বিশেষ প্রতিবেদন : আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসিমোটে এক মৌসুমে কাটিয়েছেন প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি)। তাতেই যেন হাপিয়ে উঠেছেন। ক্লাব বদলের জন্য কয়েকমাস থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সে কারণেই বার্সেলোনা, মিয়ামি, আল হিলালের মতো ক্লাবের নাম উঠে এসেছে। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। কিছুদিন পরই শুরু হবে দলবদল। জুনের মাঝামাঝি শুরু হয়ে বিভিন্ন দেশে দলবদল চলবে আগস্ট পর্যন্ত। কে কোথায় যাবেন? সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে লিওনেল মেসির নাম। কোথায় যাবেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক? পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে জুন শেষ হলেই। এরপর কী? মেসি বার্সেলোনায় যাবেন, নাকি সৌদি আরবের আল হিলালে? নাকি আমেরিকার ইন্টার মিয়ামিতে? আর্জেন্টিনার সাংবাদিক মার্সেলো বেকলার দাবি করেছেন, মেসির বার্সেলোনায় যাওয়া সম্ভব নয়। এই সাংবাদিকই বার্সেলোনার ঘরের খবর সবার আগে প্রকাশ করেন। নেইমারের পিএসজিতে যাওয়ার খবর তিনিই প্রকাশ করেছিলেন সবার আগে। মার্সেলোর দাবির পেছনে বেশ যুক্তিও আছে। লা লিগার সঙ্গে বার্সেলোনার বেশ বোঝাপড়া আছে। ঋণে জর্জরিত বার্সেলোনার পক্ষে নতুন কাউকে চুক্তিবদ্ধ করা কঠিন হবে। আগে তাদের নিজেদের ফুটবলার ছাড়তে হবে। ফান্ড সংগ্রহ করতে হবে। এরপর নতুন কাউকে দলে নিতে পারবে বার্সেলোনা। এটা বেশ লম্বা সময়ের ব্যাপার।
সেই প্রক্রিয়ায় যেতে কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। লিওনেল মেসি কি সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন? ২০২১ সালে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল মেসির। দলবদলের সময় শেষ পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেছেন বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তির জন্য। কিন্তু তা হয়নি। এবার কি আর অপেক্ষা করবেন মেসি? বিশেষ করে যেখানে আল হিলালের লোভনীয় প্রস্তাব রয়েছে। এদিকে মেসির দলবদলের গুঞ্জনে নতুন মোড়। বার্সেলোনা কিংবা আল-হিলালে নয়, পরের মৌসুমেও তাকে দেখা যাবে পিএসজিতেই! ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের একটি প্রচারণামূলক ভিডিও অন্ত—ত তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমের জন্য হোম জার্সি উন্মোচন করেছে পিএসজি। সেই জার্সির প্রচারণামূলক ভিডিওতে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও নেইমারের সাথে দেখা গেছে মেসিকেও। যদিও নেইমার ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডকে যেতে পারেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে নিজেদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার লিওনেল মেসিকে ফেরাতে চায় বার্সেলোনা। আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের সঙ্গে চুক্তি নবায়নে আগ্রহী বর্তমান ক্লাব পিএসজিও। বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে ভেড়াতে দফায় দফায় মোটা অঙ্কের অর্থ প্রস্তাব করছে সৌদি প্রো লিগের দল আল হিলাল এফসি। সাতটি ব্যালন ডি’অরের মালিককে ভেড়ানোর প্রচেষ্টায় রয়েছে এমএলএস ক্লাব ইন্টার মায়ামিও। পরিস্থিতি এমন যে, লোভনীয় সব প্রস্তাবে খোদ আর্জেন্টিনা অধিনায়কও নিজের ভবিষ্যত ঠিকানা নির্বাচনে পড়ে গেছেন মধুর বিড়ম্বনায়। ২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেন লিওনেল মেসি। ফরাসি লিগ ওয়ানে নিজের প্রথম মৌসুমটা চেনা ছন্দে কাটাতে পারেননি আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। তখন অনেকেই ৩৫ বছর বয়সী মেসির ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিচ্ছিলেন। তবে বিশ্বকাপের পর বদলে যায় দৃশ্যপট। কাতারে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করে বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন মেসি। সদ্য শেষ হওয়া লিগ ওয়ানে পিএসজিকে শিরোপা জেতাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। তবে চ্যাম্পিয়নস লীগে ব্যর্থ হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে পিএসজি সমর্থকদের দুয়ো শুনতে হয় মেসিকে।
এরইমধ্যে ক্লাবের অনুমতি ছাড়া সৌদি আরব সফর করে দুই সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি। ঘটনার জেরে মেসিকে প্যারিস ছাড়া করতে আন্দোলনেও নামে পিএসজি সমর্থকরা। তার ওপর বেতন কমিয়ে মেসিকে চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব দেয় পিএসজি। সার্বিক দিক বিবেচনায়, মেসির নতুন ক্লাবে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের সম্ভাব্য নতুন ঠিকানা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে বৃটিশ সংবাদ সংস্থা সিএনএন। তা নিচে তুলে ধরা হলো। মেসির সম্ভাব্য নতুন ঠিকানা হিসেবে সবচেয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে বার্সেলোনার নাম। মূলত কাতালান ক্লাবটির হর্তাকর্তারাই মেসির স্পেন গমন নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছেন। কখনও সমর্থকদের প্রশ্নে বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা বলেন, ‘আগামী মৌসুম ন্যু-ক্যাম্পে দেখা যাবে মেসিকে।’ আবার কখনও কোচ জার্ভি হার্নান্দেজ বলেন, ‘দল পরিবর্তন নিয়ে মেসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে তাদের।’ ২০২২-২৩ মৌসুমে লা লিগা এবং কোপা দেল রে শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা। এবার মেসিকে ভিড়িয়ে নতুন মৌসুমে প্রাপ্তির খাতাটা ভরপুর করতে চান কোচ জাভি। সম্প্রতি স্প্যানিশ দৈনিক স্পোর্তকে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, যদি মেসি ফিরে আসে তাহলে আমাদের সাফল্য আরও বেড়ে যাবে। আমার কোনো সংশয় নেই এতে। কারণ এখনও সে দুর্দান্ত ফুটবলার, এখনও সাফল্যের ক্ষুধা রয়েছে তার মধ্যে। সে একজন বিজয়ী। সে একজন দক্ষ নেতা। সবার চেয়ে ভিন্ন একজন খেলোয়াড়।’
আর্জেন্টাইন ফুটবল বিশ্লেষক মার্সেলা মোরা ওয়াই আরোহো সিএনএকে বলেন, ‘বার্সেলোনায় মেসির ক্যারিয়ার শেষ হলে, সেটা সুন্দর সমাপ্তি হবে। শেষটায় বার্সায় খেলা তার জন্য রোমান্টিক বিষয় হতে পারে। পুরনো ঠিকানা বার্সেলোনায় থাকতে পারার প্রলোভন মেসিকে প্রভাবিত করতে পারে। কেননা সেখানে তার স্বজনরা রয়েছেন। সেখানে তার সন্তানরা জন্ম নিয়েছে।’ বার্সেলোনাও মেসিকে ভেড়ানোর চেষ্টায় কোনো কমতি রাখছে না। মাস খানেক আগে স্প্যানিশ লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস বলেছিলেন, মেসিকে ফেরানোর প্রক্রিয়া সহজ নয় বার্সেলোনার জন্য। লিওকে দ্বিতীয় দফায় ভেড়াতে আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত দলটিকে নিজেদের খেলোয়াড়দের বেতন কমানো বা তাদের বিক্রি করে দিতে হবে। সেই কাজটা কিন্তু ঠিকই করছে বার্সেলোনা। ইতোমধ্যেই সার্জিও বুসকেটস এবং জর্ডি আলবাকে বিদায় জানিয়েছে ব্লাউগ্রানারা। ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেংকি ডি ইয়ংকেও ছেড়ে দিতে চায় বার্সেলোনা। তবে তরুণ এই খেলোয়াড় বেতন কমিয়েও ন্যু-ক্যাম্পে থাকতে চায়। এদিকে বার্সেলোনার বিক্রির তালিকায় নাকি নাম রয়েছে উদীয়মান তারকা গাভিরও। সৌদি আরবের পাশপাাশি মার্কিন লিগ ইন্টার মায়ামিও হাত বাড়িয়েছেন মেসির দিকে, বাকিটা সময়ই বলে দেবে।
দেশকন্ঠ/রাসু