দেশকন্ঠ অনলাইন : পূর্ণ শক্তি নিয়ে উপকূলে আঘাত হেনেছে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়টির তাণ্ডবে উপকূল লণ্ডভণ্ড। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ে ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট তছনছ হয়েছে, ভেঙে পড়েছে গাছ-পালা। হয়েছে প্রাণহানিও।
রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ফলে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে পটুয়াখালীতে প্রতি ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া রেকর্ড করা হয়েছে। সাড়ে ১১টায় খেপুপাড়ায় ৯১ কিলোমিটার, রাত ১১টা ৫৬ মিনিটে মোংলায় ৭৬ কিলোমিটার এবং এর আগে সিলেটেও প্রতি ঘণ্টায় ৪১ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া রেকর্ড করা হয়েছে। তার দাবি, কোনো কোনো জায়গায় বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসেরও সৃষ্টি হয়েছে, তলিয়ে গেছে বসত বাড়ি ও ফসলের মাঠ। রিমালের প্রভাবে বাঁধ ভেঙ্গে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক স্থানে। বিশেষ করে মোংলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও খেপুপাড়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে রেমাল।
আশঙ্কার তুলনায় আগেভাগেই ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাগের প্রভাবে পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। বাতাসের তোড়ে এসব এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল থেকে ফুফু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যান।
বরগুনায় তলিয়ে গেছে ২৭ গ্রাম, ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আমতলী ও তালতলী উপজেলার ২৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে উপজেলা নির্বাহী অফিস। বলেশ্বর নদীর পানিতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বাগেরহাটের বলেশ্বর,পানগুছি-খাসিয়াখালি এবং দড়াটানা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে। এতে শরণখোলা ও মোড়লগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত। রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। করমজলসহ বনের উঁচু এলাকাগুলোও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। সদর হাসপাতালের কোন একসাইড ভেঙে ভিতরে পানি ঢুকেছে। বাগেরহাটে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
মোংলার শ্যালা নদী ও পশুর নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপরে। রাস্তা ভেদ করে জয়মুনি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।চট্টগ্রামেও রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে ২১ টি গ্রাম।নোয়াখালীর হাতিয়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।
খুলনার দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল।রাজধানীতে রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বইছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, টানা ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চালাবে ঘূর্ণিঝড়টি। এরপর দুর্বল হয়ে স্থলভাগে উঠবে। সকাল নাগাদ এটি দুর্বল হয়ে যাবে। রেমালের প্রভাবে সোমবার (২৭ মে) ও মঙ্গলবারও (২৮ মে) সারাদেশেই থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। সঙ্গে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
দেশকন্ঠ//