দেশকন্ঠ অনলাইন : সম্পূর্ণ সৌরবিদ্যুৎ নির্ভর কোল্ড স্টোরেজ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। বাকৃবির নিজস্ব ডিজাইনকৃত ‘বিএইউ-এডিআই হরটিকুল কোল্ড স্টোরেজ’ প্রকল্পের প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা।
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- এগ্রোমেক ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভসের (এডিআই) কো-অর্ডিনেটর ড. সুরজিৎ সরকার, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রভাষক সাহাবুদ্দীন আহমেদ ও একই বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুই শিক্ষার্থী।
কোল্ড স্টোরেজ সম্পর্কে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা বলেন, এটা পুরোপুরি সোলার প্যানেল নির্ভর। তবে আকাশ মেঘলা থাকলে বা রাতে ব্যাকআপ দেয়ার জন্য লিথিয়াম ব্যাটারি রাখা হয়েছে। এ ব্যাটারির মাধ্যমে টানা ৪ ঘণ্টা ব্যাকআপ দেয়া যায়। কিন্তু স্টোরেজ সবসময় চলে না। প্রয়োজন অনুযায়ি চালু হয়, আবার বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য এ ব্যাটারি দিয়েই রাত কাভার হয়ে যায়। তবে যদি খুবই মেঘলা দিন থাকে এবং সোলারের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করার জন্য সময় না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে গ্রিডের মাধ্যমে চলবে। তবে এর জন্য ২২০ ভোল্ট এর সিঙ্গেল লাইনই যথেষ্ট।
এ কোল্ড স্টোরেজ সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এখন নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এ হাইব্রিড সিস্টেমটি তৈরি করেছি। এটি সোলার, ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিক সংযোগে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় স্বতন্ত্রভাবে চলতে সক্ষম। আরেকটি সুবিধা হলো এটি সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সেন্সর সংযুক্ত করে এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে এটি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও পরবর্তীতে তেমন আর খরচ নেই।
একটি বেসরকারি সংস্থা টেকনিক্যাল ও মার্কেটিং বিষয়ে সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে এ উদ্ধাবক বলেন, আমরা এটা নিয়ে ফিল্ড ট্রায়ালে গেছি। ল্যাবস্কান টেস্ট শেষ করে রংপুরের বদরগঞ্জে একটি প্যানেল বসানো হচ্ছে। প্রযুক্তিগত দিকটা সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের সুবিধার জন্য এটা নিয়ে আমরা আরেকটু বেশি চিন্তা করছি। সেটা হলো- স্টোরেজের সোলার প্যানেলের সঙ্গে বাসাবাড়িও সংযুক্ত থাকবে। অর্থ্যাৎ স্টোরেজের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ি বাসাবাড়িতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। আবার কখনো প্রয়োজন মনে করলে গ্রিড থেকে বৈদ্যুতিক সাপোর্ট নিবে।
‘কোল্ড স্টোরেজ সলিউশন ফর রিডিউসিং পোস্ট হারভেস্ট লসেস অব ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের অর্থায়নে বাকৃবিতে গত বছর জুলাই থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে গবেষণা কাজ সম্পন্ন হলেও এটি আরও উন্নত করতে গবেষণা অব্যহত আছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১৭ মে) বিকাল সাড়ে ৪টায় বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ওয়ার্কশপে এ স্টোরেজ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী।
উদ্বোধনের আগে বাকৃবি ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে ময়মনসিংহ বিভিন্ন উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তাদের নিয়ে দিনব্যাপী ‘বিএইউ-এডিআই হরটিকুল কোল্ড স্টোরেজ’ পরিচিতি ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহার সভাপতিত্বে এবং এডিআই এর কো-অর্ডিনেটর ড. সুরজিৎ সরকারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জয়নাল আবেদীন। এছাড়াও ফারহান আহমেদ খানসহ ডাচ বাংলা ব্যাংকের প্রতিনিধিবৃন্দ ও কৃষি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা সিজনের সময় ফল, শাকসবজি সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। পরবর্তীতে সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো পাওয়া যায় না। খামারিরা বেশি পণ্য উৎপাদনের ফলে অনেক সময় ন্যায্য মূল্য পান না। এ যন্ত্র পণ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে। ভবিষতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব যন্ত্র ডিজাইনে অর্থায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী।
দেশকন্ঠ//