► অনিন্দ্য আরিফ দিব্য
কয়েকদিন আগে থেকেই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় [শেকৃবি] জুড়ে উৎসবের আমেজ। উপলক্ষ- ১০ম সম্মেলন। কাদের; যরা মানব চাহিদার অন্যতম কৃষিপণ্যের রোগ-বালাই নিয়ে যারা ব্যস্ত থাকেন সারা বছর। তারা আসবেন, তাদের গবেষণার নতুন তথ্য; তত্ত্ব জানাবেন- আগ্রহ ছিল সেসব অজনা বিষয়ে অবগত হওয়ার। স্বাগতিক হিসেবে শাকৃবি-র দায়িত্ব ছিল পুরো আয়োজনের। বলতে দ্বিধা নেই সম্মেলন শেষে আয়োজক হিসেবে শেকৃবি প্রায় শতভাগ সফল।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব সমিতির দশম সম্মেলনে ১০ জুন শনিবার ভোর থেকেই সারা দেশের রোগতত্ত্ববিদেরা আসা শুরু করেন। সেই তৃণমূলের প্রতিনিধিরা কেউ কেউ রাত জেগে যোগ দিলেও তাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় একটু ভাটা পড়েনি। মজাট আয়োজনে তাদের চোখে-মুখে ছিল রাজ্যের মুগ্ধতা। অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান আকন্দ এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালাহউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী। শেকৃবি-র শেখ রাসেল টিএসসি অডিটোরিয়ামে দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে দেশের প্রায় ৩৫০ জন উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদ উপস্থিত ছিলেন।
২১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা হলেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি-ড. মো. মতিয়ার রহমান, সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আতিকুর রহমান, কোষাধক্ষ্য-ড. মো. সেলিম মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে- ড. মো. ইকবাল ফারুক ও প্রফেসর ড. শাহজাহান মঞ্জিল, প্রচার সম্পাদক- ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান। কার্যনির্বাহী সদস্য যথাক্রমে- ড. তাহমিদ আনসারী, ড. মোজাহিদী রহমান, প্রফেসর ড. মো. জিহাদ পারভেজ, প্রফেসর ড. মোতাহার হোসেন, প্রফেসর ড. আমিনুজ্জামান, প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান, প্রফেসর ড. মো. মহিদুল ইসলাম, প্রফেসর মো. রেজাউল ইসলাম এবং প্রফেসর ড. আব্দুল মুকিত এবং পদাধিকার বলে যথাক্রমে প্রফেসর ড. ইসমাইল হোসেন ও প্রফেসর ড. সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়া হাউজ সন্মানিত সদস্য হিসেবে প্রফেসর ড. ইসমাইল হোসেন মিয়া এবং প্রফেসর ড. আমিন উদ্দিন মৃধাকে নির্বাচিত করেছে। আগামী ২ বছর নতুন কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। সম্মেলনে বিপিএ-র সাধারণ সম্পাদক ড. মো.সাখাওয়াত হোসেন সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশ করেন।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব সমিতি (বিপিএস) এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালযয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান আকন্দ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপিএস-র সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রফেসর মো. ইসমাইল হোসেন। প্রফেসর প্ল্যান্ট প্যাথেলজি বিভাগের চেয়ারম্যান আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ এবং সহযোগী অধ্যাপক সুক্তিরানী চৌধুরী অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশে উদ্ভিদ রোগবালাইয়ের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালাহউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী। মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ১০ বিলিয়নে দাঁড়াবে যার জন্য প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ খাদ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে ফসলের রোগবালাই বাড়ছে এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রোগ ও পোকার আক্রমণে ফসলের একটি বড় অংশ নষ্ট হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী ধানে ৩০.৩%, গমের ২১৫% ২২.৬৬%, আলুর ১৭.২%, সয়াবিনের ২১.৪% ফসল নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে রোগের আক্রমণে ১৫-২০% ফল নষ্ট হচ্ছে। এটা বেড়ে ৩০-৪০% বা তার বেশিও হতে পারে। কৃষি ক্ষেত্রে নিত্য নতুন রোগ ফসল উৎপাদনে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীর কৃষিতে আমাদের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে নতুন নতুন রোগবালাই দেখা যেতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে নতুন জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।
সম্মেলনে উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ গোলাম আলী ফকির (মরণোত্তর), প্রফেসর ড. এম. এ ওয়াদুদ মিয়া (মরনোত্তর) এবং ড. হামিজুদ্দিন আহমেদকে আজীবন সম্মননা প্রদান করা হয়।
দেশকণ্ঠ/আসো