দেশকন্ঠ অনলাইন : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অপ্রচলিত রাগ ও শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৬ দিনব্যাপী ১৬তম শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসব। শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চা ও বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্যের চর্চা ও প্রসার এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সংগীতের সমৃদ্ধ এ ধারায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এর আয়োজন করে।
সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সমাপনী দিনের পরিবেশনা শুরু হয় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায়। সমাপনী অনুষ্ঠানে এসময় নৃত্যাঞ্জলি রাগ কল্যাণীতে আদি তালে অর্ধনারীশ্বর- রাগ মালিকার মতো শাস্ত্রীয় নানান ধারা ও ঘরানার সুর ও নৃত্য পরিবেশিত হয়েছে।
শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানে শুরুতেই পরিবেশিত হয় সমবেত শাস্ত্রীয় সংগীত ‘খেয়াল’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শাস্ত্রীয় সংগীত কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের পরিবেশনায় সংগীত পরিচালনা করেন ইমামুর রশিদ। পরিবেশিত হয় রাগ- ভূপালী বা ভোপ, ঠাট কল্যাণ।
এরপর পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য ‘মনিপুরি লৈমা’। একাডেমি ফর মনিপুরী কালচার এন্ড আর্টস, সিলেট এর পরিবেশনায় নৃত্য নির্দেশক ছিলেন শান্তনা দেবী। লৈমা জাগোয় বা নৃত্য লাই হারাউবার একটি অংশ বিশেষ। আদিকাল থেকেই মনিপুরীরা সানামাহিজমের দেবদেবীদের সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশ্যে এই নৃত্য পরিবেশন করে আসছে। এখানে ঢোলের তালে শুদ্ধ মনিপুরী নৃত্যের মূদ্রার ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর একক সংগীত রাগ : মধুবন্তী পরিবেশন করেন অন্তরা মন্ডল। একক ‘ধ্রুপদ’ পরিবেশন করেন এ. কে. এম কৌশিক আহমেদ এবং পাখোয়াজ সঙ্গতে: ফেরদৌস হাসান।
পরিবেশিত হয় শাস্ত্রীয় নৃত্য ‘ভরতনাট্যম’। নৃত্য পরিচালনা ও পরিবেশনা করেন জুয়েইরিয়াহ মৌলি। এই নৃ্ত্যে অর্ধনারীশ্বর পৌরুষ এবং নারীত্বের শক্তিকে, ঐশ্বর্যকে উপস্থাপন করে। একক শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশন করেন শেখ আবিদুর রহমান কচি। তিনি পরিবেশন করেন কত্থক, শিব বন্দনার নৃত্যাংশ ও পরিশেষে তারানা। এরপর একটি অপ্রচলিত রাগ পরিবেশন করেন এফ এম রেজোয়ান আলী। এরপর একক শাস্ত্রীয় সংগীত ‘ঠুমরি’, পরিবেশন করেন উর্বী সোম এবং রাগ : মধ্যমজান পিলু (মিশ্র)।
মনিপুরি পরিবেশন করেন সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা। ভরতনাট্যম নৃত্য পরিবেশন করেন মোহনা মীম। হাজার বছরের পুরনো বাংলার ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্রীয় নৃত্য গৌড়ীয় নৃত্য। গৌড়ীয় নৃত্য মার্গের দ্বিতীয় পর্যায়ের নৃত্য আলাপচারী। আলাপ অর্থ রাগ, চারী অর্থ চলন। পরিবেশিত হয় দেশ রাগের আলাপচারী। নৃত্য নির্মাতা- ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়, নৃত্য পরিচালনায় র্যাচেল প্যারিস এবং সংগীতে অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। একক সংগীত ধ্রুপদ - রাগ ভূপালী পরিবেশন করেন ইমামুর রশিদ। পাখোয়াজ - মো: রাশেদুল হাছান জীবন এবং তানপুরা - আবিদা সেতু এবং মোহনা। এরপর পরিবেশিত হয় শাস্ত্রীয় নৃত্য ‘কথক’। শুদ্ধ নৃত্য- ত্রিতাল পরিবেশন করবেন দীপা সরকার। পরে একক সংগীত রাগ: মারুবিহাগ, ঠাট: কল্যাণ, পরিবেশন করেন আফরোজা আক্তার রুপা। অনুষ্ঠানে সমবেত নৃত্য ‘মনিপুরি’ পরিবেশন করে নৃত্যদল ভাবনা।
পরে, প্রবন্ধনর্ত্তন নৃত্য পরিবেশনা করে নৃত্যদল ভাবনা, নৃত্য পরিচালনায় সামিনা হোসেন প্রেমা। এটি রচনা করেছেন গুরু বিপিন সিংহ ও গুরু শ্রীমতি কলাবতী দেবী এবং সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন গুরু শ্রীমতি কলাবতী দেবী। প্রবন্ধনর্ত্তন (প্রবন্ধ শব্দের আক্ষরিক অর্থ প্রকৃষ্ট বন্ধ বা সুন্দর রচনা। প্রবন্ধ গীতে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থাকে যেমন- পদ বা কবিতা, স্বর বা নির্দিষ্ট সুরে বাধা সঙ্গীতের সাতটি স্বর, বিরুদ বা কবির নাম ও গুনাদির বর্ণনা, তেনক বা মঙ্গলবাচক শব্দ যেমন ‘ওম’, পাট বা মৃদঙ্গাদির বোল এবং সব শেষে তাল বা সময় নিরুপক। এখানে পদ বা কবিতায় শ্রীকৃষ্ণের সৌন্দর্যের বর্ণনা করা হয়েছে যা মনিপুরী নৃত্যের লাস্য ও তান্ডব দুই আঙ্গিকেই দেখানো হয়েছে )
এরপর একক নৃত্য ওডিসি নৃত্য "মোক্ষ্য" পরিবেশন করেন ফারজানা ইয়াসমিন। নৃত্য নির্মীতি: গুরু শ্রী দুর্গাচরণ রণবীর। সঙ্গীত: গুরু শ্রী দেব প্রসাদ দাসের ঐতিহ্যবাহী ওড়িষী নৃত্যের মিউজিক ও স্টাইল এবং নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শ্রীমতি শতাব্দী মল্লিক। সমবেত নৃত্য ভরতনাট্যম পরিবেশনা করেন কল্পতরু। কল্পতরু পরিবেশন করে রাগমালিকা এবং তাল মিশ্র চাপু, রাগ মালিকা। বিষয় ভগবান কার্তিকের গুণকীর্তন।
শেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু কিশোর সংগীত দল পরিবেশন করে রাগ-ইমন, সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন ড. শেখর মন্ডল।
দেশকন্ঠ//