কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় একটি স্বনামধন্য ও সুপ্রাচীন বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের অবেহেলার কারণে স্কুলের পুকুরটি বছরের পর বছর কুচুরিপানায় ভর্তি হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। যা নোংরা ডোবায় পরিণত হয়ে আজ জনসাধারণের ব্যবহারের অনপুযোগী। অথচ এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনো বিকার নেই। ভাবতে অবাক লাগে আজ ভাওয়াল রাজার এই প্রাচীনতম স্কুলটির পুকুর ও ঘাট আজ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, আগে পুকুরের সুন্দর ঘাট ছিল। তা দীর্ঘ দিন যাবৎ ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। তখন আশে পাশে কোন প্রকার ময়লা ছিলনা, পানি স্বচ্ছ ও পরিস্কার ছিল। আমরা পুকুরে গোসল করতাম। আমাদের সন্তানদের পুকুরে সাতার শিখাইতাম। এখন কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে আজ ঘাট ও পুকুরের ব্যাহাল অবস্থা। এগুলি দেখার কেউ নেই।
কালীগঞ্জ বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, আগে সাপ্লাই পানি ছিলনা। এপুকুরটিতেই বাজারের দোকানদার ও ক্রেতা-বিক্রেতারা নামাজের সময় অজু করত। বর্তমানে পুকুরে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। পুকুরের বর্তমান অবস্থার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা-অবহেলাকেই দায়ী করছে তারা। তারা ক্ষোপ প্রকাশ করে আরোও বলেন, এ বিদ্যালয়ের পুকুরটি সারা বছরই কচুরিপানায় ভর্তি থাকে। হঠাৎ দেখলে পরিত্যক্ত বা নোংরা ডোবা ভেবে ভুল হতে পারে। অভিভাবকহীন সরকারী বিদ্যালয়টির পুকুরের অব্যবস্থাপনা-অবহেলাই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আর আগের মত নেই। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী অবহেলিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা।
পুকুর বা জলাশয়ের পানি বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব গাছপালা এবং জীবজন্তুর জীবনপ্রণালীতে সহায়কের ভুমিকা পালন করে থাকে। সুপেয় পানির উৎস হিসেবে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষা ছাড়াও অগ্নিকান্ডের সময় পানির যোগান দিতে পুকুর-দিঘির মতো জলাশয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ভ‚গর্ভে পানি ঢোকার প্রাকৃতিক পথ হলো পুকুর, দিঘিসহ বিভিন্ন জলাশয়সমূহ।
অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আহম্মেদ আলী বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ জলাশয় বিনষ্ট করে পরিবেশকে হুমকি এবং চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রেখে যেভাবেই হোক প্রকৃতিগত পুকুর, দিঘি ও জলাশয়সমূহ এবং মানুষের সৃষ্টি করা প্রাচীন ও বৈশিষ্ট্যসম্বলিত পুকুর, দিঘি ও জলাশয়সমূহ চিহ্নিত করে সেগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষশন করেন।
বিদ্যালয়টি উপজেলার প্রান কেন্দ্র পৌরসভার মুনসুরপুর মৌজায় অবস্থিত। কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৮৮৯ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। শতবর্ষীয় স্কুলটি দিয়েছে আমাদের উন্নত জীবনের দ্বারোদ্ঘাটনের চাবিকাঠি।
পুকুরের বর্তমান এ অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে এম নুরুল ইসলাম আল মোশাররাফ ইবনে কাদির প্রতিবেদককে জানান, আমি যোগদানের পর হতে পুকুরটি এই অবস্থায়ই পেয়েছি। ইতিপূর্বে পুকুরটি পরিস্কার করতে উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। তাছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সরকারীভাবে আলাদা কোন বরাদ্ধ নেই। পুকুরের পাড়ে যাতে কেউ ময়লা না ফেলে তার জন্য নোটিশ করেছি। আমার দায়িত্ব স্কুলের প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিষয় দেখা। স্কুলের খেলার মাঠ ও পুকুর আমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে। পুকুর পরিস্কার রাখার জন্য আমাকে নিয়োগ দেয়া হয় নাই।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, সেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন-গাজীপুর স্কুলের মাঠ ও পুকুর ইতোমধ্যে পরিদর্শন করে গেছে। শীগ্রই স্কুলের মাঠ ও পুকুর পরিস্কার করা হবে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামের কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জেনেছি। যেহেতু মাঠ এবং পুকুর সরকারী খাস সম্পত্তি তাই এগুলো পরস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। স্থানীয় প্রশাসনকে পর্যায়ক্রমে পুকুর, মাঠ ও ঘাটের সংস্কার কাজ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব।
দেশকণ্ঠ//