দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : শেষ ওভারে চেন্নাই সুপার কিংসের জয় পেতে দরকার ছিল ১৩ রান। প্রথম তিন বলেই ইয়র্কার লেন্থে বল করেছেন মোহিত শর্মা। খরচ করেছেন মাত্র দুই রান। তখন ম্যাচের পেন্ডুলাম দুলছিল দু’দিকে। যার ধারাবাহিকতায় শেষ দুই বলে চেন্নাইয়ের ১০ রান দরকার ছিল। প্রথম বলেই ছয় হাঁকিয়ে ম্যাচের লাগামে টান দেন জাদেজা। বাকি কাজটাও তিনিই সেরেছেন। ডান পায়ে উড়ে আসা ফুলটস বল পেছনে ঠেলে দিয়ে দৌড়। বল ততক্ষণে সীমানা পেরিয়ে গেছে। এর আগে খুনে মেজাজ কাকে বলে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিয়েছে চেন্নাই! বৃষ্টি যেন তাদের ব্যাটারদের তাতিয়ে দিয়েছিল। ক্রিজে নামা প্রত্যেকেই ১৫০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন। তারা যেভাবে তাণ্ডব শুরু করেছিলেন, মনে হয়েছিল গুজরাটের দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্য অনেক আগেই তারা পেরিয়ে যাবে। তবে এরপরই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন আফগানিস্তানের তরুণ স্পিনার নুর আহমদ। একই ওভারে ডেভন কনওয়ে ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে ফেরান তিনি। তবে সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে একই গতিতে ব্যাট চালিয়েছেন আম্বাতি রাইডু।
নাটকীয়তার বাকিটা রাইডু নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর চেন্নাইয়ের তিন ওভারে দরকার ছিল ৩৭ রান। সেই সময় ওভার করতে আসেন মোহিত শর্মা। তার প্রথম তিন বলেই দুই ছয় ও এক চারে রাইডু বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে চতুর্থ বলেই তুলে মারতে গিয়ে বোলারের তালুবন্দী হন এই ডানহাতি ব্যাটার। পরের বলেই শেষ অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও। ম্যাচ আবারও জমে ওঠে। তবে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেও আশা পূরণ হয়নি মোহিতের। এর আগে বৃষ্টির কারণে রোববারের ফাইনাল গড়াল সোমবারে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করা গুজরাট ২১৫ রানের বড় লক্ষ্য দাঁড় করিয়েছিল চেন্নাইয়ের সামনে। রেকর্ড দশমবারের মতো ফাইনালে ওঠা চেন্নাইয়ের জন্য হয়তো এই লক্ষ্য তেমন বড় ছিল না। তবে মাঝে বাধ সাধে বৃষ্টি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর বল মাঠে গড়ানোর পর নতুন টার্গেট পায় তারা। ১৫ ওভারে টার্গেট দাঁড়ায় ১৭১ রান। সেই টার্গেটকে প্রায় মোয়া বানিয়ে ফেলেছিলেন দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ১৫ ওভারে গড়ে ১২ রানের কিছু বেশি প্রয়োজন ছিল। শুরু থেকেই যেন সেটিকে পাখির চোখ করেন দুই ওপেনার। ডিএলএস মেথডে ম্যাচের ওভারের সঙ্গে এদিন পাওয়ার প্লেও কমিয়ে আনা হয় ৪ ওভারে। সেই ৪ ওভারেই ৫২ রান তুলে চেন্নাই ম্যাচের লাগাম নিজেদের অধীনে নিতে শুরু করে।
বিধ্বংসী হয়ে ওঠা চেন্নাই শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন নুর আহমদ। বাঁ-হাতি এই ‘চায়নাম্যান’ স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে গায়কোয়াড় ক্যাচ আউট হয়ে যান। তার আগে ১৬ বলে ২৬ রান করেন এই তরুণ ব্যাটার। একই ওভারের শেষ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে ২৫ বলে ৪৭ রান করা কনওয়েও আউট। সেই ধাক্কায় চেন্নাইয়ের রানের গতি কমে আসার আভাস মিলেছিল। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলা দলটি এবার আর হারতে রাজি নয়। গত আসরের চ্যাম্পিয়নদের চোখে চোখ রেখে লড়ে যান পরবর্তীতে নামা রাইডু, শিবাম দুবে ও অজিঙ্কা রাহানে। তৃতীয় উইকেটে শিবাম দুবেকে নিয়ে অজিঙ্কা রাহানে তাণ্ডব শুরু করেছিলেন। জশ লিটলের করা ৮ম ওভারে ২ ছক্কায় পাল্টা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন রাহানে। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৫৯ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। এমন পরিস্থিতিতে ১১তম ওভারে ক্যাচ তুলে আউট হন রাহানে। ২ ছক্কা ও ২ চারে ১৩ বলে ২৭ রান করা রাহানে আউট হওয়ার পর জয়টা অনেক দূরের বন্দর মনে হচ্ছিল চেন্নাইয়ের জন্য। এরপর আম্বাতি রাইড়ুকে নিয়ে শেষ ৪ ওভারে ৫৪ রান তাড়ার করার চ্যালেঞ্জে নামেন দুবে। রশিদ খানের করা ১২তম ওভারে ২ ছক্কাসহ ১৫ রান তুলে দুবে ম্যাচটা জমিয়ে তোলেন। ৩ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য রশিদ খান হতাশ করেছেন গুজরাটের সমর্থকদের। জয়ের জন্য চেন্নাইয়ের লক্ষ্য ১৮ বলে ৩৯ রানে নেমে আসায় ম্যাচে ছিল দুই দলই।
এরপর মোহিতের ওভারের প্রথম তিন বলে ১৬ রান তোলার পরপর দুই বলে আউট হয়ে যান রাইডু ও ধোনি। ১২ বলে ২১ রানের দূরত্ব—এই পরিস্থিতিতে চেন্নাইকে আটকাতে ১৪তম ওভারটি করতে আসেন গুজরাট পেসার মোহাম্মদ শামি। তিনি ৮ রান দেওয়ায় শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৩ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। ইয়র্কার লেন্থে টানা তিন বল করে চেন্নাইয়ের নাকের ডগা থেকে প্রায় ম্যাচটি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন মোহিত। কিন্তু শ্বাসরুদ্ধকর সেই পরিস্থিতিতে আরও একবার নিজের অভিজ্ঞতা ও বুড়ো হাড়ের জোর দেখান জাদেজা। শেষ দুই বলে একটি করে ছয় ও চারে তিনি হলুদজার্সি-ধারীদের জয় নিশ্চিত করেন। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ পাঁচটি আইপিএল শিরোপা জেতা মুম্বাইয়ের পাশে বসল চেন্নাই। ২১ বলে ৩২ রানে দুবে এবং ৬ বলে ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন জাদেজা। গুজরাটের হয়ে মোহিত শর্মা ৩৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এদিন আগে ব্যাট করে সাই সুদর্শনের ৪৭ বলে ৯৬ রানের অনবদ্য ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ওভারে ২১৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় গুজরাট। যদিও বৃষ্টির কারণে ম্যাচের গণ্ডি এবং রানের সীমা কমে আসে। সুদর্শন ছাড়াও গুজরাটের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে ফাইনাল ম্যাচে ৩৯ বলে ৫৪ রান করেন ঋদ্ধিমান সাহা। এছাড়া শুভমান গিল ২০ বলে ৩৯ এবং অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া ১২ বলে ২১ রান করেন। চেন্নাইয়ের হয়ে লঙ্কান পেসার মাথিশা পাথিরানা ২টি এবং একটি করে উইকেট নিয়েছেন দীপক চাহার ও রবীন্দ্র জাদেজা।
দেশকন্ঠ/অআ