমিক গবেষণায় জানা যায়। বিশাল এলাকাব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী ব্লুম সাগরের প্রাণিকুলের জন্য ক্ষতিকারক হলেও অস্থায়ী ব্লুমে ক্ষতির পরিমাণ নগণ্য।’
এই বিজ্ঞানীর মতে, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির হিসাবটা গভীর সাগরের চেয়ে উপকূলে বেশি দেখা যায়। উপকূলের কাছের অগভীর সাগরতলে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবের বাস্তুসংস্থান বিনষ্ট হয়। উপকূলে সেডিমেন্টেসনের মাত্রার পরিবর্তন সাধিত হয়, প্রচুর পরিমাণে সাধু পানি উপকূলের লবণাক্ত পানির সঙ্গে মিশ্রিত হয় এবং অনেক জায়গায় সেডিমেন্ট এক্রিসন ও ইরোসন হয়। ঘূর্ণিঝড় মোখায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর অংশের উপকূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সাগরে মিশে গেছে। এছাড়াও দ্বীপের গলাচিপা অংশের দুই পাশ ইরোসনের কারণে সাগরে হারিয়ে গেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন ভূমিতে অবস্থিত ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশুপাখি, স্থাপনা, গাছপালা ও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।’
দেশকন্ঠ/অআ