দেশকন্ঠ অনলাইন : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ায় আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সময় বাড়াতে পারবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা না থাকায় গত মঙ্গলবার সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী এখন ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা চলে এসেছে। এই সময়ের মধ্যেই গঠন করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও।
সংবিধানের ১২৩(৩) (খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে আরও ৯০ দিন সংবিধান অনুযায়ী সময় পাবে নির্বাচন কমিশন। তবে ১২৩(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে, কোনো দৈব-দুর্বিপাকের কারণে এই দফার নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান যদি সম্ভব না হয়, তাহলে উক্ত মেয়াদের শেষ দিনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। তবে কোনো কারণে প্রথম তিন মাসে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার চাইলে আরও তিন মাস সময় পাবেন। এছাড়াও আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের সুযোগ আছে। আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন আদালত থেকে নির্দেশনা নিয়ে দুই বছর পার করেছিলাম। তিনি আরও বলেন, তিন মাসের মধ্যে নতুন সরকারের পক্ষে ভোট করা কঠিন। তাদেরকে ভোটের পরিবেশ তৈরি করার জন্য সময় দিতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
সংবিধানের ছয় মাস সময়ের সঙ্গে একমত নন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে এটি বর্তমান বাস্তবতায় কঠিন হবে। এক্ষেত্রে দৈব-দুর্বিপাকের কারণে সংবিধানে যে আরো তিন মাসের কথা বলা হয়েছে সেটি প্রাকৃতিক সংকট তৈরি হলে। বর্তমান যে রাজনৈতিক সংকট, সেটি প্রাকৃতিক নয়। ফলে ঐ বিধানটি প্রযোজ্য হবে না। মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে না পারলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা নিতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশনা দেবেন, সেই অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন।
তিনি বলেন, নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রুত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে যোগ্যদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিতে হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ অবশ্য যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের পক্ষে। তিনি বলেন, নির্বাচন যথা সময়ে না হলে অনির্বাচিত সরকার এসে যায়। আর অনির্বাচিত সরকার কেউ চায় না। তাই ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করে ফেলা উচিত। ভোটারতালিকা করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধানে বিষয়টি না থাকলেও কি হবে। আইনের তো প্রয়োজন এখন। তাই রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতা বলে এটা গঠন করতে পারবেন।
অফিস করছেন না সিইসি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বুধবারও নির্বাচন ভবনে আসেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমানও অফিস করেননি। গত সোমবার শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর মঙ্গলবার সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার, সচিব, অতিরিক্ত সচিব নির্বাচন ভবনে আসেননি। তবে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হামলা আতঙ্কে একবার ভবনের নিচে নেমে আসেন। পরে দুপুর ১টা না হতেই সবাই চলে যান। তবে বুধবার নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর ও রাশেদা সুলতানা অফিস করেছেন। এসেছেন ইসি সচিব শফিউল আজিম ও অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
সিইসির একান্ত সচিব মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, সিইসি সুস্থ আছেন। পুলিশ প্রকেটশন না থাকায় উনি অফিস করেননি। আজ বৃহস্পতিবার অফিস করতে পারেন।
দেশকন্ঠ//