দেশকণ্ঠ প্রতিনিধি : যুব বিশ্বকাপের স্বপ্ন নিয়ে অনুর্ধ্ব-২১ কাপে খেলছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের মধ্যে দুটিতে জিতে এখনো সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম ম্যাচে ওমানকে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে পরাজিত হয় প্রিন্স লাল সামন্তর দল। এরপর তৃতীয় ম্যাচে এসে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে জয় কিছুটা স্বস্থি দিয়েছে। রবিবার দক্ষিন কোরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে মামুনুর রশিদ ও হেদায়েতুল ইসলাম রাজিবের শীষ্যরা। এর আগে জুনিয়র এশিয়া কাপ হকিতে বাংলাদেশ আর মালয়েশিয়া, দুই দলই শুরুটা করেছে জয় দিয়ে। তবে দুই দলের জয়ের ব্যবধানটাই জানান দিচ্ছে দল দুটোর শক্তি-সামর্থ্যের ফারাকটা কতটা। মালয়েশিয়া যেখানে উজবেকিস্তানকে হারিয়েছে ৮-১ ব্যবধানে, সেখানে বাংলাদেশ স্বাগতিক ওমানকে কষ্টে-সৃষ্টে হারিয়েছে ২-০ ব্যবধানে। এরপর সেই মালয়েশিয়ার বিপক্ষেই হারতে হয়েছে। দুই দলের র্যাঙ্কিংটাই পরিস্কার বার্তা দেবে। মালয়েশিয়া আছে তালিকার সেরা দশে (১০) আর বাংলাদেশের অবস্থান ২৯-এ। দুই দলের সবশেষ দেখা হয়েছিল ২০১৫ সালে। আট বছর আগে এই জুনিয়র এশিয়া কাপেরই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৮-০ ব্যবধানে। যদিও এবার হারটা ব্যবধান কমে ৫-১ এ এসে দাড়িয়েছে।
শুক্রবার উজবেকিস্তানকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। ওই ম্যাচ জিতলেই সেমিতে ওঠা নিশ্চিত হয়ে যাবে লাল-সবুজের। উজবেকদের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে দলকে জয় এনে দেন তরুন ডিফেন্ডার আমিরুল ইসলাম। বাংলাদেশের হয়ে অপর গোলটি করেন আবেদ উদ্দিন। ম্যাচে উজবেকিস্তানের হয়ে এক গোল শোধ দেন ফুজিবেক হুসানভ। খেলার প্রথম তিন কোয়ার্টারে তিন গোল পায় বাংলাদেশ। প্রথম কোয়ার্টারের ১৫তম মিনিটে গিয়ে প্রথম গোলের মুখ দেখে বাংলাদেশ। দারুণ গোলে দলকে শুরুর অগ্রগামিতা এনে দেন আমিরুল (১-০)। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের ২২তম মিনিটে আবারো গোলের উচ্ছ্বাস বাংলাদেশ শিবিরে। এবারো গোলদাতা সেই আমিরুল (২-০)। প্রথম দুই অর্ধে দাপুটে খেলে বাংলাদেশ। এ সময় উজবেকরাও বেশ কয়েকবার বল নিয়ে বাংলাদেশের বক্সে ঢুকে পড়ে। তবে রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় গোলের হাত থেকে বেঁচে যায় দল।
এরপর তৃতীয় কোয়ার্টারের শুরুতেই আবারো গোল বাংলাদেশের। জয়ের কাছ থেকে পাওয়া বল আলতো টোকায় জালে পুরেন আবেদ। ৩-০ গোল ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ দুই কোয়ার্টারে বেশ কয়েকটি পেনাল্টি কর্নার আদায় করে প্রিন্স বাহিনী; কিন্তু পেলান্টি কর্নারটি গোলে রূপ দিতে পারেননি খেলোয়াড়রা। উল্টো খেলার চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টারে হুসানভের কোনাকুটি শটে পাওয়া গোলে ব্যবধান ৩-১ গোলে নামিয়ে আনে উজবেকিস্তান। এর আগে এশিয়া সেরা হওয়ার পর এবার বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের যুব হকি দল। এএইচএফ (এশিয়ান হকি ফেডারেশন) কাপ অনুর্ধ্ব-২১ বাছাই হকি চ্যাম্পিয়নশীপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ফাইনালে স্বাগতিক ওমানকে টাইব্রেকারে ৭-৬ গোলে পরাজিত করে দ্বিতীয় শিরোপা জয় করে প্রিন্স লাল সামন্ত’র নেতৃত্বাধীন দলটি। ২০১৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া সেরা আসরে শিরোপা জিতেছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। এবার যুব বিশ্বকাপে চোঁখ দলের।
স্বপ্নপূরণে আটঘাট বেঁধে নেমেছিল হকি ফেডারেশন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি ওমানে কয়েক বছরের বিরতির পর আন্তর্জাতিক হকিতে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ যুব হকি দল। এর আগে বয়সভিত্তিক এই দলটি সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। গ্রুপ পর্বে হংকংকে ৪-০, শ্রীলঙ্কাকে ১৪-০ ও উজবেকিস্তানকে ৬-১ গোলে হারিয়ে অপরাজিত থেকে শেষ চারে জায়গা করে নেয়। প্রথমবার বাংলাদেশ যুব হকি এএইচএফ কাপের বাছাই পর্বেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আট বছর পর যে আবার অনূর্ধ্ব-২১ হকির ট্রফি জিতেছে। আসরের মূল পর্বের খেলাও হবে এই মাসকটেই। বাছাই পর্বে লাল-সবুজ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন মামুনুর রশীদ। তার সহকারী ছিলেন ফ্রাঞ্চাইজি হকির শিরোপাজয়ী দল একমি চট্টগ্রামের কোচ হেদায়েতুল ইসলাম রাজিব। মামুনের আবার ‘ডাবল অর্জন’ হয়েছে বলে বলা যায়। সর্বশেষবার অনূর্ধ্ব-২১ হকির প্রথম শিরোপা এসেছিল সাবেক এই তারকার হাত ধরে। বাছাইপর্বের পর আবারও দায়িত্ব পেয়ে শিরোপা এনে দিয়েছেন দেশের হকির অভিজ্ঞ এই ব্যক্তিত্ব। তবে এখানেই থেমে থাকতে চাইছেন না ঘরোয়া হকিতে নিয়মিত সাফল্য পাওয়া কোচ মামুন। বাছাইপর্ব পেরিয়ে এখন চোখ রেখেছেন মূল পর্বে খেলার।
যেখানেও তার স্বপ্নটা বেশ বড়ই বলা যায়। মূল পর্বে এশিয়ার শীর্ষ দল হিসেবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, পাকিস্তান ও ভারতের মতো দলের সাথে খেলতে হবে। তাদের সঙ্গে যোগ দেবে বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসা বাংলাদেশ, ওমান, থাইল্যান্ড ও উজবেকিস্তানসহ আরও একটি দেশ। মূল পর্বের শীর্ষ চার দল আবার খেলবে ২০২৪ জুনিয়র বিশ্বকাপে। বাংলাদেশের চোঁখ আসলে সেখানেই। ওমানে অনুষ্ঠিত বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মামুনের এখন উপলব্ধি এই দল নিয়ে বহু দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। দক্ষিন কোরিয়া ম্যাচের আগে কোচ মামুনুর রশিদ বলেন, ’কোরিয়া শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তবে আমাদেরকে সেমিফাইনালে খেলতে হলে জয়ের কোন বিকল্প নেই। মাঠে ছেড়ে কথা বলবেনা আমাদের খেলোয়াড়রা। আমি চমকের অপেক্ষায় রয়েছি’। এর আগে প্রত্যাশিতভাবেই জুনিয়র এশিয়া কাপ হকিতে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ দল।
দেশকণ্ঠ/আসো