দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : পাবনায় সাড়া ফেলেছে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। ভারতীয় লেখক কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ এর নামে গত ১৯ মে চালু হয়েছে হোটেলটি। চালুর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হোটেলটি। ‘কুমড়ো ফুলের বড়া’, ‘বিউলির ডাল’, ‘ছ্যাঁচড়া’, ‘আম–তেল’, ‘মালপোয়া’, ‘চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল’, ‘চন্দ্রপুলি’এবং ‘কচুবাটা’ নামে ছিল উপন্যাসের মোট আটটি অধ্যায়। সেসব পদসহ উপন্যাসে উল্লেখিত হারিয়ে যেতে বসা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী আরও অনেক খাবার ফিরিয়ে এনেছে এই হোটেল। প্রতিদিনই হোটেলটি দেখতে ও খাবারের স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন নানা বয়সী অসংখ্য নারী-পুরুষ। ঘরোয়া পরিবেশে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার পরিবেশন এবং খাবারের মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন তারা। সম্প্রতি দর্শকদের মন কেড়েছে কল্লোল লাহিড়ী রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ নামে একটি ভারতীয় ওয়েব সিরিজ। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে একজন নারীর জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি পুরোনো দিনের অনেক সুস্বাদু বাঙালি খাবারের নাম। যার নাম জানেন না এ প্রজন্মের অনেকেই। আবার সেসব খাবারও সচরাচর এখন আর দেখা যায় না। তবে সেই ইন্দুবালা ভাতের হোটেল যেন বাস্তবে ফিরে এসেছে। পাবনা সদর উপজেলার জালালপুর এলাকায় ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পাশে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের দেখা মিলবে। হোটেলের প্রবেশমুখেই রয়েছে নামের সাইনবোর্ড। যেখানে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার মেনু এবং মূল্য তালিকা দেওয়া হয়েছে।
চালু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল এই ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। ঘরোয়া পরিবেশে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়ে নারীদের খাবার পরিবেশনে রয়েছে ভিন্নতা। কলাপাতায় খাবার পরিবেশনে বাঙালিয়ানার দেখা মিলছে সেখানে। ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের নাম শুনে একনজর দেখতে ও খাবারের স্বাদ নিতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। সাশ্রয়ী মূল্যে হারিয়ে যাওয়া নানা পদের খাবারে মুগ্ধ ভোজনরসিকরা। সরেজমিনে হোটেলে কথা হয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানাউল্লাহ, জনি সাহা, মাইমুনা আক্তার, আনজুমান আক্তারসহ অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, অন্য হোটেলের তুলনায় এখানে দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় হোটেলটি চালু হওয়ার পর প্রায়ই খেতে আসি। আমাদের অনেক বন্ধুরা প্রতিদিন শহরের মেস বা ক্যাম্পাসের হোষ্টেল থেকে খাবার খেতে আসে। শুধু তাই নয় আমাদের শিক্ষকরাও এখানে খাবার খেতে আসেন। বাহারি আইটেমের খাবারের স্বাদ নিতে বাগেরহাট থেকে এসেছেন শেখ সোহান। তিনি বলেন, ইন্দুবালা ভাতের হোটেল আমরা বইয়ের পাতাতে পড়েছি। কিন্তু বাস্তবে দেখা পাইনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু দিন ধরে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের নাম দেখে আমরা কয়েকজন পাবনায় আসছি। এই হোটেলে দুপুরের খাবার খাচ্ছি। খাবারের সকল আইটেম খুব দারুণ হয়েছে। অল্প দামে ভালো মানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এখানে। এখানে এসে প্রথমে যেটা দেখছি অনেক মানুষের ভিড়। সকলকে সিরিয়াল অনুযায়ী খাবার দেওয়া হচ্ছে।
পাবনা তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক দেওয়ান মাহবুব বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই ফেসবুকে ও সবার মুখে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের নাম শুনে খেতে আসলাম। খাবার পরিবেশন, পরিবেশ, খাবারের মান সব কিছুই ভালো লেগেছে। ঘরোয়া পরিবেশে বাঙালিয়ানায় তৃপ্তি পেলাম। সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক শিবলি মাহবুব বলেন, এই হোটেলের খাবারের আইটেমগুলো আমরা ফেসবুকে দেখতে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে খেতে আসছি। সব ধরনের খাবারে আইটেমে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। বাঙালি ঐতিহ্য ফিরিয়ে এসেছে এখানকর খাবার পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে। এখানে এসে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো বসে থেকে আমরা সিরিয়াল পেয়েছি। অনেকক্ষণ বসে থাকলেও খাবার খাওয়ার পরে খুব ভালো লাগছে। হোটেলের ওয়েটার জোসনা আক্তার বলেন, আমাদের হোটেলেটি অল্প দিন চালু হয়েছে। মানুষের অনেক সাড়া পাচ্ছি। এখন অনেক মানুষ খাবার খেতে আসছে। অনেক আইটেম রয়েছে সেগুলো একদম ব্যতিক্রম। খুব অল্প দামে এমন খাবার অন্য কোথাও পাওয়া যায় কিনা আমাদের জানা নেই। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের এখানে খাবার খাওয়ার জন্য মানুষ আসছে। যে খাবার অর্ডার করা হচ্ছে সেগুলো আমরা খুব সুন্দরভাবে পরিবেশন করে যাচ্ছি।
হোটেলটির উদ্যোক্তা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সোহানী হোসেন বলেন, উপন্যাস পড়ে ও ভারতীয় ওয়েব সিরিজ দেখে সেখান থেকে ইন্দুবালা ভাতের হোটেল প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়েছি। পুরোনো দিনের হারিয়ে যাওয়া খাবার যেমন, নারকেল দিয়ে কচু বাটা, কুমড়োর ছককা, সোনামুগের ডাল, আম দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল, কচু ঘণ্টো, চিংড়ি ভর্তা, আম দিয়ে ডালসহ হরেক রকম খাবার নিজে রান্না করে খেয়ে দেখলাম ভালোই লাগছে। ভাবলাম ভোক্তাদেরও ভালো লাগবে। এখন মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। তিনি বলেন, এখনকার ছেলেমেয়েরা বার্গার, পিৎজাসহ নানা খাবারে বুদ হয়ে আছে। তাদের শারীরও মোটা হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাঙালি খাবারের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা হোস্টেলে থাকে, তাদের বাজেট কম থাকে। তারাও এখানে কম দামে ঘরোয়া পরিবেশে সুস্বাদু খাবার খেতে পারছে। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী বলেন, ফেসবুকে হোটেলটির বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। ভাবছিলাম ওয়েব সিরিজের ইন্দুবালা ভাতের হোটেল পাবনায় কী করে আসলো। বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে গিয়ে খেয়ে আসছি। সব কিছু মিলিয়ে ভালো লেগেছে। এটি জন্য চমৎকার উদ্যোগ।
দেশকন্ঠ/অআ