দেশকন্ঠ অনলাইন : গ্লোবাল ফান্ড ও স্টপ টিবি পার্টনারশিপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের নেতৃবৃন্দ ও গ্লোবাল ফান্ডের চ্যাম্পিয়নদের জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। গ্লোবাল ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক পিটার স্যান্ডস ও স্টপ টিবি পার্টনারশিপের নির্বাহী পরিচালক ড. লুসিকা দিতিউ আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় এ লক্ষ্যে আবেদন জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সংস্থাদ্বয়ের নেতৃবৃন্দের তালিকায় রয়েছেন।
সংস্থা দুটি মূলত বাংলাদেশে টিবি, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া এবং এর অর্থায়ন নিয়ে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্ক বিস্তৃত ও গভীর করতে চায়।’
প্রেস সচিব বলেন, তারা আসলে চান যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তহবিল সংগ্রহের জন্য বিশ্ব নেতাদের সাথে তার যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন।তিনি বলেন, উভয় নির্বাহী পরিচালকই টিবি, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উচ্চ প্রশংসা করেন এবং এটিকে ‘বিস্ময়কর’ বলে উল্লেখ করেন।
মো. নাঈমুল ইসলাম খান আরো তুলে ধরেন যে, পাহাড়ি এলাকা ছাড়া বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বাংলাদেশের এইচআইভি পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অর্জনগুলো তারা তুলে ধরবেন।’
এ প্রসঙ্গে আগামী দিনে তাদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দুই নির্বাহী পরিচালক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আপনি যোগ দিলে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প বিশ্ব অঙ্গনে তুলে ধরা হবে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশের চাহিদাও জোরালো হবে।’
তারা উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এই সাফল্যগুলো অর্জন করেছে এবং আর কিছু সহায়তা পেলে বাংলাদেশ এসব রোগ নির্মূলের চূড়ান্ত লক্ষ্য স্পর্শ করার সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
বৈঠকে গ্লোবাল ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক পিটার স্যান্ডস এবং স্টপ টিবি পার্টনারশিপের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর লুসিকা ডিটিউ দাবি করেন যে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০০ মানুষ যক্ষ্মা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে মারা যায়।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন এবং বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জানতে চান। তারা জানান, তাদের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রায় ২৬ হাজার থেকে ২৭ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যক্ষ্মাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বের করতে একটি জরিপ চালাতে বলেন। গ্লোবাল ফান্ড এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে ।
তারা দ্রুত টিবি শনাক্ত করতে এআই চালিত হাই-টেক এক্স-রে মেশিন দিয়ে দেশে মোবাইল ডায়াগনস্টিক ডেভেলপমেন্ট পরিচালনায়ও বাংলাদেশকে সাহায্য করবে।
প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাহী পরিচালকদ্বয় দেশের এইচআইভি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন।
তারা সম্মত হন যে ‘এইচআইভি সম্পর্কিত সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের প্রচেষ্টা বন্ধ করা উচিত নয়, যদিও বাংলাদেশ এই বিষয়ে খুব ভালো করছে। এতে অবশ্যই আত্মতৃপ্তিতে ভোগা উচিত হবে না, যা খারাপ সংবাদ বয়ে আনতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্জন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং দেশকে আরও ভালো অবস্থানে আনতে পারে সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও জোরালোভাবে চালিয়ে যেতে হবে।তিনি বলেন, অপুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতাকে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
নাঈমুল ইসলাম খান আরও বলেন, তারা সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী এবং বাংলাদেশের জন্য তহবিল নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।
কমিউনিটি ক্লিনিক ইস্যু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্তভাবে তার কার্যক্রম এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সহায়তা করছে তা বর্ণনা করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গ্লোবাল ফান্ড হল এইচআইভি, টিবি ও ম্যালেরিয়াকে পরাস্ত করতে এবং সবার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ, আরও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বমূলক সংস্থা।
তারা সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রামক রোগসমূহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, এসব রোগ বৃদ্ধিতে ইন্ধন দেয় এমন অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ করতে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ টিরও বেশি দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মহামারী প্রস্তুতিকে জোরদার করতে বছরে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সংগ্রহ ও বিনিয়োগ করে।
২০২২ সালে গ্লোবাল ফান্ড এইচআইভি, টিবি ও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, কোভিড-১৯ রেসপন্স মেকানিজম (সি১৯আরএম) কার্যক্রমকে সহায়তা করতে এবং যে কোনও মহামারী মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে রেকর্ড ৫.২ বিলিয়ন বিতরণ করেছে।
তারা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে এমন সমাধান খুঁজে বের করতে বিশ্বনেতা, সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ, স্বাস্থ্যকর্মী ও বেসরকারি খাতকে একত্রিত করে এবং তা বিশ্বব্যাপী নিয়ে যায়।
স্টপ টিবি পার্টনারশিপ হল ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস) এর একটি প্রতিষ্ঠান। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এর সেক্রেটারিয়েট অবস্থিত।
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ অংশীদারিত্ব সারা বিশ্বের ১,৬০০টি অংশীদার সংস্থাকে (আন্তর্জাতিক ও প্রযুক্তিগত সংস্থা, সরকারী প্রোগ্রাম, গবেষণা ও অর্থায়ন সংস্থা, ফাউন্ডেশন, এনজিও, সুশীল সমাজ ও সম্প্রদায়ের গোষ্ঠী এবং বেসরকারী খাতসহ) সংঘবদ্ধ করে যক্ষ্মা (টিবি) বিশ্বব্যাপী নির্মূলে নেতৃত্ব দেয়।
স্টপ টিবি পার্টনারশিপ এর অংশীদারদের সাথে নিয়ে একটি সম্মিলিত শক্তি যা বিশ্বব্যাপী টিবির বিরুদ্ধে লড়াই পরিচালনা করছে। সংস্থা এর সচিবালয় এবং সমস্ত অংশীদারদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে টিবি সম্প্রদায়ের জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিচিতি, উচ্চ-স্তরের সম্পৃক্ততা ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।
পার্টনারশিপ টিবি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সন্ধান, চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতি সনাক্ত করে এবং অর্থায়ন করে। এটি সারা বিশ্বজুড়ে নতুন সরঞ্জাম বিতরণসহ যক্ষ্মার ডায়াগনস্টিকস এবং ওষুধ সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পার্টনারশিপের বাজার-গঠন কৌশল দাম কমাতে, পূর্বাভাস উন্নত করতে এবং ওষুধের স্টক-আউট প্রতিরোধে সহায়তা করে।
স্টপ টিবি পার্টনারশিপ সম্প্রদায় ও মূল জনসংখ্যাকে ক্ষমতায়ন করছে, সম্প্রদায় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী এবং টিবি মোকাবেলায় কমিউনিটি নেতৃত্ব উন্নত করছে এবং প্রতিক্রিয়াসমূহ যেন মানুষ-কেন্দ্রিক, অধিকার-ভিত্তিক ও লিঙ্গ রূপান্তরমূলক তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত করছে।
দেশকন্ঠ//