দেশকণ্ঠ অনলাইন : দীর্ঘদিন পর আবারও পাকিস্তানের কোচের সান্নিধ্য পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। দলের স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্ব নিতে মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসেছেন মুশতাক আহমেদ। কিংবদন্তীতুল্য এই লেগি পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে এবার ঠিকানা গড়েছেন লাল সবুজের দেশে। বাংলাদেশ দলের সাবেক স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ নতুন করে চুক্তি নবায়ন করেননি। যে কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই শূন্য ছিল টাইগারদের স্পিন বোলিং কোচের পদ। তবে গেল সপ্তাহেই এই পদের জন্য নিয়োগ চূড়ান্ত করেছিল বিসিবি। পাকিস্তানের সাবেক স্পিনার মুশতাক আহমেদকে বাংলাদেশ দলের নতুন বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। আর দায়িত্ব পাওয়ার পরই বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন মুশতাক। আসন্ন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই নিজের অভিযান শুরু করবেন সাবেক তারকা লেগ স্পিনার। টাইগারদের নতুন এই স্পিন কোচের চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ পর্যন্ত। আগামী জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই আন্তর্জাতিক আসর।
ঠিক এর আগে আগেই ৫৩ বছর বয়সী সাবেক এই পাকিস্তানি তারকা বেশ কয়েকটি জাতীয় দলের স্পিন বিভাগ সামলেছেন। ২০০৮-১৪ ইংল্যান্ড, ২০১৮-১৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২০২০-২২ পাকিস্তান জাতীয় দলের স্পিন কোচ ছিলেন মুশতাক আহমেদ। এছাড়া ২০১৪-১৬ সময়কালে তিনি বোলিং পরামর্শক ছিলেন পাকিস্তানের। বিসিবির দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে মুশতাক আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ হওয়া আমার জন্য অনেক বেশি সম্মানের। আমি আমার দায়িত্ব পালনের দিকে পুরো মনোযোগ দিচ্ছি এবং অর্জিত অভিজ্ঞতা ক্রিকেটারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি তারা (বাংলাদেশ) বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর দলগুলোর একটি। বাংলাদেশকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে সাকিব আল হাসানদের নতুন এই কোচ বলেন, ‘তারা যেকোনো দলকেই হারাতে পারে, কারণ তাদের সেই সামর্থ্য, সম্পদ ও প্রতিভা আছে। আমি চেষ্টা করব আমার এই বিশ্বাসটাই তাদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে। বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি বেশ রোমাঞ্চিত।’
১৯৯২ সালে পাকিস্তানের একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন এই মুশতাক আহমেদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪৪ ওয়ানডে খেলে তার শিকার ১৬১ উইকেট। এছাড়া ৫২ টেস্ট খেলে এই লেগস্পিনার ১৮৫ উইকেট নিয়েছেন। তবে চোটের কারণে মুশতাকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষটা ভালো হয়নি। এরপরও অবশ্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্য দেখিয়ে গিয়েছিলেন মুশতাক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০৯ ম্যাচ খেলে তার উইকেট ১ হাজার ৪০৭টি। ইনিংসে চার উইকেট নিয়েছেন ১০৪ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ৩২ বার। একজন লেগ স্পিনার হিসেবে নিজেকে দারুণ এক জায়গায় রেখে মাঠের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে নতুন এক চ্যালেঞ্জও নিয়েছেন তিনি।
এদিে বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখে ক্রিকেটার-কোচদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মুশতাক আহমেদ। ঢাকায় পা রাখার পরদিন মঙ্গলবার বিসিবিতে আসেন মুশতাক। মিরপুর শের-ই বাংলায় তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে বিসিবি। ভিডিও অ্যানালিস্ট মহসিন শেখও এদিন এসেছিলেন বিসিবিতে। ক্রিকেট বোর্ডের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে সৌজন্য আলাপের পর তাকে জড়িয়ে ধরছেন মুশতাক। পরে ক্রিকেট অপারেশন্সের সহকারী ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস বাংলাদেশ দলের প্র্যাকটিস কিট মুশতাকের হাতে তুলে দেন। এরপর প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা যায় মুশতাককে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কোচ নিক পোথাস, ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পও। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গেও করমর্দন করতে দেখা গেছে মুশতাককে। ছিলেন মুমিনুল হক, তাইজুল ইসলামরাও। আসন্ন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই নিজের বাংলাদেশ অভিযান শুরু করবেন সাবেক তারকা স্পিনার।
এদিকে কোচিং স্টাফের নহরে দুই বছরের জন্য টাইগারদের পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মহসিন শেখ। গত বছর নিউজিল্যান্ড সফরে সাময়িক চুক্তিতে কাজ করেছেন। এবার পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স অ্যানালিস্টের দায়িত্ব পেলেন তিনি। আগামী দুই বছর তিনি কাজ করবেন টাইগারদের সঙ্গে। বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করবেন মহসিন। আগামী ১ মে ২০২৪ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২৬ পর্যন্ত তার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বিসিবির। গত বছরের বিশ্বকাপের পর থেকে স্থায়ী কোনো অ্যানালিস্ট ছিল না বাংলাদেশ জাতীয় দলের। প্রায় ৪ মাস পর এবার পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে অ্যানালিস্ট পেলো টাইগাররা। এর আগে আফগানিস্তান দলের অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন মহসিন শেখ। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে নেট রানরেটের হিসেবে আফগান দল ভুল করায় অ্যানালিস্ট মহসিনকে নিয়ে সমালোচনা হয় বেশ। তবে অভিজ্ঞতার বিচারে কিছুতেই পিছিয়ে রাখা যাবে না পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান এই অ্যানালিস্টকে। পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কাজ করা ছাড়াও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে তার। এবার সেগুলো বাংলাদেশে বিলিয়ে দেবার পালা।
দেকণ্ঠ//