স্পোর্টস রিপোর্টার : বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে দিনে দিনে আশা বাড়ছে। পুরুষ জাতীয় দল এশিয়া কাপের শিরোপা জিততে না পারলেও মেয়েরা পেরেছে। কোচ হিসেবে শ্রীলঙ্কার হাসান তিলকারাত্নে যোগ দেওয়ার পর এবার বড় স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। বিশ্বকাপ জেতার রসদ রয়েছে টাইগারদের, এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত সিরিজ সামনে রেখে চলছে নারী দলের অনুশীলন। এরই ফাঁকে গণমাধ্যমের সামনে আসেন তিলকারাত্নে। যা আশার বাণী শোনালেন, তাতে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরার কোনো সুযোগ নেই।
তিলকারাত্নে জানালেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জেতার সব রসদই নাকি আছে। ১৯৯৬ সালে অনেকটা গড়পড়তা দল নিয়ে সবাইকে চমকে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের বিশ্বকাপজয়ী সেই দলে ছিলেন হাশান তিলকরত্নে। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ নারী দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন। তার উপলব্ধি তাদের বিশ্বকাপজয়ী দলের সাথে বেশ মিল আছে বাংলাদেশের। সাকিব আল হাসানদের তাই এবার বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা দেখছেন। চলতি বছর ভারতে হতে যাওয়া ছেলেদের বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ আসতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। বড় স্বপ্ন দেখালেন সাবেক লঙ্কান তারকা, ‘অবশ্যই ফাইনালে যেতে পারে বাংলাদেশ। আপনি যদি নাম দেখেন তাহলে তারা শিরোপার অন্যতম দাবিদার। বিশ্বকাপ জেতার সব রসদ আছে তাদের। তাদেরকে নিজেদের ভেতর বিশ্বাস আনতে হবে। সমর্থন দিতে হবে একে অন্যকে।’
১৯৯৬ সালেও বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসেছিল উপমহাদেশে। এবারো ভারতে খেলা হওয়ায় কন্ডিশন চেনা থাকার কথা তামিম ইকবালের দলের। কন্ডিশন, বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের লম্বা সময় ধরে ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে সেইসময়ের শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের মিল পাচ্ছেন নারী দলের কোচ, ‘আড়াই দশক আগে ১৯৯৬ সালে উপমহাদেশে খেলা হয়েছিল, যা আমাদের সাহায্য করেছে। ওই সময় আমরা খুব অভিজ্ঞ দল ছিলাম। অনেকটাই এখানকার বাংলাদেশের মতো। বাংলাদেশে বেশ ক’জন বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে। তারা যদি এক হয়ে বিশ্বাস করে তাহলে তারা বিশ্বকাপ জেতার দিকে ছুটে যেতে পারে।’ ফেভারিটের তালিকা করলে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও পাকিস্তানই বেশি এগিয়ে থাকবে। তবে দলের সমন্বয়, কন্ডিশনের বোঝাপড়া ও অভিজ্ঞতা মিলিয়ে ক্রিকেটে অনেক কিছুই হতে পারে। সেসব বিবেচনায় বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনাই দেখছেন তিলকরত্নে, ‘ক্রিকেট খুব অনিশ্চয়তার খেলা। ১৯৯৬ সালে আমরা জিতব কেউ আশা করেনি। যেটা হয়েছিল নিজেদের খেলাটা খেলতে পারা। টাইগার দলেও অভিজ্ঞ ও তরুণরা আছে। তারা যদি একসাথে খেলতে পারে, কন্ডিশন সম্পর্কে ধারণা রাখে, একে অন্যকে বোঝে তাহলে অনেক কিছুই সম্ভব।’
যদিও বড় কোনো সাফল্য এখনো দেখেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল যাচ্ছে তা যেন ভবিষ্যতে বড় অর্জনের সঙ্কেত। এমনটা মনে করছেন বিশ্বকাপজয়ী মেয়েদের লঙ্কান কোচ হাশান তিলকারত্নে। তবে এর জন্য চাইলেন মেয়েদের প্রতি সমর্থন, তাহলে একটু ধীরগতিতে হলেও মিলবে সাফল্যের দেখা। তার কথায়, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আছে, সব ধরনের চ্যালেঞ্জ জয় করার পদ্ধতি জানা আছে। তবে মেয়েদের ক্রিকেটে তুলনামূলক বেশি ধৈর্য ধরতে হয়। এটি ছেলেদের ক্রিকেটের মতো হয়। তাদের কিছুটা জায়গা দরকার হয়, সে আত্মবিশ্বাসটা লাগে। তাদেরকে এটি দিতে হবে। আমি নিশ্চিত তারা মানসিক দিক থেকে ভালো অবস্থায় আছে। তাদের সমর্থন দিন, সাথে থাকুন, উৎসাহ জোগান। আমি নিশ্চিত তারা সময়ের সাথে সাথে রোমাঞ্চকর ফল বয়ে আনবে।’ এখন পর্যন্ত ছয়বার ওয়ানডে বিশ্বকাপ মঞ্চে খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার এই মর্যাদার আসরে অংশ নিয়ে একটানা খেলেছে টাইগাররা। এখন পর্যন্ত সেরা সাফল্য ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। সেই দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এবার আসন্ন বিশ্বকাপেও খেলবেন। তাই অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে টাইগাররা। এবার আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগেও নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় হওয়া ইংল্যান্ডের সমান ১৫৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকে তারা। আর সে কারণে এবার ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফেভারিট তকমাটা নিয়েই নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা দলের গর্বিত সদস্য হাসান তিলকারত্নেও এমনটাই দাবি করছেন। বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট আমূল বদলে যায়। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিধর দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তারা। সেই রেশটা এখনো আছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে লঙ্কানরা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, এবার তারা সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়নি। বাছাইপর্ব খেলছে তারা। আইসিসির ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগ শেষে শীর্ষ আটে থাকতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। অথচ বাংলাদেশ দল দাপটের সঙ্গে খেলে ৩ নম্বর পজিশনে থেকে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলবে। ওয়ানডে ক্রিকেটে গত ৭/৮ বছর ধরেই দুর্দান্ত একটি দল বাংলাদেশ। দীর্ঘ সময় ধরে এই দলের হয়ে খেলছেন বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, উইকেটরক্ষক মিডলঅর্ডার ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম। আপাতত দলে না থাকলেও বিবেচনায় আছেন আরেক অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন উদীয়মান তরুণ যোগ হয়েছেন এবং তারা নিয়মিত পারফর্মার। সঙ্গে আছে ৬-৭ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করা কয়েকজন ক্রিকেটার। সব মিলিয়ে দারুণ একটি গোছানো ওয়ানডে স্কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশ ধারাবাহিক।
এডিট/আসো