দেশকন্ঠ অনলাইন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো: নূরুল হক বলেছেন, পরিপাকতন্ত্রের মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগ ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি) নিয়ে বিএসএমএমইউয়ে অনেকগুলো গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। কিছু গবেষণা চলমান রয়েছে। আজ বিএসএমএমইউয়ের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রারোলজি বিভাগের আইবিডি ক্লিনিকের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, আইবিডি এমন এক ধরনের অসুখ, যা মানুষের পরিপাকতন্ত্রে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি করে থাকে। সুতরাং এ বিষয়ে চিকিৎসককে ও জনসাধারণকে সচতেন হতে হবে। এ সব গবেষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করা হলে বিশ্বব্যাপী মানুষ জানতে পারবে।
রোগীদের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ডায়াগনোসিস সম্পন্ন করার উপর গুরুত্ব দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন প্রতিষ্ঠানে রোগ নির্ণয়ের কোন মেশিন যেন বাক্সবন্দি না থাকে, দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পরে না থাকে।
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ ও আইবিডি ক্লিনিকের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ জানান, আইবিডির আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব। আইবিডি ক্লিনিক বিএসএমএমইউ এর মাধমে এসব রোগী দেশেই উন্নত চিকিৎসা পেতে পারে। কোন ব্যক্তির শরীরে দুই ধরনের হয় আইবিডি হতে পারে। একটি হলো বৃহদন্ত্রে প্রদাহ বা আলসার তৈরির ফলে আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং অন্যটি ক্রন্স ডিজিজ যার কারণে পরিপাকতন্ত্রের যেকোনো অংশ (মুখ থেকে পায়ুপথ) আক্রান্ত হতে পারে।
আলসারেটিভ কোলাইটিস হলে দীর্ঘদিন ধরে রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে। তার সঙ্গে মাঝে মধ্যে তলপেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া, মলদ্বারে ব্যথা ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্রোন্স ডিজিজের উপসর্গ হলো পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা, ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি, এছাড়া রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানাও হতে পারে।
তিনি আরো জানান, জটিলতা হিসেবে খাদ্যনালি সরু হয়ে পেট ফুলে যেতে পারে, খাদ্যনালি ও মলদ্বারে ফিস্টুলা হতে পারে। রোগীর রক্তশূন্যতা, অপুষ্টি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, শরীরে পানি আসতে পারে। আইবিডিতে পরিপাকতন্ত্রের বাইরেও কিছু উপসর্গ যেমন অনেক সময় আইবিডি রোগীরা চোখের প্রদাহ (চোখ লাল, চোখে ব্যথা) উপসর্গ নিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া মুখে ঘা, গিরাব্যথা ও ফোলা ও ত্বকে প্রদাহ ইত্যাদি হতে পারে।
সেমিনারে জানানো হয়, আইবিডি রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। এ কারণে কারো মধ্যে রোগটির যেকোন ধরণ শনাক্ত হলেই তা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেয়া হয়। চিকিৎসকের ফলোআপে থেকে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে— এটি বেড়ে কিছুতেই যেন জটিল আকার ধারণ না করে। রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় না হওয়ার কারণে সারা জীবন চিকিৎসার আওতায় থাকতে হয়।
দেশকন্ঠ//