দেশকন্ঠ অনলাইন : মুখের ভিতর ক্যানসার হলে আমরা একে মুখ ক্যান্সার বা মৌখিক ক্যানসার বলে থাকি। যদি মুখের ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে তাহলে খুব সহজেই এর চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু প্রথমিক অবস্থায় এটা তখনই ধরা পরবে যখন মানুষ এর সম্বন্ধে জানবে এবং এর লক্ষণ গুলো ঠিক করে বুঝতে পারবে।
মানবদেহের এ অংশের ক্যানসারের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম নিজামুল হক এবং জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ওর্যাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. নাদিমুল হাসান।
প্রথমে জেনে নেয়া যাক ওরাল ক্যাভিটি ক্যানসার সম্পর্কে এই বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এম নিজামুল হক। তিনি বলেন, মুখগহ্বরের যে বিভিন্ন অংশ আছে সে অংশের কোনো এক জায়গায় যে ক্যানসারগুলো সৃষ্টি হয় তাকেই ওরাল ক্যাভিটি ক্যানসার বলা হয়। মুখগহ্বরকে আমরা প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। সামনের অংশকে আমরা বলি মুখগহ্বরের সামনের অংশ বা ওরাল ক্যাভিটি প্রপার আর পেছনের অংশকে বলি ওরোফ্যারিংক্স। মুখের যেসব অংশ ক্যানসারে আক্রান্ত হয় বেশি সেগুলো হলো ঠোঁট, জিহ্বা, গালের ভেতরের অংশ, মাড়ি, মুখের শক্ত ও নরম তালু, গলার নিচের অংশ।
এই ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ হিসেবে ডা. নাদিমুল হাসান বলেছেন, লক্ষণ হচ্ছে প্রথমে একটা অস্বাভাবিক ব্যথাহীন মাংশপিণ্ড দিয়ে শুরু হতে পারে, ঘা হতে পারে যেটা সহজে সারছে না, ঢোক গিলতে ব্যথা অনুভূত হয়, কথা বলতে অসুবিধা হয়, জিহ্বা নাড়াতেও সমস্যা হতে পারে।
এর লক্ষণ প্রকাশ পেলে করণীয় হিসেবে অধ্যাপক ডা. এম নিজামুল হক বলেন, কোনো মানুষের যদি এমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় প্রথমেই একজন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
চিকিৎসক প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করবেন। তাতে যদি সাত দিনে কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে ওই চিকিৎসকই কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাবেন।
ধূমপানই মুখের ক্যান্সারের একমাত্র কারণ? এই প্রশ্নে অধ্যাপক ডা. এম নিজামুল হক বলেন, আমরা ধূমপানকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করে থাকি। একটি ধোঁয়াবিহীন ধূমপান এবং অন্যটি ধোঁয়াসহ ধূমপান। আমাদের দেশের প্রায় মানুষই পান খেয়ে থাকে। কখনো কখনো তারা পানকে দাঁতের এক পাশে জমা রাখে ফলে দাঁতে ক্রনিক ইরিটেশন হয় এবং গর্ত তৈরি হয়ে পরবর্তীতে এখানেও ক্যানসারের সৃষ্টি হয়। এর সাথে ধূমপানও মুখের ক্যানসারের অন্যতম কারণ। যখন এই দুইটায় একজন মানুষ নেশা হিসেবে নেয় তখন মুখের ক্যানসারের আশংকা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
আমাদের দেশে মুখের ক্যানসারের ভয়াবহতা কতটুকু? ডা. নাদিমুল হাসান জানালেন, আমাদের দেশে মুখের ক্যান্সার পুরুষদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় এবং নারীদের ক্ষেত্রে তৃতীয়। তবে কিছুদিন আগেও দেশে এত ভয়াবহ ছিল না। এর মূল কারণ হচ্ছে- ধূমপান ও পানের সহজলভ্যতা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মুখের ক্যানসার দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। পশ্চিমা বিশ্বে মুখের ক্যান্সারের হার ৬-৭ শতাংশ কিন্তু বাংলাদেশে এ পরিসংখ্যান ৩০ শতাংশের কম না।
মুখের ক্যান্সার শনাক্তকরণে পদ্ধতি নিয়ে ডা. নাদিমুল হাসান বলেন, এ ধরনের ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য প্রথমে আমরা সরাসরি দেখে, এটার অবস্থান ও গতিবিধি নির্ধারণ করে থাকি। এরপর যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে পরবর্তীতে আমরা একটি বায়োপসি করি, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান থেকে এক টুকরো মাংস নিয়ে আমরা হিস্টোপ্যাথলজিতে দেখি এটা আসলে কী? তখনই ক্যানসার থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। ক্যানসার ধরা পড়লে পরে আমরা আরও কিছু পরীক্ষা করি। ক্যানসার কতটুকু ছড়িয়েছে সেটি দেখার জন্য এক্স-রে করি, আরো গভীরতা বুঝতে সিটি স্ক্যান, এম আর আইও করে থাকি আমরা। এর মাধ্যমে ক্যানসারের পর্যায় নির্ধারণ করা সম্ভব।
সবশেষে সবার জন্য পরামর্শ দেন এই দুই চিকিৎসক। তারা বলেন- ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই সবার আগে প্রয়োজন নিজের সচেতনতা। সপ্তাহে অন্তত একদিন আয়নায় নিজের মুখ-দাঁত দেখে সমস্যা নির্ণয় করতে পারেন । আর প্রতি ছয় মাস পর পর অন্তত একবার একজন ডেন্টিস্টের কাছে চেকআপ করে নিতে পারেন। আর সাধারণভাবে দাঁতের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।
দেশকন্ঠ//